শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

খেলছেন পুতিন!

আপডেট : ০৭ জুলাই ২০২০, ১৩:৩৬

একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে এ পর্যন্ত রাশিয়ার মানুষ একজনকেই তাদের রাষ্ট্রক্ষমতার শীর্ষে দেখেছে। তিনি ভ্লাদিমির পুতিন। ১৯৯৯ সালে তাকে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। তারপর থেকে তিনিই আসলে রাশিয়ার সর্বময় ক্ষমতাধর নেতা। কখনো প্রেসিডেন্ট, কখনো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। ২০০০-২০০৮ পর্বে তিনি ছিলেন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। এরপর ২০০৮-১২ সালে চলে যান প্রধানমন্ত্রী পদে। ২০১২ সালে ফিরে এলেন প্রেসিডেন্ট পদে। প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেননি যে, তিনি আবার নির্বাচনে দাঁড়াতে চান। কিন্তু তিনি প্রার্থী হবেন না, এমন কথাও বলেননি। এ কারণে সমালোচকরা বলছেন, আসলে তিনি আজীবন প্রেসিডেন্ট থাকার ছক কষছেন, অন্তত ২০৩৬ সাল পর্যন্ত।

পুতিনের সবচেয়ে সোচ্চার সমর্থকদের একজন সাবেক নভোচারী এবং এমপি ভ্যালেন্টিনা তেরেশকোভা প্রস্তাব দিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থিতার সীমা তুলে দিতে। যা আসলে পুতিনকে আজীবন প্রেসিডেন্ট পদে থাকার সুযোগ করে দেবে। ‘যদি পুতিন না থাকে, তাহলে রাশিয়াও থাকবে না’—ক্রেমলিনের এক ডেপুটি চিফ অব স্টাফ দেশটির প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে তার মতামত দিয়েছিলেন।

যেভাবে খেলছেন পুতিন

১৯৮০ সালে গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে পবিত্র যোদ্ধাদের জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছিল। এসব অর্থ সেসব গেরিলাদের কাছে গিয়েছিল যারা আফগানিস্তান দখল করা সোভিয়েত বাহিনীর সেনাদের হত্যা করেছিল। তারপর সবকিছু ঠান্ডা হলো। রোনাল্ড রিগ্যান এর সবকিছুর কৃতিত্ব। স্নায়ুযুদ্ধকালে এটাই ছিল শেষ মহাযুদ্ধ।
খেলছেন পুতিন!

রাশিয়ার সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা এখন আফগান তালেবানদের পুরস্কার দিচ্ছে আমেরিকান সৈন্যদের হত্যা করতে। যারা আফগানিস্তান দখল করে আছে। এই নোংরা ব্যবসা হয়তো ভ্লাদিমির পুতিনের মতো রুশ গোয়েন্দা সংস্থার একজন সাবেক কর্মীর জন্য প্রতিশোধ হতে পারে। কিন্তু এটা বড় কৌশলের অংশ যে রাশিয়া এবং এর গোয়েন্দা সংস্থা ১৯৪৫ সাল থেকে বিরতিহীনভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। পুতিন চান যে কোনো উপায়ে যুক্তরাষ্ট্রকে দুর্বল করতে।

পুতিনের লক্ষ্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘ঘৃণ্য অসহায় দানবে’ পরিণত করা। তিনি সেটাই করছেন। তিনি তার কাজটি সঠিক পথেই নিয়ে যাচ্ছেন। সোভিয়েত ইউনিয়ন যেভাবে ভাঙা হয়েছিল পুতিন সেভাবে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি করতে চাইছেন। তিনি সারাবিশ্বে তার কর্তৃত্বপরায়ণ নীতি বাস্তবায়ন করছেন। যুক্তরাষ্ট্রও বাদ যায়নি। তাই তো তিনি ট্রাম্পের মতো ব্যক্তিকে প্রেসিডেন্ট বানাতে সহায়তা করেছেন। যে ট্রাম্পের মার্কিন স্বার্থ তথা আমেরিকাকে তোয়াক্কা করেন না। গুপ্তচরবৃত্তি, হ্যাকিং, ছায়াযুদ্ধ সবকিছুর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে শিক্ষা দিচ্ছেন পুতিন।

সোভিয়েত আমলে যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক যুদ্ধ চালিয়েছিল। গুপ্তচরবৃত্তি থেকে শুরু করে কূটনীতির মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়নকে ভাঙতে সমর্থ হয়েছিল। নিকারাগুয়াতে সোভিয়েত সেনাবাহিনীকে দুর্বল করতে বিরোধী সেনাবাহিনীকে সমর্থন দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এখন তালেবানকে অর্থ দিচ্ছে রাশিয়া যাতে মার্কিন সৈন্যরা দুর্বল হয়। এক রাশিয়ান বিশেষজ্ঞও বলেছিলেন, পুতিনের মিশন হলো অতীতে ফিরে আসা। তিনি সোভিয়েতের পতনকে বিংশ শতাব্দীর বৃহত্তম ‘ভূরাজনৈতিক বিপর্যয়’ বলে উল্লেখ করে তার প্রতিশোধ নিতে চাইছেন। তিনি এবং তার রাজপরিবারের সাবেক কেজিবি কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন যে সোভিয়েত ইউনিয়নের ধ্বংস পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থার কাজ ছিল।