করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হলে আগামী বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতে প্রতিদিন প্রায় তিন লক্ষ মানুষ কোভিড-১৯ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন বলে দাবি জানিয়েছে ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (এমআইটি) এক দল গবেষক।
এমআইটি-র স্লোয়ান স্কুল অফ ম্যানেজমেন্ট ৮৪টি দেশে বিশ্বের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের উপর সমীক্ষা চালিয়ে এমন উদ্বেগজনক বার্তা দিয়েছে। গবেষকদের দাবি, করোনা সংক্রমণে আরও উদ্বেগজনক পরিস্থিতি দেখা দেবে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আমেরিকায়। আগামী ৮ মাসে।
গবেষক দল জানিয়েছেন, কোন কার্যকরী টিকা আবিষ্কার না হলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারতে করোনায় আক্রান্ত হবেন দৈনিক ২ লক্ষ ৮৭ হাজার মানুষ। আর আগামী মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে গোটা বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছবে ২০ থেকে ৬০ কোটির মধ্যে।
তবে ভারতীয় মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাস বলছেন, আমি এমআইটি-র অঙ্ক কষে একটা সংখ্যা বলে দেওয়াকে গুরুত্ব দিতে চাই না। ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকাতে দেশের সরকার প্রয়োজনে আরও কিছু ব্যবস্থা নেবে। ফলে এমআইটি-র হিসাব মিলবে না। আগামীতে কোভিড পরীক্ষাকেন্দ্র অনেক বাড়বে। প্রয়োজনে আরও অনেক কোভিড হাসপাতাল হবে| এই সমীক্ষায় মানুষ অযথা আতঙ্কিত হয়ে পড়বেন।
ভারতীয় গণমাধ্যমে বলা হয়, দেশটিতে এখনকার পরিস্থিতি না বদলালে বিশ্বে করোনা আক্রান্ত দেশগুলির তালিকায় শীর্ষে পৌঁছে যাবে ভারত। পিছনে ফেলে দেবে আমেরিকা, ব্রাজিলকেও। পরিস্থিতিটা সবচেয়ে খারাপ জায়গায় পৌঁছবে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যে।
তবে এমআইটি-র স্লোয়ান স্কুল অফ ম্যানেজমেন্টের গবেষকরা এই সমীক্ষা চালাতে গিয়ে দু’টি বিশেষ মডেল ব্যবহার করেছেন। একটি, ‘এসইআইআর (সাসেপ্টেব্ল, এক্সপোজ্ড, ইনফেকশাস, রিকভার্ড)’। অন্য মডেলটি পুরোপুরি গাণিতিক। কোনও সংক্রামক ব্যাধির সংক্রমণ কতটা হতে পারে, তার আঁচ পেতে যে মডেলটি আকছারই ব্যবহার করে থাকেন এপিডিমিয়োলজিস্টরা।
এমআইটি-র সমীক্ষা জানিয়েছে, টিকা না বেরলে আগামী ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যায় বিশ্বের সব দেশকেই টপকে যাবে ভারত। তারপর থাকবে আমেরিকা। আমেরিকায় করোনায় দৈনিক আক্রান্ত হবেন ৯৫ হাজার মানুষ। দক্ষিণ আফ্রিকায় দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা হবে ২১ হাজার। আর ইরানে ১৭ হাজার এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১৩ হাজার।
গবেষণায় আরও বলা হয়, করোনার চলমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বিশ্বের ৮৪টি দেশে আগামী ফেব্রুয়ারির শেষে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হবে সাড়ে ১৫ কোটি। আর কোভিড পরীক্ষার হার যদি দিনে ০.১ শতাংশ বাড়ে, তা হলে ওই ৮৪টি করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আগামী ৮ মাসে বেড়ে হবে ১৩ কোটি ৭০ লক্ষ।
গবেষকরা বলেছেন, আমাদের হিসাবমতো এ বছরের ১৮ জুন পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৮ কোটি ৮৫ লক্ষ মানুষ। মৃত্যু হয়েছে ৬ লক্ষ মানুষের। যা সংক্রমণের সরকারি হিসাবের চেয়ে ১১.৮ গুণ বেশি। আর মৃতের সংখ্যার সরকারি হিসাবের চেয়ে বেশি ১.৪৮ গুণ।
আরও পড়ুন: রাশিয়ায় করোনা আক্রান্ত ৭ লাখ ছাড়াল
অথচ, জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৮ জুন পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৮২ লক্ষ ৪০ হাজার মানুষ। মৃতের সংখ্যা ৪ লক্ষ ৫৪ হাজার ৬১০।
ইত্তেফাক/আরআই