বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

জন প্রিনজলের যে আবিষ্কারে বেঁচেছে বিশ্বের কোটি জীবন

আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২০, ০৮:৩৯

১৭৪৩ সালে ফরাসিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সেনারা ভয়াবহ এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল। জার্মানির ফ্রাংকফুর্টের কাছের একটি শিবিরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মৃত্যু হয়েছিল হাজারো ব্রিটিশ সেনার। পরিস্থিতির অবনতি হলে চিকিৎসক দলের সঙ্গে সেখানে যান ব্রিটিশ আর্মির একজন ফিজিশিয়ান জন প্রিনজল।

যুদ্ধক্ষেত্রের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ দেখে তিনি হতবাক হয়ে যান। পরবর্তী সময়ে তিনিই পরামর্শ দেন সেই শিবিরের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে জন প্রিনজলের সেই পরামর্শই পরবর্তী সময়ে পরিচ্ছন্ন তত্ত্ব হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে পারলে যে হাজারো রোগবালাই থেকে মুক্তি মিলতে পারে, সেই বার্তাই তিনি দিয়েছিলেন। পরবর্তী বিশ্বে তার দেখানো পথে হেঁটেই বেঁচেছে কোটি জীবন।

ব্রিটিশ শিবিরের মহামারি ঠেকাতে তিনি দ্রুত স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন। শিবিরের অদূরেই তৈরি করা হয় স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিনের ব্যবস্থা। এছাড়া সেনাদের হাত ধোয়ার অভ্যাসও গড়ে তোলেন তিনি। সেখানে কাজ করতে গিয়ে তিনি দেখেন, শুধু অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকার কারণে রোগে আক্রান্ত হয়ে ব্রিটিশ সৈন্যদের এক-চতুর্থাংশ শক্তি খর্ব হয়েছে। তার সেই পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শ সেনা আদেশের মাধ্যমে সবাইকে মানতে বাধ্য করা হয়। সেনা ক্যাম্পের স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ দূর করে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করা, স্বাস্থ্যসম্মতভাবে খাবার রান্না করা ও পরিবেশনের ওপর জোর দেন তিনি। তার যুক্তি ছিল—যদি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হয়, তাহলে তুলনামূলকভাবে কম রোগাক্রান্ত হবে সেনারা। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ও স্যানিটেশনের ওপরও জোর দেন তিনি।

সেনা ক্যাম্পগুলোতে তখন একধরনের গাদাগাদি করে থাকতেন সেনারা। কিন্তু জন প্রিনজল সেখানেও হাত দিলেন। তিনি প্রত্যেক সেনার জন্য কমপক্ষে ৩৬ বর্গফুটের একটি জায়গা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিলেন। তার কথায় সেনাদের বিছানার দূরত্ব বাড়ানো হলো। তার এসব উদ্যোগের ফলও মিলল খুব দ্রুত। পরবর্তী দুই বছরের যুদ্ধের সময়ে রোগে আক্রান্ত হয়ে সেনাদের মৃত্যুর হার অর্ধেকে নেমে গিয়েছিল। তার দেখানো সেই পথেই হেঁটেছিল ব্রিটিশ সেনারা, যা কিনা পরবর্তী সময়ে রোল মডেলে পরিণত হয়।

ক্যাম্পে সেনাদের রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে তার সেই পর্যবেক্ষণ নিয়ে ১৭৫২ সালে তিনি একটি বই প্রকাশ করেন। পরবর্তী দুই যুগ তার সেই বই বিভিন্ন দেশে নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ব্রিটিশ আর্মির পাশাপাশি ফরাসি, জার্মানি ও ইতালিয়ান আর্মিও তার সেই বই অনুসরণ করে ক্যাম্পে সেনাদের জন্য স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার প্রতি মনোযোগী হয়।—ন্যাশনাল জিওগ্রাফি