শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কাল মুখোমুখি হচ্ছেন ট্রাম্প-বাইডেন

আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০১:০৩

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর বাকি মাত্র ৩৫ দিন। রাত পোহালেই দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মধ্যে শুরু হবে বহুল প্রতীক্ষিত বিতর্ক। বর্তমান ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন মুখোমুখি হবেন। দুই প্রার্থীর বিতর্ক দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন দেশটির জনগণ।

দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর আসন্ন বিতর্ককে হঠাত্ করে পেছনে ফেলে দিয়েছে ট্রাম্পের ৭৫০ ডলারের আয়কর প্রদানের ঘটনা। রবিবার এ ঘটনা ছিল সবার মুখে মুখে। অনেকে এ ঘটনাকে নজিরবিহীন উল্লেখ করে বলেছেন, ৫৩ মিলিয়ন ডলার আয় করেও যদি একজন প্রেসিডেন্ট মাত্র ৭৫০ ডলার আয়কর দেন তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ কোন দিকে তা সহজেই অনুমান করা যায়। তবে ট্রাম্পের এই ঘটনা ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে কতটুকু প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে চলছে নানান হিসাবনিকাশ। ট্রাম্পের সমর্থকরা মনে করেন, এ ধরনের ঘটনা কোনো প্রভাব ফেলবে না। আবার বাইডেনের সমর্থকরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে ট্রাম্পের দুঃশাসনের জবাব দেবেন ভোটাররা। তারা গত চার বছরে হারিয়ে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র ও মূল্যবোধকে ফিরিয়ে আনবেন।

বাংলাদেশ সময় আগামীকাল বুধবার সকাল ৭টা এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ৯টায় ওহাইও অঙ্গরাজ্যের ক্লিভল্যান্ডের কেজ ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটিতে ট্রাম্প ও বাইডেনের মধ্যে প্রথম আনুষ্ঠানিক বিতর্ক শুরু হবে। সিএনএন, ফক্স নিউজ, সিবিএস, এবিসি, সি-স্প্যান, এনবিসি ও এমএনবিসি সরাসরি সম্প্রচার করবে এই বিতর্ক অনুষ্ঠানটি। ফক্স নিউজ সানডের উপস্থাপক ক্রিস ওয়ালেস বিতর্ক অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করবেন। দ্বিতীয় বারের মতো কোনো প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করবেন ক্রিস। ২০১৬ সালের নির্বাচনে তিনি ট্রাম্প ও হিলারির মধ্যকার বিতর্ক অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছিলেন।

ট্রাম্প ও বাইডেন বিতর্কে অনুষ্ঠানে সঞ্চালক তার বিচক্ষণতা দিয়ে বিতর্কের বিষয় নির্ধারণ করেছেন। তবে প্রথম দফা বিতর্কে সঞ্চালক ক্রিস ওয়ালেস ট্রাম্প ও বাইডেনের অতীত কর্মকাণ্ড, সুপ্রিম কোর্ট, করোনা মহামারি, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি, বিভিন্ন শহরে সাম্প্রতিক সহিংসতা এবং নির্বাচনের অখণ্ডতাকে বেছে নিয়েছেন। প্রতিটি বিষয়ে আলোচনার জন্য ১৫ মিনিটের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত ১৫ বছরের মধ্যে ১০ বছর মোটেও আয়কর দেননি। বারবার নিজের কোম্পানিগুলোর লোকসান দেখিয়ে বছরের পর বছর আয়কর এড়িয়ে গেছেন। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনকে বরাবরের মতো ‘ভুয়া খবর’ বলে মন্তব্য করেছেন।

২০১৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর নানা কারণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আলোচিত-সমালোচিত; কিন্তু তারপরও তার ভাগ্য সুপ্রসন্ন। একের পর এক ঘটনা তার পক্ষেই যাচ্ছে। সর্বশেষ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি রুথ গিনসবার্গের মৃত্যুর পর তড়িঘড়ি করে তিনি নতুন বিচারপতির নাম ঘোষণা করেছেন। নতুন বিচারপতি হিসেবে অ্যামি কোনি ব্যারেট নির্বাচিত হলে ৯ বিচারপতির মধ্যে ছয় জনই হবেন রিপাবলিকান, যাদের মধ্যে তিন জনই ট্রাম্পের মনোনীত। ফলে ইতিহাসের পাতায় ট্রাম্পের নাম স্মরণীয় হয়ে থাকবে। রিপাবলিকান ছয় জন বিচারপতি থাকায় ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ আর চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ কমে যাবে। ফলে ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্প বিজয়ী হলে তিনি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট। সেক্ষেত্রে আনডকুমেন্টেড অভিবাসীদের জন্য অভিবাসীবান্ধব যুক্তরাষ্ট্র হবে আতঙ্কের এক দেশ।

আগামী ১৫ অক্টোবর দ্বিতীয় বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যের মিয়ামি আদ্রিয়ান পারফরমিং অব আর্টস সেন্টারে। সি-স্প্যানের রাজনৈতিক সম্পাদক (পলিটিক্যাল এডিটর) স্টিভ স্কালি সঞ্চালকের ভূমিকায় থাকবেন। বিতর্কের অন্তত এক সপ্তাহ আগে তিনি বিতর্কের বিষয়বস্তু নির্ধারণ করবেন। টাউন হল মিটিংয়ের মতো করে বিতর্ক অনুষ্ঠানটির আয়োজন চলছে। সাউথ ফ্লোরিডার দোদুল্যমান ভোটাররা এদিন বিতর্কে অংশ নিতে পারেন এবং তাদের প্রশ্ন করারও সুযোগ থাকবে।

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ভোট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এখানকার ভোটাররা যে রায় দেন তার ওপর নির্ভর করে হোয়াইট হাউজের পরবর্তী বাসিন্দা কে হবেন। রাজ্যটিতে দোদুল্যমান ভোটারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ২২ অক্টোবর টেনেসি অঙ্গরাজ্যের ন্যাশভিলের বেলমন্ট ইউনিভার্সিটিতে তৃতীয় ও সর্বশেষ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে সর্বশেষ জনমত জরিপে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে বাইডেন অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন। সারা দেশে এবং দোদুল্যমান ভোটারদের অঙ্গরাজ্যগুলোতে জনসমর্থনে এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন। তবে ব্যবধান ধীরে ধীরে কমিয়ে আনতে সক্ষম হচ্ছেন ট্রাম্প। জনমত জরিপকে নিজের পক্ষে টানতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তিনটি বিতর্ক অনুষ্ঠানকে সুযোগ হিসেবে নিতে চাইবেন।