বাসমতি চাল নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান নতুন করে বিরোধে জড়িয়েছে। স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয় এই চাল চিরবৈরী এই দুটো দেশের বিশেষ কিছু অঞ্চলেই শুধু উৎপন্ন হয়। সম্প্রতি ভারতের পক্ষ থেকে বাসমতি চালকে ‘ভারতীয় পণ্য’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে আবেদন করার পর এই বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। খবর বিবিসির
কী আছে ভারতের আবেদনে?
ভারত সরকার সম্প্রতি এই বাসমতি চালের জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন বা জিআই ট্যাগের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে আবেদন করেছে। ইউনিয়নের অফিশিয়াল জার্নালে ভারতের এই আবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে ১১ সেপ্টেম্বর। আবেদনে বলা হয়েছে বাসমতি চাল ভারতীয় উপমহাদেশের একেবারে স্বতন্ত্র একটি চাল। আকারে এটি লম্বাটে। অনন্য স্বাদ ও সুগন্ধের কারণে সারা বিশ্বে ভারতীয় এই চালের সুখ্যাতি রয়েছে। ভারত বলছে, হিমালয়ের পাদদেশীয় অঞ্চল, বিশেষত ইন্দো-গাঙ্গেয় অঞ্চলে বাসমতি চাল উত্পন্ন হয়। ভারতে কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রধান ড. অশোক কুমার সিং বলেছেন, সবচেয়ে ভালো মানের বাসমতি চাল উত্পাদিত হয় ভারতের যে সাতটি রাজ্যে সেগুলোকে ইতিমধ্যে জাতীয়ভাবে জিআই দেওয়া হয়েছে। জম্মুর তিনটি জেলা, অরুণাচল, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি, উত্তরাখণ্ড ও উত্তরপ্রদেশের কিছু এলাকায় ভালো মানের বাসমতি চাল হয়। এসব রাজ্যকে ইতিমধ্যেই জিআই ট্যাগ দেওয়া হয়েছে। জাতীয়ভাবে এই ট্যাগ দেওয়ার পর সেটা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও নিতে হয়। ভারত এখন সেটাই করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের সরকারি পর্যায়ে এ নিয়ে আগেও আলোচনা হয়েছে। বাসমতি চাল এই দুটো দেশেই উত্পাদিত হয়। দুটো দেশেরই পণ্য এই চাল। তিনি বলেন, ভারত স্বীকৃতি চেয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আবেদন করেছে। পাকিস্তান চাইলেও আবেদন করতে পারে। এখানে তো বিরোধের কিছু নেই।
পাকিস্তান কি ঠেকাতে পারবে?
ভারতের আবেদনের পর পাকিস্তান সরকার তত্পর হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানি পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ সিনেটের একটি প্যানেলও ভারতীয় আবেদন ঠেকানোর ব্যাপারে সক্রিয় হয়েছে। সিনেট কমিটির চেয়ারম্যান মির্জা মোহাম্মদ আফ্রিদি বলেছেন, পাকিস্তানে জিআই আইনটি পাশ হয়েছে এ বছরের মার্চ মাসে। কিন্তু ভারতে বহু আগেই সেটা করা হয়েছে। ভারত এ থেকে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি আশা করেন, সরকারের গৃহীত উদ্যোগে ভারতের আবেদন ব্যর্থ হবে এবং তারাও ‘মেইড ইন পাকিস্তান’ এই ট্যাগ লাগিয়ে বাসমতি চালের রপ্তানি অব্যাহত রাখতে পারবেন।
পাকিস্তানে ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশনের চেয়ারম্যান মুজিব খান বলেছেন, ২০০৬ সালের ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক আইনে বাসমতি চাল ভারত ও পাকিস্তানের যৌথ পণ্য হিসেবে ইতিমধ্যেই উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ভারতীয় আবেদনের বিরোধিতা করতে পাকিস্তানের প্রস্তুতি চলছে এবং ইউরোপীয় কাউন্সিলে হেরে গেলেও তারা ইউরোপীয় কোর্ট অব জাস্টিসের কাছে নিয়ে যাবেন।
ইত্তেফাক/ইউবি