নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। অথচ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডেনাল্ড ট্রাম্প লাখ লাখ ভোটকে অস্বীকার করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে চুরি করার চেষ্টা করছেন। যিনি বিশ্বাস করেন, ২০১৬ সালের নির্বাচনের পর রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে তদন্তে তার বৈধ জয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা হয়েছে, তিনিই এখন বাইডেনের ‘প্রেসিডেন্স’কে ধংস করার চেষ্টা করছেন। তিনি এসব প্রচেষ্টার মাধ্যমে মূলত যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রকেই দুর্বল করছেন। গতকাল শুক্রবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক বিশ্লেষণে এ কথা বলা হয়েছে।
জর্জিয়ায় ভোট পুনঃগণনায় জয়ী হয়েছেন বাইডেন। তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে রিপাবলিকান পার্টি ও ট্রাম্পের প্রচারণা টিমের নির্বাচন সংক্রান্ত মামলা খারিজ করে দিয়েছে আদালত।
এরপরও বৃহস্পতিবার ট্রাম্পের আইনজীবী রুডি জুলিয়ানি ডেমোক্র্যাটরদের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ ছাড়াই ভোট জালিয়াতি ও ‘জাতীয় ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ তুলেছেন। এরই মধ্যে মিশিগান অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান পার্টির নেতাদের সঙ্গে শুক্রবার (যুক্তরাষ্ট্রের সময়) বৈঠকে বসার কথা ট্রাম্পের। তিনি তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন যাতে তারা বাইডেনের বড় জয়কে অগ্রাহ্য করেন এবং তাকে সমর্থন করবে এমন ইলেকটরদের মনোনীত করেন।
সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে ট্রাম্পের আইনজীবী ও সমর্থকদের কৌশল বেপরোয়া এবং অদ্ভূত। তবে ট্রাম্প ইতিমধ্যে জাতির অপূরণীয় ক্ষতি করে ফেলেছেন। বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নির্বাচন বিষয়ক আইনজীবী বেঞ্জামিন গিন্সবার্গ সিএনএনকে বলেন, এটি দেশের এবং আমাদের অবাধ নির্বাচনের ওপর সম্পূর্ণভাবে অযৌক্তিক আঘাত।
হার্ভার্ড ল’ স্কুলের অধ্যাপক লরেন্স ট্রাইব বলেন, শুক্রবার হোয়াইট হাউজে মিশিগানের আইনপ্রণেতাদের বৈঠক হবে বেআইনি। এটি নির্বাচনের ফল চুরির ষড়যন্ত্রমূলক বৈঠক। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ট্রাম্পের টিম দুই ডজনের বেশি মামলায় হেরেছে। সব রাজনৈতিক মতাদর্শের বিচারকগণ আইন মেনে চলবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। শুধু রুডি জুলিয়ানিকে এ বিষয়টি বুঝতে অনাগ্রহী মনে হচ্ছে। তিনি কি করতে চাইছেন সেটা ঈশ্বরই ভালো জানেন।
রিপাবলিকান রাজ্যের আইনপ্রণেতারা ভোটের ফল না মেনে ট্রাম্পের বিশ্বস্ত ইলেকটোরাল কলেজ ভোটারদের মনোনীত করবেন এটা ভাবাও কঠিন। রিপাবলিকান সিনেটর মিট রমনি বলেছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ অগণতান্ত্রিক।
ডানপন্থী গণমাধ্যম এবং ট্রাম্পের বিশ্বস্তরা কোনো ধরনের যৌক্তিক জয় প্রত্যাশা না করেই বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে। যদিও ট্রাম্পের অনমনীয় মনোভাব এবং গণতন্ত্রকে খর্ব করার প্রচেষ্টায় অনেক ক্ষতি ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। রিপাবলিকান নেতারা ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়ে মার্কিন গণতন্ত্রে প্রচন্ড আঘাত করার সুযোগ করে দিচ্ছেন।
চলতি সপ্তাহে মানমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ রিপাবলিকান কোনো প্রমাণ ছাড়াই মনে করেন- বাইডেন জালিয়াতি করে জয়ী হয়েছেন। রাজনৈতিক বিষবাষ্প ছড়ানোর যে চেষ্টায় ট্রাম্প রয়েছেন তা তার হোয়াইট হাউজ ছাড়ার দীর্ঘ সময় পরও স্থায়ী হবে। শেষ পর্যন্ত তিনি আমেরিকার ইতিহাসে একজন দায়িত্বহীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঠাঁই পেতে পারেন।