বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ট্রাম্প কি এখনো ভোটের ফল উলটে দিতে পারেন?

আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২০, ০৭:৪৭

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রবিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন নির্বাচনের ফলাফল তিনি মানেন না। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন কীভাবে জো বাইডেন তার মন্ত্রিসভা গঠনের কাজ শুরু করে দিয়েছেন। জো বাইডেনকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে দুই সপ্তাহ আগে। তাহলে কি ট্রাম্প এখনো নির্বাচনের ফল তিনি উলটে দিতে পারবেন? আসলেই কি তার হাতে অব্যর্থ কোনো কৌশল রয়েছে?

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, অভূতপূর্ব সেই কাণ্ড যে তিনি ঘটাতে পারবেন তার কোনো লক্ষণ এখন পর্যন্ত নেই। বরং তার আইনজীবীরা যেসব অভিযোগ নিয়ে আদালতগুলোতে যাচ্ছেন, সেগুলো হালে তেমন পানি পাচ্ছে না। বিবিসির সংবাদদাতা অ্যান্থনি জুরকার বলছেন, মনে হচ্ছে ট্রাম্প এখন আইনি লড়াইয়ের বদলে দীর্ঘমেয়াদি একটি রাজনৈতিক কৌশলের পথ নিচ্ছেন।

ট্রাম্পের সেসব কৌশল কী? প্রথমত, আইনের পথে বা রাজ্য পর্যায়ে রিপাবলিকান পার্টির নির্বাচিত বা সমর্থক কর্মকর্তাদের দিয়ে ভোট সার্টিফিকেশন বা প্রত্যয়ন যতটা সম্ভব আটকানোর চেষ্টা করবেন। দ্বিতীয়ত রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত যেসব রাজ্যে জো বাইডেন অল্প ভোটে জিতেছেন ভোট জালিয়াতির যুক্তি তুলে ধরে সেসব রাজ্যের আইনসভাগুলোকে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করতে রাজি করাবেন। তৃতীয়ত, এরপর ঐসব রাজ্যের আইনসভা ১৪ ডিসেম্বর তাদের ইলেকটোরাল কলেজ ভোটগুলো জো বাইডেনকে না দিয়ে ট্রাম্পকে দেবে।

চতুর্থত, রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত এসব রাজ্যের আইনসভার মাধ্যমে (যেমন:উইসকনসিন, পেনসিলভানিয়া, মিশিগান) ইলেকটোরাল কলেজ ভোট নিয়ে ট্রাম্প তার বর্তমানের ২৩২টি ইলেকটোরাল ভোটকে টেনে ২৬৯টি ভোটে নিয়ে যাবেন যাতে জো বাইডেনের সঙ্গে তার টাই হয়ে যায়। পঞ্চমত, বাইডেনের ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা নামিয়ে টাই করতে পারলে, প্রতিনিধি পরিষদ অর্থাত্ মার্কিন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ভোট দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করবেন। যদিও প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাটরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, কিন্তু গোপন এবং রহস্যময় কিছু বিধির কারণে ট্রাম্প সেখানে সুবিধা পেয়ে যেতেই পারেন।

এসব ঘটনা ঘটাতে ট্রাম্প যা করছেন:

রাজ্য স্তরে যারা ফলাফলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন অর্থাত্ ফলাফল প্রত্যয়ন করবেন, তাদের ওপর চাপ তৈরি করছেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটাররা আসলে তাদের রাজ্যের জন্য নির্ধারিত সংখ্যক ইলেকটোরাল কলেজ প্রতিনিধি নির্বাচিত করতেই ভোট দেন। এই প্রতিনিধিরা আবার ১৪ ডিসেম্বর ভোট দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেন। রাজ্যস্তরে নির্বাচিত এই প্রতিনিধিরা সাধারণত ভোটারদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটান। যেমন—মিশিগানের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সবারই উচিত ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে জো বাইডেনকে ভোট দেওয়া, কারণ তিনিই সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভোট পেয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখন চাপ দিয়ে এই প্রচলিত রীতি বদলে ফেলার চেষ্টা করছেন।

রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত রাজ্যগুলোতে তিনি যে এমন চাপ তৈরির চেষ্টা করছেন তার প্রথম ইঙ্গিত পাওয়া যায় যখন তিনি মিশিগানের সবচেয়ে বড় শহর ডেট্রয়েটের রিপাবলিকান দলের নির্বাচনি কর্মকর্তাদের টেলিফোন করেন। এক জন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রাজ্য স্তরে নিম্ন পর্যায়ের দুই নির্বাচনি কর্মকর্তাকে ফোন করবেন—এমন নজির বিরল।

ট্রাম্প কি সফল হবেন?

অ্যান্থনি জুরকার মনে করেন যে সাফল্যের সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ হলেও, একবারে অসম্ভব নয়। প্রথম কথা, ট্রাম্পকে কয়েকটি রাজ্যের ফলাফল উলটে দিতে হবে যেসব রাজ্যে বাইডেন কয়েক হাজার থেকে লাখেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন। কিন্তু দেখার বিষয় হলো—ট্রাম্পের আইনজীবীরা যেসব রাজ্য টার্গেট করেছেন তার মধ্যে মিশিগান, উইসকনসিন, পেনসিলভানিয়া এবং নেভাদায় গভর্নররা ডেমোক্র্যাট দলের। তারা চুপ করে বসে থাকবেন না। যেমন মিশিগানের গভর্নর গ্রেচেন হুইটমারের ক্ষমতা রয়েছে রাজ্যের নির্বাচনি বোর্ডে পরিবর্তন এনে এমন কাউকে আনা যিনি ফলাফল প্রত্যয়ন করতে ইচ্ছুক।

তাছাড়া, আইনসভার রিপাবলিকান সদস্যরা ইলেকটোরাল কলেজে ভোট দেওয়ার জন্য যেসব প্রতিনিধি মনোনীত করবেন, গভর্নর তার ইচ্ছামতো বাইডেন সমর্থক প্রতিনিধি মনোনীত করতে পারেন। সে অবস্থায় কারা বৈধ ইলেকটোরাল কলেজ প্রতিনিধি তা নির্ধারণের ভার পড়বে কংগ্রেসের ওপর।

তবে তার মানে এই নয়, জো বাইডেনের সমর্থকরা উদ্বিগ্ন নন। তবে ফলাফল উলটে দিয়ে ট্রাম্পের ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা ততটাই যতটা এক জন ব্যক্তির লটারিতে কোটি ডলার জেতার পরপরই বজ পাতে মৃত্যুর ঘটনার মতো। কিন্তু তারপরও সেই বিরল সম্ভাবনার চিন্তাতেও অনেক ডেমোক্র্যাট সমর্থকের এই ঠান্ডাতেও ঘাম হচ্ছে।

ইত্তেফাক/এসআই