শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

গিলগিটের নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ

আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২০, ২০:০০

গিলগিটের নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুললেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির সদস্য তিলক দেবাশীর। গত ৩০ নভেম্বর ভারতের সংবাদ মাধ্যম "দ্যা ট্রিবিউন"-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তিনি এ অভিযোগ তোলেন।

গিলগিট-বালতিস্তান (জিবি)-র বিধানসভায় ১৫ ই নভেম্বরের নির্বাচনের ফলাফল এই অঞ্চল এবং পাকিস্তানের ভবিষ্যতের জন্য সুদূরপ্রসারী ফলাফল বয়ে আনতে পারে। তবে কারচুপির অভিযোগে এ ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে পিপিপি এবং পিএমএল-এন।

বিলাওয়াল ভুট্টো অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের চেয়ে সপ্তাহখানেক আগে গিলগিটে পৌঁছে এ ক্যাম্পেইন শুরু করেছিলেন। তাঁর প্রচারণাটি অন্যদের থেকে কিছুটা ভিন্ন রকমের ছিল, যা অন্যান্য প্রার্থীদের অনুকরণীয় ছিল।তার এই ভিন্ন মাত্রার  প্রচারণার জন্য ভবিষ্যত রাজনৈতিক জীবনে তার ভাল স্থানে দাঁড়ানো উচিত।

ইমরান খানের জনপ্রিয়তার অভাবের কারণে গিলগিট-বালতিস্তানে পিটিআই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। মরিয়ম নওয়াজ বিলাওয়ালকে অনুসরণ করেছিলেন যার মধ্যে ছিল গিলগিট-বালতিস্তানের  বেশ কয়েকটি সমাবেশ ও প্রচারণার জন্য সেখানে তার সাত দিনের অবস্থান। 
তার বক্তৃতায় তিনি ইমরান খান এবং তাঁর ‘নির্বাচিত ও প্রত্যাক্ষিত’ সরকারকে নিয়ে আলোচনা করেছিলেন।

১লা নভেম্বর গিলগিটে এক সংক্ষিপ্ত সফরে এসেছিলেন ইমরান খান। সেখানে তিনি ঘোষণা করেন যে গিলগিট-বালতিস্তানকে ‘অস্থায়ী’ প্রাদেশিক মর্যাদা দেওয়া হবে,এটি ছিল তার জয়ের জন্য এক প্রকার চালাকি এবং মিথ্যা আশ্বাস।

আরও পড়ুন: মুম্বাই হামলার ১২ বছর পরও পাকিস্তানের ধরাছোঁয়ার বাহিরে ১৯ জঙ্গি
 
তবে, পিটিআইয়ের প্রচারণা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল কাশ্মীর বিষয়ক ফেডারেল মন্ত্রী আলী আমিন গন্ডাপুরের অশ্লীল ও যৌনতাবাদী মন্তব্যের মাধ্যমে। তিনি একটি সমাবেশে মরিয়মকে উল্লেখ করে বলেন যে, মরিয়ম কে সুন্দর দেখানোর কারণ তিনি লক্ষ লক্ষ করদাতার অর্থ তার ফেস সার্জারিতে ব্যয় করেছেন এবং জনগণের টাকা ব্যক্তিগত কাজে ব্যয় করেছেন। অনুরূপ ভাবে তিনি ব্যঙ্গাত্মক করে বিলওয়াল ভুট্টোকে ‘মানুষ হওয়ার’ জন্য অনুরোধ করেন।

এদিকে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন)এর ১০ জন নেতাকে পিছিয়ে ফেলে তাদের নির্বাচনে জয়ের সম্ভাবনা অনেকটাই বাড়িয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই,(পিটিআই) একক বৃহত্তম দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে, ২৪ জনের মধ্যে নয়টি আসনে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তারা।

স্বতন্ত্ররা ছয়টি আসন, পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) তিনটি আসন, পিএমএল-এন এবং অন্যান্যরা একটি করে আসন জিতেছে। পরে পিটিআই এর এক বিজয়ী প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে একটি আসনে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছিল। পাঁচজন স্বতন্ত্র দলে যোগদানের পর পিটিআই সরকার গঠন করবে। তবে, পিটিআই নিজে থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি যা থেকে প্রমাণ হয় যে গিলগিট-বালতিস্তানে ইমরান খান অখ্যাত। আসলে, পিএমএল-এন টার্নকোটের অনুপস্থিতিতে পিটিআই তৃতীয় অবস্থানে চলে আসতে পারত।

কারচুপির অভিযোগের গিলগিট-বালতিস্তান নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছিল। ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন নেটওয়ার্ক (এফএফএন) এর তথ্যমতে ভোটকেন্দ্র গড়ে গড়ে তিনটি অবৈধতা বা অনিয়মের কথা জানানো হয়েছিল। প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুসারে, অনিয়মের মধ্যে রয়েছে ভোটের গোপনীয়তা লঙ্ঘন, ভোটারদের পক্ষ থেকে অন্যদের দ্বারা ব্যালট লাগানো এবং নিবন্ধিত ভোটারদের ভোটদানে বাঁধা প্রদান। 

পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশন এবং গিলগিট সাংবাদিক ইউনিয়ন নিশ্চিত করেছে এমন অনেকগুলি অনিয়মের কথা উঠে এসেছে। ভোট কেন্দ্রে অতিরিক্ত এবং জাল ব্যালট পেপার দেয়া হয়েছিল এবং বেশ কয়েকটি ভোটার কেন্দ্রে মহিলাদের ভোটদান থেকে বিরত রাখা হয়েছিল। অনেক ক্ষেত্রে ভোট পর্যবেক্ষকদের গণনা শুরুর আগেই ভোটকেন্দ্র ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল। 

পিপিপি এবং পিএমএল-এন উভয়ই এ ভোটের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছিল, এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করা নিয়ে  বিলাওয়ালের একটি নতুন স্লোগান গিলগিট-বালতিস্তানে বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে তা হচ্ছে, ‘ভোট দা ডাকা নামঞ্জুর’। মরিয়ম এক টুইট বার্তায় বলেন যে,পিটিআই'র পূর্ণ রাষ্ট্র ক্ষমতা, সরকারী প্রতিষ্ঠান, সরকারী কলা কুশলীদের মাধ্যমে কারচুপি করেও সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি যা তাদের জন্য 'লজ্জাজনক পরাজয়'।

আরও পড়ুন: আজারবাইজানে পরমাণু বোমা হামলা চালাতে আহ্বান

নির্বাচনী জালিয়াতির কারণে গিলগিট-বালতিস্তান অঞ্চলে একের পর এক প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বিশেষত গিলগিট ও চিলাসে সুরক্ষা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর সহায়তা চাইতে বাধ্য করেছে।

গিলগিট-বালতিস্তানে এবং তথাকথিত আজাদ জম্মু কাশ্মীর নির্বাচনের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হ'ল সাধারণ ভাবে ইসলামাবাদে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরাই এই অঞলে জয় পায়। আগের দুটি নির্বাচনে, ২০০৯ সালে পিপিপি এবং ২০১৫ সালে পিএমএল-এন তাদের কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকাকালীন সময় তারা জয়ী হয়েছিল।

পিটিআই এবং বিরোধী জোট পাকিস্তান গণতান্ত্রিক আন্দোলন (পিডিএম) এর মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের পটভূমির বিরুদ্ধে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এদিকে পিটিআই দাবি করেছে যে জরিপের ফলাফল বিরোধীদল গুলোর মানসিকতা ভেঙে দিয়েছে; পিপিপি এবং পিএমএল-এন এ ফলাফল কারচুপির ব্যাপারে অভিযোগ তুলেছে।

এদিকে সেনাবাহিনী এটি নিশ্চিত করেছে যে পিটিআই সরকার গঠনের জন্য ও সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে দীর্ঘমেয়াদে রাখার জন্য জন্য কৌশলগতভাবে পিডিএমকে গোলাবারুদ সরবারহ করেছিল।

ইত্তেফাক/এএইচপি