শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

খাশোগি হত্যা নিয়ে মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন

যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি সম্পর্ক কতটা খারাপ হবে?

আপডেট : ০১ মার্চ ২০২১, ০৪:০০

যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরব। মধ্যপ্রাচ্যে বিশ্বের বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারক দেশ সৌদি আরব প্রধান মিত্র আমেরিকার। আর মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা তথা ইরানসহ বিরোধীদের মোকাবিলায় পশ্চিমা বিশ্বে সৌদি আরবের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে এখন নতুন উপায় বা বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে নির্বাসিত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি। 

২০১৮ সালে তাকে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে খুন করা হয়। শুক্রবার প্রকাশিত মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে হত্যাকাণ্ডে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে দায়ী করা হয়েছে। তিনি সৌদি আরবের কার্যত সরকার প্রধান এবং এমবিএস নামেই খ্যাত।

মানবাধিকার ও ইয়েমেন যুদ্ধকে গুরুত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশের স্বল্প সময়ের মধ্যেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন ৭৬ সৌদি নাগরিকের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেন যাকে ‘খাশোগি ব্যান’ বলা হয়। ব্লিনকেন জানিয়েছেন, যাদের উদ্দেশ করে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে তারা নিজ দেশের বাইরেও ভিন্নমত দমনে ভয়াবহ সব কার্যকলাপের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। যেসব অপরাধী কোনো বিদেশি সরকারের হয়ে ভিন্নমতের মানুষদের লক্ষ্যবস্তু বানায় তাদের আমেরিকান মাটিতে পা রাখতে দেওয়া হবে না বলে তিনি সতর্ক করেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগও যুবরাজের আশেপাশের কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর মধ্যে রয়েছে তার অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী, সাবেক উপ-গোয়েন্দা প্রধান আহমাদ আসিরি, সেই সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সুরক্ষায় নিয়োজিত বাহিনী, যারা হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

২০১৮ সালে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ধারণা করেছিল যে, যুবরাজ এই হত্যার আদেশ দিয়েছিলেন। তবে তিনি যে জড়িত ছিলেন সে অভিযোগ মার্কিন কর্মকর্তারা এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে বলেননি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সৌদি আরবের মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের বিষয়ে তার পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে দৃঢ় অবস্থান নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার বাদশাহ সালমানের সঙ্গে ফোনালাপ করেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্র যে সার্বজনীন মানবাধিকার এবং আইনের শাসনকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে বাইডেন সেই বিষয়টি ফোনালাপে নিশ্চিত করেছেন বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ। সৌদি আরবের সঙ্গে অস্ত্র চুক্তি বাতিল করার বিষয়েও বাইডেন প্রশাসন চিন্তাভাবনা করছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কারণ, এই চুক্তি মানবাধিকারকে উদ্বেগের মুখে ফেলেছে এবং ইয়েমেন যুদ্ধকে ভয়াবহ রূপ দিচ্ছে। ভবিষ্যতে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রয় কেবল ‘প্রতিরক্ষামূলক’ অস্ত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার বিষয়টিও বিবেচনা করছে বর্তমান প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

যুবরাজকে পছন্দ নয় যুক্তরাষ্ট্রের!

যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দের তালিকায় নেই সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফই ছিলেন দেশটির পছন্দের তালিকায়। ২০১৭ সালে এমবিএস ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত নায়েফই ছিলেন সৌদি আরবের মূল ক্ষমতাধর। দুর্নীতি এবং যুবরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ‘এমবিএন’ নামে খ্যাত প্রিন্স নায়েফকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজপরিবারের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্র সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নায়েফ আল-কায়েদা দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি সাবেক গোয়েন্দা প্রধান সাদ আল-জাবরির মাধ্যমে মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। সাদ আল-জাবরি বর্তমানে কানাডায় নির্বাসিত। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, তাকে মারতে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান একটি হিট স্কোয়াড পাঠিয়েছিলেন।

তার পরও যুবরাজ ছাড়া উপায় নেই!

খাশোগিকে হত্যায় মোহাম্মদ বিন সালমান সাধারণ মানুষের রোষানলে পড়লেও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থেকে পার পেয়ে গেছেন। যদিও তাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে মার্কিন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি ও জাতিসংঘের বিশেষ রিপোর্টার অ্যাগনেস ক্যালামার্ডসহ বহু অ্যাকটিভিস্ট আহ্বান জানিয়েছিলেন। এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন খুব সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিচ্ছেন। তিনি তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সৌদি আরবকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী করতে চান, তেমনি আবার সৌদি আরবের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চান। কারণ মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে সৌদি আরব বেশ বড় ভূমিকায় আছে যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, ইয়েমেনের যুদ্ধ শেষ করা, ইরানকে পুনরায় পরমাণু চুক্তিতে ফিরিয়ে আনা, ইসলামপন্থি চরমপন্থিদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং আরব-ইসরাইলি সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়া।

তবে প্রেসিডেন্ট স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি তার পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো যুবরাজ মোহাম্মদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করবেন না। এর পরিবর্তে বাইডেন তার বাবা বাদশাহ সালমানের সঙ্গে কাজ করছেন। কিন্তু একেবারে না করেও উপায় নেই। কারণ বাদশাহ সালমানের বয়স ৮৫ বছর। তার দ্বারা সরকার পরিচলনা করাটা খুবই কঠিন। সৌদির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক যত খারাপ হবে তত তা ইরানের জন্য উপহার হিসেবে বিবেচিত হবে।

ইত্তেফাক/এএইচপি