বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

করোনা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে কানাডা

আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২১, ১০:৩৬

কোভিড-১৯ সমস্যা এবং সমাধান নিয়ে কানাডার কেন্দ্রীয় সরকার, প্রাদেশিক সরকার, পৌর প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে। গত সোয়া বছর ধরে লড়াই করছে করোনার বিরুদ্ধে। ফলে বিশ্বের মতো ভয়ংকর সংকটের মুখোমুখি কানাডা থমকে আছে! কুইবেকে এখনো চলছে সান্ধ্য আইন, অন্টারিওতে চলছে তৃতীয়বারের মতো লকডাউন। এক বছরের বেশি সময় ধরে আমেরিকা-কানাডা সীমান্ত বন্ধ। বন্ধ রয়েছে প্রায় সকল ফ্লাইট।

কানাডায় করোনা সংক্রমণের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তরুণদের সতর্ক করে বলেছেন, ‘নতুন এ ভ্যারিয়েন্ট কানাডাকে আবৃত করে ফেলতে যাচ্ছে। এটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং আক্রান্ত তরুণদের আইসিইউর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’

প্রিমিয়ার ডাগ ফোর্ড কোভিডে মৃত্যুবরণকারী মানুষের সংখ্যাটা উল্লেখ করতে গিয়ে চোখ মুছেন এবং ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমাও চান।

কানাডার প্রধান জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তেরেসা ট্যাম বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হওয়া বি.১.১.৭ ভ্যারিয়েন্টটি এই মুহূর্তে আধিপত্য বিস্তার করে আছে। গত সপ্তাহে কানাডাজুড়ে ২৫ হাজার মানুষ নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছেন। এর ৯০ শতাংশই আক্রান্ত হয়েছেন বি.১.১.৭ ভ্যারিয়েয়েন্টে।’

ডা. তেরেসা ট্যাম আরও বলেন, ‘সপ্তাহে হাসপাতালে ভর্তি রোগী ৭ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে আইসিইউতে রোগী ভর্তি বৃদ্ধি পেয়েছে ২৩ শতাংশ।’

আগের চেয়ে বেশি সংখ্যক ৬৩% কানাডিয়ান কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্রহণে আগ্রহী হয়ে উঠলেও লেজার অ্যান্ড দ্য অ্যাসোসিয়েশন ফর কানাডিয়ান স্টাডিজের এক সমীক্ষা থেকে জানান যায়, ১২ শতাংশ কানাডিয়ান ভ্যাকসিন নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী নন। তবু এখন পর্যন্ত কানাডায় ৭৩ লাখ বা মোট জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশকে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনা হয়েছে। 

কানাডায় একদিকে চলছে ভ্যাকসিন, অন্যদিকে বাড়ছে কোভিড

ছবি: ইত্তেফাক

করোনার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় টিকার মজুদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে কানাডা। এজন্য ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি শেষে কয়েক কোটি ডোজ সুরক্ষিত রাখার কথা জানিয়েছেন জাস্টিন ট্রুডো। প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে ৩০ শতাংশ এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ নিয়েছেন কানাডায়। জুনের মধ্যে শতভাগ টিকা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

মার্কিন টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজারের সঙ্গে ৩৫ লাখ ডোজের চুক্তি হয়েছে, যা ২০২২ সালের জন্য কাজে দেবে। আর ২০২৩ সালের জন্য ৩০ মিলিয়ন ডোজ। এছাড়া ২০২৪ সালের জন্য চুক্তি ৬০ মিলিয়ন ডোজের।

এদিকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং তার স্ত্রী সোফি গ্রেগোয়ার গতকাল ২৪ এপ্রিল অটোয়ার রেক্সডেলের একটি ফার্মেসিতে গিয়ে কোভিড-১৯’এর প্রতিষেধক ভ্যাকসিন নেন। তারা প্রথম ডোজ হিসেবে অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা গ্রহণ করলেন।

ট্রুডো করোনার প্রথম ডোজ নেওয়ার পর বলেন, ‘আমি খুব উচ্ছ্বসিত। তিনি ফেসবুকে দেওয়া এক লাইভে আরও বলনে, ‘আজ সোফি এবং আমি আমাদের ভ্যাকসিন পেয়ে খুশি! আপনাদের পালা এলে আপনারাও টিকা নিবেন, সেই জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’

অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন নিয়ে সামান্য বিতর্ক থাকায় কানাডায় শীর্ষ স্থানীয় প্রায় সকল রাজনৈতিক নেতারা এই ডোজ গ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে অন্টারিও প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ডগ ফোর্ড, টরন্টো মেয়র জন টরি, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্যাটি হাজদু, এনডিপি নেতা জগমিত সিং এবং আরও অনেকেই।

কানাডায় প্রথম করোনা হানা দিয়েছিলো প্রধানমন্ত্রীর ঘরেই। গত বছর লন্ডন থেকে ফিরেই সোফি গ্রেগোয়ার করোনায় আক্রান্ত হন। দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় হলেও তিনি ভ্যাকসিন নেননি। জাস্টিন মিডিয়াকে জানিয়েছিলেন, যখন তার পালা আসবে, তখনই নিয়ম মোতাবেক ভ্যাকসিন নিবেন। 

ইত্তেফাক/এএএম