বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

জাল করোনা রিপোর্ট নিয়ে কুম্ভমেলায় অংশ নেন পূন্যার্থীরা

আপডেট : ১৬ জুন ২০২১, ০৩:৩৯

ভারতে মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মারাত্মক আকার ধারণ করে। এর মাঝেই কুম্ভমেলার আয়োজন করে দেশটি। যা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এবং উত্তরাখণ্ড সরকারের সমালোচনা করেছিলেন অনেকেই। চিকিত্সকদের একাংশ অভিযোগ করেছিলেন, কুম্ভমেলার ভিড় থেকে উত্তর ভারতে করোনা ছড়িয়ে পড়ছে। মামলা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল।

সম্প্রতি কুম্ভমেলার করোনা টেস্ট নিয়ে আরো ভয়াবহ তথ্য সামনে এসেছে। অভিযোগ, প্রায় ১ লাখ টেস্টের রিপোর্ট জাল। অর্থাৎ, টেস্ট না করেই নেগেটিভ রিপোর্ট দেওয়া হয়েছিল। খবর প্রকাশ করেছে ডয়চে ভেলে।

সম্প্রতি পাঞ্জাবের এক ব্যক্তির মোবাইল ফোনে একটি করোনা টেস্টের রিপোর্ট আসে। রিপোর্টটি খুলে তিনি দেখেন, হরিদ্বার থেকে রিপোর্টটি এসেছে। যেখানে কুম্ভমেলার আয়োজন হয়েছিল। পাঞ্জাবের ঐ ব্যক্তি কুম্ভে যাননি। করোনার টেস্টও করাননি। পরে জাল রিপোর্টটি নিয়ে তিনি মেডিকেল কাউন্সিলে অভিযোগ করেন। এরপরই শুরু হয় তদন্ত এবং উঠে এসেছে ভয়াবহ তথ্য। প্রায় ১ লাখ রিপোর্ট এভাবেই জাল করা হয়েছিল।

হরিদ্বারে কুম্ভমেলায় লাখ লাখ মানুষ সমবেত হয়েছিলেন। এক মাস ধরে চলে হিন্দু ধর্মীয় এই মেলা। এর মধ্যে দুইবার শাহি স্নান হয়েছে। একটি হিসেব বলছে, প্রতিটি স্নানে একসঙ্গে ২৮ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছেন। করোনা দ্রুত ছড়িয়েছে কুম্ভমেলায়। তবুও মানুষের আসার শেষ নেই।

কুম্ভমেলা নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ার পরে আদালত বলেছিলেন, প্রতিদিন অন্তত ৪০ হাজার করোনা টেস্ট করতে হবে। সেই মোতাবেক ২২টি এজেন্সিকে টেস্টের দায়িত্ব দেয় মেলা কমিটি। তেমনই একটি এজেন্সি পাঞ্জাবের ঐ ভদ্রলোককে রিপোর্ট পাঠিয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ১ লাখ জাল করোনা রিপোর্ট তারা তৈরি করেছিল। একই ফোন নম্বরে, একই ঠিকানায় হাজার হাজার মানুষের নাম এন্ট্রি করা হয়েছিল। সেই জাল রিপোর্ট দেখিয়ে লাখ লাখ মানুষ কুম্ভে শাহী স্নানে অংশ নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ঐ এজেন্সির স্যাম্পল কালেক্টর হিসেবে যাদের নাম নথিভুক্ত আছে, তারাও কেউ কুম্ভে যায়নি। অধিকাংশই রাজস্থানের ছাত্র।

তেমনই এক ছাত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, তিনি কোনো দিন কুম্ভে যাননি। একটি ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ে ভর্তি হয়েছেন রাজস্থানে। সেখানে তার কাছে কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছিল। সেই তথ্যই ঐ এজেন্সি ব্যবহার করেছে।

গোটা বিষয়টির পেছনে বিশাল প্রতারণা চক্র কাজ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্য এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু হয়েছে। উত্তরাখণ্ড সরকার বিশেষ তদন্তের ব্যবস্থা করেছে। প্রশ্ন উঠছে, সরকারের নাকের ডগায় এত বড় ঘটনা ঘটলো কীভাবে? সরকারকে অন্ধকারে রেখে এমন ঘটনা ঘটা কঠিন বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। বস্তুত, কুম্ভ নিয়ে যখন বিতর্ক শুরু হয়েছিল, উত্তরাখণ্ড সরকার তখন স্পষ্টই বলেছিল, কোনোভাবেই মেলা বন্ধ করা হবে না। কেন্দ্রীয় সরকারও একই কথা বলেছিল। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি এই কলেঙ্কারির শিকড় অনেক গভীরে?

ইত্তেফাক/টিএ