ব্রিটিশ এমপি স্যার ডেভিড অ্যামেস তার সংসদীয় এলাকায় ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন। লন্ডন থেকে পূর্ব দিকে লে-অন-সি এলাকায় গির্জায় তার ওপর হামলা হয়। হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুলিশ ২৫ বছর বয়সি এক যুবককে আটক করেছে।
অ্যামেস ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টির হয়ে গত চার দশক ধরে এমপির দায়িত্ব পালন করছিলেন। হামলার সময় এমপি তার অফিসে বৈঠক করেছিলেন। অফিসে ভোটাররা এমপির সঙ্গে দেখা করতে পারেন এবং বিভিন্ন ইস্যুতে তারা আলোচনা করতে পারেন। ব্রিটেনে গত পাঁচ বছরে তিনিসহ দুজন এমপি হামলায় নিহত হলেন। এর আগে ২০১৬ সালে লেবার পার্টির এমপি জো কক্স হামলায় নিহত হন।
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন থেকে শুরু করে মুসলিম নেতারাও বলছেন, অ্যামেস ছিলেন একজন ভদ্র মানুষ। কিন্তু তাকেই দুর্বৃত্ত কয়েকবার ছুরিকাঘাত করে হত্যা করল। তার এই হত্যার মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বে রাজনীতিক তথা এমপিদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে এই হামলায় বড় উদ্বেগের হলো এটা ব্রিটেনে আরো হিংসা বাড়িয়ে দেয় কি না।
আলী হারবি আলী নামের ২৫ বছর বয়সি যুবককে সন্ত্রাসবাদবিরোধী আইনে আটক করেছে স্থানীয় পুলিশ। লন্ডনের পুলিশ জানায়, সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০০-এর অধীনে সোমালিয়ান বংশোদ্ভূত এই মুসলিমকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অ্যামেস প্রতি শুক্রবারই তার সংসদীয় এলাকার মানুষদের সঙ্গে বৈঠক করতেন।
ব্রিটিশ সংসদ সদস্য ডেভিড অ্যামেস। ছবি: বিবিসি
ওই এলাকায় মৌলবাদবিরোধী একটা প্রচারণাও চলত যেখানে কখনোই অংশ নেয়নি মুসলিম নামধারী যুবক আলী হারবির। কেবল ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনই নন, লন্ডনের মেয়র সাদিক খান (মুসলিম) এবং স্থানীয় মুসলিম নেতারা পর্যন্ত বলছেন, অ্যামেস ছিলেন একজন সত্যিকারের মানুষ। ১৯৮৩ সাল থেকে এমপির দায়িত্ব পালন করা অ্যামেসকে একজন ভালো মানুষ বলে আখ্যায়িত করেছেন স্থানীয় মুসলিম নেতা মোহাম্মদ শামসুদ্দিন।
তিনি বলেছেন, ইংলিশ এই ভদ্রলোক আমাদের এলাকাসহ পুরো সাউথেন্ড জুড়ে ভদ্র মানুষ হিসেবে পরিচিত। এসেক্স জামে মসজিদের যুগ্ম সম্পাদক রুহুল শামসুদ্দিনও বলছেন, সেই ছোটবেলা থেকেই অ্যামেসকে চিনি এবং তিনি এলাকায় একজন দয়ালু মানুষ হিসেবে পরিচিত। তার জীবন এভাবে সংক্ষিপ্ত করে দেওয়াটা সত্যিই দুঃখজনক এবং তাকে সারা জীবনই মুসলিম সম্প্রদায় মিস করবে।
স্যার ডেভিড অ্যামেস কেবল মানুষের উপকারই করতেন না, পার্লামেন্টে পশুদের রক্ষায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন বলে জানিয়েছেন ডগস ট্রাস্টের ক্লেয়ার কাল্ডার। তিনি অ্যামেসের হূদয়বান মানুষ হওয়ার কথা বলেছেন। অ্যামেস পশুদের হয়তো মানুষ করেছেন, কিন্তু আলী হারবি আলী নামের নরপশুদের মানুষ করতে পারেননি। তাইতো তার মতো পশুর হাতেই জীবন দিতে হয়েছে অ্যামেসকে।
কিন্তু আলী হারবি নামের এই মুসলিমের নৃশংস হত্যাকাণ্ড সাধারণ মুসলিমদের কতটুকু সহায়তা করেছে তা নিয়ে সারা জীবনই প্রশ্ন থাকবে। এখন মুসলিমরাই তাকে ঘৃণা করছেন এবং তার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
যুক্তরাজ্যে এমপি খুনের ঘটনার সঙ্গে জঙ্গিবাদের সম্পর্ক রয়েছে। পুলিশের এমন সন্দেহের খবরে দেশটির মুসলিম কমিউনিটিতে নতুন করে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মুসলিম জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতার কথা জানায় পুলিশ। ব্রিটিশ সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দেশটিতে জঙ্গি হামলার শঙ্কার কথা জানিয়েছিল। এর মধ্যেই একজন এমপি হত্যার ঘটনায় মুসলিম জঙ্গিবাদের সংশ্লিষ্টতার খবরকে উদ্বেগজনক হিসেবে দেখছেন মুসলিম কমিউনিটির নেতারা।
যুক্তরাজ্যে মুসলিমদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ৩০ লাখের বেশি মুসলিমের মধ্যে অন্তত ৭ লাখই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। তারা এখন আতঙ্কে। তাইতো লন্ডনের মেয়র সাদিক খান বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ড ভয় আর বিদ্বেষের আগুনে ঘি ঢালার সামিল। তিনি অ্যামেসকে একজন মেধাবী, দয়ালু এবং মানুষের জন্য নিজের জীবনকে উত্সর্গ করা একজন মানুষ বলে আখ্যায়িত করেন। এই হামলাকে তিনি ব্রিটেনের গণতন্ত্রের ওপর আঘাত বলে আখ্যায়িত করেছেন।
ইত্তেফাক/টিআর