শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

২৭ বছর পর জেগে উঠলেন নারী

আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ১৯:৩৩

মুনিরা আবদুল্লাহ। ৩২ বছর বয়সে সড়ক দুর্ঘটনায় পড়েন। মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাত পান। তারপর চলে যান কোমায়। বছরের পর বছর অচেতন থাকেন।

শেষপর্যন্ত ২৭ বছর পর জেগে উঠেছেন এই নারী। অনেকটা অলৌকিকভাবে জেগেই উঠেই ছেলে ওমরের নাম ধরে ডাকেন। ঘটনাটি ঘটেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে।

বিবিসির খবরে বলা হয়, ১৯৯১ সালে মুনিরা আবদুল্লাহ ছেলেকে স্কুল থেকে আনতে যান। ওই সময় ছেলে ওমর ওবাইরের বয়স ছিল ৪ বছর। গাড়িতে করে বাসায় ফিরছিলেন তারা। এসময় একটি বাসের সঙ্গে তাদের গাড়ির সংঘর্ষ হয়। ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কোনমতে বাঁচাতে পেরেছিলেন মুনিরা।

কিন্তু তিনি ব্রেইনে গুরুতর আঘাত পান। চলে যান কোমায়। অবশেষে গত বছর জার্মানির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জ্ঞান ফেরে মুনিরার।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্থানীয় পত্রিকা ‘দ্য ন্যাশনাল’কে গত সোমবার ২৭ বছর আগের সেই ঘটনার কথা বলেছেন মুনিরার ছেলে ওমর।

তিনি বলেন, ‘আমি কখনো আশা ছাড়িনি। আমার সব সময় মনে হতো, একদিন না একদিন আমার মা জেগে উঠবেন। আমি মানুষের উদ্দেশে বলতে চাই, যাদের আপনারা ভালোবাসেন, তাদের ব্যাপারে কখনো আশা ছাড়বেন না।’


সড়ক দুর্ঘটনায় ব্রেনে গুরুতর আঘাত পান মুনিরা আবদুল্লাহ। ছবি: বিবিসি

ওমর আরও বলেন, ‘ঘটনার দিন আমি মায়ের সঙ্গে পেছনের আসনে বসেছিলাম। বাসের ধাক্কা লাগবে বিষয়টি মনে করে আমাকে জড়িয়ে ধরেন মা। এভাবে আমাকে বাঁচিয়েছিলেন।’

দুর্ঘটনার পর আরব আমিরাতের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয় মুনিরা আবদুল্লাহকে। এরপর তাকে লন্ডনে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি কোনো সাড়া দিচ্ছিলেন না। কিন্তু ব্যথা অনুভব করতেন।

অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় কয়েক বছর পর লন্ডন থেকে আবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল আইন হাসপাতালে নেওয়া হয় মুনিরাকে। এখানে তাকে টিউব দিয়ে খাওয়ানো হয়। আর চিকিৎসা চলতে থাকে।

২০১৭ সালে আবুধাবির যুবরাজ জার্মানিতে মুনিরা আবদুল্লাহার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। সেখানে তার বেশ কয়েকটি অস্ত্রোপচার হয়। হাত-পা স্বাভাবিক করতে এই অস্ত্রোপচার করা হয়। একদিন ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঝগড়া চলছিল ওমরের। ঝগড়া শুনেই হঠাৎ জেগে ওঠেন তার মা।

আরও পড়ুন: দুদক আসছে, তালা ঝুলিয়ে পালালেন স্টোর কিপার

ওমর বলেন, ‘মায়ের রুমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমার ঝগড়া হয়। অজ্ঞান অবস্থায় মায়ের মনে হয়েছিল আমি বিপদে আছি। এটি তার ভেতর আলোড়ন তৈরি করে। ওই সময় মা অদ্ভুত এক ধরনের আওয়াজ করছিলেন। তখন আমি চিকিৎসকদের বলছিলাম, মাকে পরীক্ষা করুন। তারা জানালেন, সব স্বাভাবিক আছে।’

ওমর বলেন, ‘ওই ঘটনার তিন দিন পর আমার ঘুম ভাঙে। শুনতে পাই কেউ আমার নাম ধরে ডাকছে। আমি দেখতে পাই মা আমাকে ডাকছেন। তখন আমি খুশিতে উড়ছিলাম। বহু বছর ধরে আমি এই সময়ের জন্য অপেক্ষায় ছিলাম।’

এর পরই জার্মানি থেকে মাকে নিয়ে দুবাই ফেরেন ওমর। দুবাইতেও তার চিকিৎসা চলে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, এমন ঘটনা খু্ব কমই ঘটে। এটা অলৌকিকের মত। 

ইত্তেফাক/জেডএইচ