শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মানব জিন প্রকল্পের পথ প্রদর্শকের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ ছেলেকে সুস্থ করা

আপডেট : ১৪ মে ২০১৯, ০২:৫৩

রন ডেভিস, মানব জিন প্রকল্পের অন্যতম পথপ্রদর্শক। ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের মানব জিন প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল ১৯৯০ সালে, যা শেষ হয়েছে ২০০৩ সালে। রন ডেভিস তার জিন প্রকল্পে মানব দেহের ব্লুপ্রিন্ট তুলে ধরেছেন যা কিনা চিকিত্সাশাস্ত্রের জন্য এক ‘যাদুবিদ্যা’র মতো। অথচ সেই ডেভিসের ছেলে হুইটনি (৩৫) জটিল রোগ মায়ালজিক ইনসেফালোমিলেটিস (এমই) বা ক্রোনিক ফ্যাটিগ সিন্ড্রোমে (সিএফএস) আক্রান্ত হয়ে নিশ্চল পড়ে আছেন বিছানায়। হুইটনির মতো সারাবিশ্বে হাজারো মানুষ এই জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে থাকলেও এই রোগের এখনো কোনো ওষুধ আবিষ্কার করতে পারেনি বিজ্ঞানীরা। রন ডেভিসের জন্য এখন তাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে নিজের ছেলেকে সুস্থ করে তোলার মতো ওষুধ আবিষ্কার করা।

গত পাঁচ বছর ধরে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় নিশ্চল হয়ে পড়ে আছেন হুইটনি। আর এই পাঁচ বছর ধরেই প্রতিদিন অন্তত কয়েকবার রন ডেভিস মাথা নিচু করে বসে থাকেন ছেলের রুমের বাইরে। প্রতিবারই তিনি ভাবেন এই বুঝি তার ছেলে ভেতর থেকে সাড়া দিয়ে তাকে বাবা বলে ডাকবে।

বিছানায় নিশ্চল পড়ে থাকতে থাকতে তার শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম অনেকটাই স্থিমিত হয়ে পড়েছে। কথাও বন্ধ হয়ে গেছে পুরোপুরি। একটি নলের সাহায্যে সরাসরি পাকস্থলিতে তরল খাবার দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে তাকে। শরীর শুকিয়ে গেছে। অসুস্থ ছেলের পাশেই বেশিরভাগ সময় কাটাতে হয় তাকে এবং তার স্ত্রীকে। ছেলের জন্য তারা কখনো একসাথে বাইরে যেতে পারেন না। যে কোনো একজনকে সারাক্ষণই থাকতে হয় বাড়িতে।

গত রবিবার ছিল আন্তর্জাতিক এমই/সিএফএস সচেতনতা দিবস। এখন পর্যন্ত এই রোগের কোনো চিকিত্সা বা ওষুধ আবিষ্কার করতে পারেনি বিজ্ঞানীরা। আন্তর্জাতিক এমই/সিএফএস দিবসেই রন ডেভিস এমই/সিএফএস এই রোগে আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সবার প্রতি আহবান জানিয়েছেন। রন ডেভিসের মতো একজন প্রথিতযশা বিজ্ঞানীর এমন ঘোষণার পর আশা করা যায় যে এই রোগের একটি কার্যকর ওষুধ আবিষ্কারে এগিয়ে আসবেন চিকিত্সাবিজ্ঞানীরা। একই সঙ্গে যেসব চিকিত্সক এই রোগের আক্রান্তদের চিকিত্সা করছেন তাদের প্রতিও আন্তরিক হওয়ার আহবান জানিয়েছেন রন ডেভিস। ডেভিস বিশ্বাস করেন, জিন প্রকল্পের সাহায্যেই হয়তো একদিন জয় করা যাবে এমই/সিএফএস-এর মতো জটিল রোগ।

ডেভিস গত একযুগ ধরে বায়ো-কেমেস্ট্রি অ্যান্ড জেনেটিক বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন। তার স্ত্রী ডেভিস ড্যাফো একজন শিশু মনোবিজ্ঞানী। কিন্তু ছেলের অসুস্থতার জন্য তাদের দুইজনকেই নিজেদের কর্মক্ষেত্রে সময় কমিয়ে দিতে হয়। রন ডেভিসের ছেলে হুইটনি পেশায় একজন ফটোগ্রাফার। ২০০৯ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামা শপথ নেয়ার ঘটনাও ক্যামেরাবন্দি করেছেন হুইটনি। অসুস্থ হওয়ার প্রথমদিকে ঘন ঘন ক্লান্ত হয়ে পড়তেন। সারাদিন একটানা কাজ করতে পারতেন না তিনি। একসময় গিয়ে বিছানায় পড়ে যান। এখন তো তার শরীরের বেশিরভাগ অঙ্গই সাড়া দেয় না। এমন কি কথাও বলতে পারেন না।

রন ডেভিসের বন্ধুদের মধ্যে পল বার্গ যিনি ১৯৮০ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন। আরেক বন্ধু মারিও আর ক্যাপেসি ২০০৭ সালে চিকিত্সাবিজ্ঞানে নোবেল জিতেছেন। তাদের মতো রন ডেভিসের অনেক বন্ধুই জানেন না এই রোগ সম্পর্কে। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় উঠে এসেছে দেশটির প্রতি ৩০০ জনের একজন এই রোগে আক্রান্ত। এখন পর্যন্ত এই রোগের কোনো কারণও খুঁজে বের করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। মার্কিন চিকিত্সাবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ধমনীতে রক্ত প্রবাহে বাধার সৃষ্টি হওয়া, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে পড়া এবং স্নায়ুকেন্দ্রিক সমস্যা থেকেই হয়তো এই রোগের সূত্রপাত হয়। রন ডেভিস মনে করেন, এই রোগের ওষুধ আবিষ্কারের জন্য এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে বিশ্ববাসীকে। -সিএনএন