শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বুথ ফেরত জরিপের ফল

ফের অনায়াসে ক্ষমতায় আসছে বিজেপি জোট!

আপডেট : ২০ মে ২০১৯, ০৪:৫০

আবারো ভারতে ক্ষমতায় আসছে ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট! গতকাল রবিবার শেষ ধাপের ভোটগ্রহণের পর বিভিন্ন গণমাধ্যম ও প্রতিষ্ঠানের করা বুথ ফেরত জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। বলা হচ্ছে, এনডিএ জোট তিনশোর মতো আসনে জয় পেতে পারে। আর সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন থেকে অনেক দূরেই থাকছে বিরোধীদল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট। এদিকে জরিপের ফল বলছে, পশ্চিমবঙ্গে আসন কমছে তৃণমূল কংগ্রেসের। তারা পেতে পারে ২৮ থেকে ৩০টি আসন। এই রাজ্যে দুই অঙ্কের আসনে জয় পেতে পারে বিজেপি। আর কংগ্রেস পেতে পারে দুটি আসন। তবে বুথ ফেরত জরিপের ফল যে সব সময় ঠিক হয় তা নয়। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে বুথ ফেরত জরিপের ফল আর প্রকৃত ভোটের ফলের মধ্যে বিস্তর ফারাকও দেখা গেছে।

ভারতের নির্বাচন কমিশনের বিধি অনুযায়ী ভোটগ্রহণ শেষ না হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো প্রতিষ্ঠান বুথ ফেরত জরিপের ফল প্রকাশ করতে পারে না। এজন্য গতকাল রবিবার শেষ ধাপের ভোটগ্রহণ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। কিন্তু মাত্র দুই দিন আগেই ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের বুথ ফেরত জরিপের ফল ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। যাতে দেখা যায়, গতবারের থেকে অনেক আসন কমছে ক্ষমতাসীন এনডিএ জোটের। যদিও ইন্ডিয়া টুডের দাবি, এটি জরিপের ডামি।

কিন্তু গতকাল শেষ ধাপের ভোটগ্রহণের পর একযোগে প্রকাশ হতে থাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বুথ ফেরত জরিপের ফল। আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশ করা হয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বুথ ফেরত জরিপের ফল। সেখানে টাইমস নাও-ভিএআর এর বুথ ফেরত জরিপের ফলে বলা হয়েছে, এনডিএ জোট পাচ্ছে ৩০৬ আসন, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ পাচ্ছে ১৩২টি এবং অন্যান্যরা পাচ্ছে ১০৪টি আসন। রিপাবলিক-সি ভোটার জরিপের ফল বলছে, এনডিএ পাচ্ছে ২৮৭, ইউপিএ ১২৮টি এবং অন্যান্যরা পাচ্ছে ১২৭টি আসন। নিউজ নেশনের জরিপে বলা হয়েছে, এনডিএ জোট পাচ্ছে ২৮০ থেকে ২৯০ আসন, ইউপিএ পাচ্ছে ১১৮ থেকে ১২৬টি, অন্যান্যরা পাচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৮টি আসন। এবিপি-নিয়েলসন এর জরিপের তথ্য অনুযায়ী এনডিএ পাচ্ছে ২৬৭টি। তাদের তথ্য অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাচ্ছে না বিজেপি জোট। অন্যদিকে ইউপিএ জোট পাচ্ছে ১২৭টি আর অন্যান্যরা পাচ্ছে ১৪৮টি আসন।

এসব প্রতিষ্ঠানের জরিপে দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে আসন কমছে তৃণমূলের। এবিপি-নিয়েলসন বলছে, তৃণমূল পাবে ২৪টি, বিজেপি পাবে ১৬টি আর কংগ্রেস পাবে দুটি আসন। আর এবারের নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে আসনশূন্য থাকবে বামরা। টাইমস নাও-ভিএআর এর জরিপে বলা হচ্ছে, তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে পেতে পারে ২৮টি, বিজেপি ১১টি, কংগ্রেস দুটি আর বামফ্রন্ট ১টি আসন। রিপাবলিক-সি ভোটার জরিপের ফল অনুযায়ী তৃণমূল পাবে ২৯টি, বিজেপি ১১টি আর কংগ্রেস ২টি আসন। গত নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস ৩৬টি আসন পেয়েছিল। আর বিজেপি পেয়েছিল মাত্র দুটি আসন।

অন্যদিকে ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশের ৮০টি আসনের মধ্যে ৪৪টি আসন পেতে পারে ক্ষমতাসীন বিজেপি। আর সেখানে মায়াবতী ও অখিলেশ যাদবের মহাজোট পেতে পারে ৩৪ আসন। কংগ্রেস গতবারের মতো ২ আসনেই জয় পেতে পারে। তবে কিছু জরিপ বলছে, ৪০টির মতো আসন পেতে পারে মায়াবতী ও অখিলেশ যাদবের জোট। গত ডিসেম্বরের মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ে বিধানসভা নির্বাচনে জিতেছিল কংগ্রেস। তবে বুথফেরত জরিপগুলো বলছে, ওই তিন রাজ্যে এবারো বেশি আসন পাবে বিজেপি। দিল্লিতে সাতটির মধ্যে ছয়টিতেই জয় পেতে পারে বিজেপি।

প্রায় সবকটি বুথ জরিপে বিজেপির জয়ের আভাস মিললেও, গত নির্বাচনের তুলনায় বিজেপির আসন ও ভোট কমছে সেটা স্পষ্ট। গত নির্বাচনে বিজেপি-জোট ৩৩৬টি আসন পেয়েছিল আর একক দল হিসেবে পেয়েছিল ২৮২ আসন। এবার দলটির আসন কমে ২১৮ তে নামতে পারে। আবার সি-ভোটার আইএএনএস জরিপ বলছে বিজেপি পেতে পারে ২৩৬টি আসন। গত নির্বাচনে বিজেপি জোট ৩৯ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। নিয়েলসনের হিসাব বলছে, এবার এই জোটের ভোট কমে ৩১ শতাংশ হবে। কংগ্রেসের ভোট ২২ শতাংশ হতে পারে। গত নির্বাচনে বিজেপি ও কংগ্রেস জোটের বাইরে বাকি দলগুলো ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এবার এসব দল ৪৭ শতাংশ ভোট পেতে পারে।

বুথ ফেরত জরিপ হলো ভোট দিয়ে বের হওয়া ভোটারদের ওপর জরিপ। ক্ষমতায় কারা আসছে তার একটি ধারণা এই জরিপে পাওয়া যায়। জরিপের ফলে বিজেপি এগিয়ে থাকলেও বিশ্লেষকরা বলছেন, জরিপের ফলই সঠিক হবে এমন কোনো কথা নেই। সাম্প্রতিককালে দেখা গেছে, জরিপের সঙ্গে প্রকৃত ভোটের ফলের বিস্তর ফারাক রয়েছে। যেমন- ২০০৪ সালে বুথ ফেরত জরিপগুলো ভুলভাবেই বলেছিলো যে, বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ ক্ষমতায় আসছে। আবার ২০১৪ সালের নির্বাচনে জরিপগুলো বলছিলো বিজেপি ২৩৬টি আসন পাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিজেপি জিতেছিল ২৮২ আসনে।

এবারের সাত ধাপের ভোটগ্রহণে ৫৪৩ আসনের মধ্যে ৫৪২ আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছে। তামিল নাড়ুর ভেলোরে নির্বাচন স্থগিত রেখেছে নির্বাচন কমিশন। সরকার গড়তে কোনো দল বা জোটকে ২৭২ আসনে জিততে হবে।

বিরোধীদের জোট গড়ার তত্পরতা অব্যাহত

বুথ ফেরত জরিপের ফল আসার আগে থেকেই বিরোধী ঐক্য তৈরির প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল। গতকালও সেই তত্পরতা দেখা গেছে। গতকালও নয়াদিল্লিতে একের পর এক বৈঠক করেছেন তেলুগু দেশম নেতা এবং অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইড়ু। প্রথমে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, পরে সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। গতকাল বিকেলেই ইউপিএ চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করার কথা ছিলো তার। এদিকে আজ সোমবার সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করবেন বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতী। বিশ্লেষকরা বলছেন, সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও একক বৃহত্তম দল হিসেবে বিজেপি যাতে কোনো অতিরিক্ত সুবিধা না পায়, তা নিশ্চিত করতেই বিরোধী দলগুলি এক হতে চাইছে।