ইরান পরমাণু চুক্তির যতটুকু লঙ্ঘন করেছে, তা তেমন গুরুতর নয় এবং সেটি সংশোধনযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মঘেরিনি। চুক্তি ব্যর্থ হলে মধ্যপ্রাচ্য অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। এএফপি, বিবিসি ও রয়টার্স।
চলমান উত্তেজনা নিরসনে সোমবার ব্রাসেলসে বৈঠকে বসেন চুক্তি স্বাক্ষরকারী ইইউ দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। ঐ বৈঠকে, ইরানের সঙ্গে সংকট সহজ করে পরমাণু চুক্তি টিকিয়ে রাখার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। সেখানে মঘেরিনি বলেন, ‘ইরানকে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি তারা যাতে তাদের পদক্ষেপ সংশোধন করে আবার আগের মতোই চুক্তির শর্ত অনুসরণ করে।’ তিনি আরো বলেন, ‘বাস্তবিকপক্ষে এ পর্যন্ত যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তার সবগুলোই সংশোধনযোগ্য।’ মঘেরিনি বলেন, চুক্তিতে স্বাক্ষরকারীদের কেউই মনে করে না যে, চুক্তির যে অংশ লঙ্ঘিত হয়েছে তা গুরুতর। আর তাই তারা এ নিয়ে নতুন করে কোনো বিতর্কে যাবে না, যাতে আরো বেশি নিষেধাজ্ঞার মুখে না পড়ে দেশটি (ইরান)।
বৈঠকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেন, ইরানের পরমাণু চুক্তিকে বাঁচানোর পথ খুব বেশি নেই। এ চুক্তি সঠিক পথে না হাঁটলে পুরো অঞ্চলের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে। তেহরান পরমাণু অস্ত্র অর্জনে সক্ষম হলে পুরো মধ্যপ্রাচ্য একটি ‘বিষাক্ত এবং বিপজ্জনক পরিস্থিতির’ মুখে পড়বে। তখন এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলোও পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করবে। তিনি বলেন, পরমাণু অস্ত্র উন্নয়নে যে ধরনের অগ্রগতির প্রয়োজন হয়, তা থেকে ইরান এখনো এক বছর দূরে আছে। এখন চুক্তি রক্ষায় আলোচনার দরজা খোলা রাখতে হবে। যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সের প্রচেষ্টায় চুক্তি টিকিয়ে রাখার ওপরও জোর দেন হান্ট।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা কমাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। সার্বিয়া সফররত ফরাসি প্রেসিডেন্ট সোমবার রাতে বেলগ্রেডে দেশটির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন। ম্যাক্রোঁ বলেন, ট্রাম্প, পুতিন ও রুহানির সঙ্গে তার আসন্ন সংলাপ মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কমাতে সহায়তা করবে বলে তিনি আশা করছেন।
২০১৫ সালের যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন ও জার্মানির সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি না করার প্রতিশ্রুতি দেয় ইরান। গত বছরের মে মাসে এ চুক্তি থেকে একতরফাভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই বছরের নভেম্বর থেকে তেহরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করে ওয়াশিংটন। এরকম অবস্থায় ইউরোপীয় দেশগুলো চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বললেও কার্যত তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ করে ইরান।
ইউরোপীয় দেশগুলোর ব্যর্থতার কথা জানিয়ে এ বছরের মে মাসে চুক্তি থেকে আংশিক সরে আসার ঘোষণা দেয় তেহরান। চলতি মাসের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা নিশ্চিত করে, ইউরেনিয়াম মজুদের ক্ষেত্রে চুক্তিতে থাকা নির্ধারিত মাত্রা অতিক্রম করেছে ইরান।
ইত্তেফাক/এসআর