শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

চীনের হস্তক্ষেপে বাড়ছে রক্তপাতের আশঙ্কা

আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০১৯, ০১:১৩

গণতন্ত্রের দাবিতে হংকংয়ের বিক্ষোভ দুই মাস পার হলো। বিতর্কিত প্রত্যর্পণ আইনের বিরোধিতায় এই বিক্ষোভ ক্রমশই সহিংস গণতন্ত্র আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। গতকাল শনিবারও হংকংয়ের তিনটি স্থানে লাখো মানুষ বিক্ষোভ করেছে। সহিংসতা আর হরতাল জনজীবনে বড় ধরনের ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। চীন সরকার বিক্ষোভকারীদের কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছে। এমনকি বিক্ষোভ দমনে চীন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানা গেছে। চীন যদি সত্যি সত্যি এই বিক্ষোভে প্রত্যক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করে তবে ব্যাপক রক্তপাত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। অনেকের মনেই প্রশ্ন, চীনের এক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করার আইনগত কতটা অধিকার আছে?

ট্রাম্পের আহ্বান: এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং চাইলে মাত্র ১৫ মিনিটেই এ বিক্ষোভের সমাধান করতে পারেন। হংকং বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে চীন সেনা নামাতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ প্রকাশের পরদিন হংকং সীমান্তসংলগ্ন শেনজেন স্টেডিয়ামে বেইজিং শত শত আধা সামরিক পুলিশ (পিএপি) মোতায়েন করে। এই খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিক্ষোভ দমনে কোনো রকম সহিংসতা দেখতে চান না বলে উল্লেখ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি ‘মানবিকভাবে এ সমস্যার সমাধান’ দেখতে আগ্রহী বলে জানান।

হংকং বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে চীনা প্রেসিডেন্টকে সাক্ষাতের আহ্বান জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, আমি উদ্বিগ্ন। আমি চাই না চীন কঠোরভাবে বিক্ষোভ দমন করুক। আমি বাজি ধরে বলতে পারি জিনপিং যদি বিক্ষোভকারীদের একদল প্রতিনিধির সঙ্গে বসেন তাহলে কয়েক মিনিটেই এর সমাধান সম্ভব।

চীন সৈন্য পাঠাতে পারে?:মূল আইন খুবই পরিষ্কার। ১৯৯৭ সালে ব্রিটেন হংকং-এর প্রশাসন চীনের কাছে ফিরিয়ে দেবার পর হংকংয়ের একটা ছোটখাট নতুন সংবিধান তৈরি করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী একমাত্র হংকং-এ সার্বিকভাবে জরুরি অবস্থা জারি হলে অথবা যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি হলে হংকং সরকারের অনুরোধে চীন সেনা পাঠাতে পারে। এছাড়া জন শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে এবং দুর্যোগের সময় ত্রাণকাজে দেশটির সেনা সেখানে যেতে পারে। তারপরেও চীনা সেনাদের হংকংয়ে প্রবেশের সম্ভাবনা নিয়ে গুঞ্জনে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

হংকং-এ পিএলএর (পিপিলস লিবারেশন আর্মি) প্রায় ৫ হাজার সৈন্য রয়েছে। হংকং-এ চীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইভান চয় বলেন, তারা রাস্তায় নামলে তার পরিণতি সুদুর-প্রসারি হতে পারে। তিনি বলেন, হংকংয়ের দায়িত্ব হস্তান্তরের পর থেকে যে ‘এক দেশ- দুই পদ্ধতি’ মডেলে হংকং এর শাসন ব্যবস্থা চলে এসেছে, তার ওপর আস্থা পুরো ভেঙে যাবে। সে বিশ্বাস আর পুনরুদ্ধার করা যাবে না। ম্যাককোয়ারি ইউনিভার্সিটির গবেষক অ্যাডাম নাই বলেন, এটা মূলত ‘চীনা সার্বভৌমত্বের একটা প্রতীকি উপস্থিতি’।

হংকংয়ে বিতর্কিত প্রত্যর্পণ আইনের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ চলছে গত ৯ই জুন থেকে। ইভান চয় বলেন, বেইজিং ক্রমাগত হংকং-এর মানুষকে চেষ্টা করছে মনে করিয়ে দিতে চেষ্টা করছে, যে সামরিক শক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনা আছে। তারা এমন পদক্ষেপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিতে চায় না। তাদের আশা, এটা একধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি করবে।

চীনের হংকং বিষয়ক সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারনী দপ্তর এতদিন বলছিল যে, হংকং পুলিশ বিক্ষোভ দমন করতে পারবে। এ ব্যাপারে তাদের পূর্ণ আস্থা আছে। তবে চীনা মুখপাত্র ইয়াং গুয়াং হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন, যারা আগুন নিয়ে খেলছে, সেই আগুনেই তারা ধ্বংস হবে! বিক্ষোভকারীরা যেন মনে না করে যে সংযমের অর্থ দুর্বলতা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সামরিক হস্তক্ষেপ চীনা সরকারের জন্য মস্ত বড় একটা রাজনৈতিক ঝুঁকি তৈরি করবে। যে কোনরকম সামরিক হস্তক্ষেপ পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে। আরও কঠোর প্রতিরোধ গড়ে উঠতে পারে।

রাজনৈতিকভাবে হস্তক্ষেপ:হংকং-এর রাজনৈতিক ব্যবস্থা পুরোপুরি গণতান্ত্রিক নয়। বিক্ষোভকারীদের বিরোধিতার পেছনে সেটা একটা কারণ। বিক্ষোভকারীরা গণতান্ত্রিক সংস্কারের আহ্বান জানাচ্ছে। অন্যদিকে, চীন হংকং-এর রাজনীতিতে বেশ কিছু হস্তক্ষেপ করেছে। তার থেকেই সর্বসামপ্রতিক এই বিক্ষোভের জন্ম।

আরও পড়ুনঃ ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে বোনকে হত্যা করে সৎভাই

হংকং-এ বিক্ষোভের সূত্রপাত হয় প্রত্যর্পণ আইন বিষয়ক বিল নিয়ে। সমালোচকদের আশঙ্কা, রাজনৈতিক আন্দোলনকারীদের চীনের মূল ভূখন্ডে নিয়ে যাবার জন্য চীন এই আইন ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়েছিল। সেখানে তাদের দন্ড দেওয়া প্রায় নিশ্চিত হয়ে যেত। বিক্ষোভকারীরা ভয় পাচ্ছেন তারা নিজেরা ধরা না পড়লেও চীনের মূল ভূখন্ডে তাদের পরিবারের সদস্যরা দমনপীড়নের শিকার হতে পারেন।

ইত্তেফাক/টিএস