মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পুড়ছে পৃথিবীর ফুসফুস, উদ্বিগ্ন বিশ্ব

আপডেট : ২৩ আগস্ট ২০১৯, ২১:০২

আমাজন বনে প্রায়ই আগুনের ঘটনা ঘটে। তবে এবার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। পুড়ে যাচ্ছে পৃথিবীর ফুসফুস খ্যাত আমাজনের বড় একটি অংশ। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মহল।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ জানান, আসন্ন জি-৭ সম্মেলনে আমাজনে অগ্নিকাণ্ড নিয়ে কথা বলা হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের ঘর জ্বলছে। বারবার আমাজনে আগুন লাগার ব্যাপারটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা।’

এ মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক সুবিধা লাভের জন্য আমাজনের অগ্নিকাণ্ডকে ব্যবহার করছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট।’

তবে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট স্বীকার করে বলেছেন, ‘কৃষকেরা অবৈধভাবে আগুন দিতে পারে। কিন্তু এটি নিয়ে বহির্বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোর নাক গলানোর প্রয়োজন নেই।’

এদিকে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল আমাজন বনে আগুনের ঘটনাকে ‘জরুরি অবস্থা’ বলে মন্তব্য করেছেন।

পুড়ছে আমাজনের বনাঞ্চল। ছবি: ভক্স

বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় কমিশনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ব্রাজিলের বনাঞ্চলে যে আগুন জ্বলছে তা গভীর উদ্বেগজনক। বনাঞ্চল আমাদের ফুসফুস এবং জীবন রক্ষার ব্যবস্থা করে।

গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেছেন, ‘বৈশ্বিক জলবায়ু সঙ্কটের মধ্যে আমরা অক্সিজেন ও জীববৈচিত্রের অন্যতম প্রধান উৎসের এমন ক্ষতি মেনে নিতে পারি না। আমাজনকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।’

পরিবেশবাদী দলগুলো দাবি করছে, আমাজন বনে যে আগুন লেগেছে তা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের নীতির কারণে হয়েছে। কিন্তু তিনি তা স্বীকার করতে চাচ্ছেন না। প্রেসিডেন্ট বন উজাড়ে কাঠুরে ও কৃষকদের উৎসাহিত করছেন বলে আগুনের ঘটনা ঘটছে।


আমাজন পুড়ে যাওয়ার ভয়াবহ অবস্থা। উপর থেকে তোলা ছবি। 

হলিউড তারকা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও তার অনুসারীদের পরিবেশের প্রতি আরো বেশি যত্নশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘পৃথিবীর ফুসফুস জ্বলছে।’

ফুটবল তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো তার টুইটারে লিখেন, ‘আমাজন বন পৃথিবীতে ২০ শতাংশের বেশি অক্সিজেন সরবরাহ করে। কিন্তু এটা গত তিন সপ্তাহ ধরে জ্বলছে। আমাদের দায়িত্ব এটাকে সাহায্য করা। বনাঞ্চলকে রক্ষা করা।’

বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী ম্যাডোনা লিখেন, ‘আমাজন জ্বলছে। এটা প্রতিনিয়তই জ্বলছে। ব্রাজিলের পক্ষে এটি ধ্বংসাত্মক। সেখানে বসবাসকারী আদিবাসী, উদ্ভিদ এবং প্রাণী যা জৈব-বৈচিত্র্যময় হিসেবে গড়ে তুলেছে। সবার জন্য এটা ধ্বংসাত্মক।’

আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরা বলছেন, ‘বন ধোঁয়ায় ঢাকা পড়েছে। আকাশ অন্ধকার হয়ে গেছে। ধোঁয়ার ঝাঁজে আমাদের চোখে লাগছে।  অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি বন্যপ্রাণী এখন লোকালয়ে দেখা যাচ্ছে।’


আগুনের থেকেও বিজ্ঞানীদের বেশি ভাবিয়ে তুলছে ধোঁয়া। ছবি: ভক্স

ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্স (ইনপে) বলছে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত আমাজনের ব্রাজিল অংশে ৭২ হাজার ৮৪৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এই বছরের প্রথম আট মাসে আগের বছরের তুলনায় ৮৫ শতাংশ বেশি অগ্নিকাণ্ড হয়েছে। বেশিরভাগই হয়েছে আমাজন অঞ্চলে। আগুনে ‍সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উত্তরের অঙ্গরাজ্য রনডোনিয়া। 

ইনপের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালে আমাজনের সাত হাজার ৫০০ কিলোমিটার বনাঞ্চল হারিয়ে গেছে, যা ২০১৭ সালের তুলনায় ৬৫ শতাংশ বেশি।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসার আগে আমাজন অঞ্চলকে চাষ ও খনিজ উত্তোলনের কাজে ব্যবহারের কথা বলেছিলেন  ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো।  এ উদ্যোগের ফলে বন উজাড় হয়ে যেতে পারে, এমন উদ্বেগকে তিনি উপেক্ষা করেছেন।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, ‘এই আগুনকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা ব্রাজিলের একার নেই। তাকে অযথাই দোষ দেওয়া হচ্ছে। এই সময়ে আগুন জ্বালিয়ে চাষের জমি তৈরি করেন কৃষকরা। বহুকাল ধরেই এটা হয়ে আসছে।’

খবর: বিবিসি/ দ্যা গার্ডিয়ান

ইত্তেফাক/জায়েদ