শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

চবির ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে এসে আটক ১

আপডেট : ১১ মার্চ ২০২২, ২০:৫৯

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ভর্তি পরীক্ষায় ডি ইউনিটে অন্যের বদলে পরীক্ষা দিতে এসে আটক হয়েছেন মাসুদ সরকার নামের এক যুবক। তিনি রংপুরের কারমাইকেল কলেজের ইতিহাস বিভাগে স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী। রবিবার (৩১) অক্টোবর বিকেলে লাইব্রেরি ভবনে পরীক্ষা চলাকালীন এডমিট কার্ডের ছবির সাথে পরীক্ষার্থীর ছবি না মেলায় সন্দেহ হয় দায়িত্বরত শিক্ষকদের। এসময় তারা প্রক্টরিয়াল বডিকে জানালে তারা তাকে শনাক্ত করেন। 

পরে সহকারী প্রক্টর এসএএম জিয়াউল ইসলাম ও মুহাম্মদ ইয়াকুব এসে মাসুদ সরকারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রক্সির বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি। আটক মাসুদ গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের দহবন্ধ ইউনিয়নের আব্দুল কাদেরের ছেলে।

পরবর্তীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দিতে চাইলেও তাকে কোনো চক্রের সদস্য সন্দেহ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আরও জিজ্ঞাসাবাদ করে। তখন বেরিয়ে আসে গোপন সব তথ্য। গোপন তথ্যের কিছু প্রমাণ এসেছে দৈনিক ইত্তেফাকের হাতে। সেসব বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মাসুদরা একটা সংঘবদ্ধ চক্র। যারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকার বিনিময়ে অন্যের হয়ে পরীক্ষা দেন।

মাসুদ তাদের কাউকে চিনেন না দাবি করলেও এসবের মূল হোতা হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের ওমর ফারুক নামের এক সাবেক শিক্ষার্থীর কথা বলেন। সেখানে খোঁজ নিয়ে ওমর ফারুক নামের এক সাবেক শিক্ষার্থী আছেন বলে নিশ্চিত করেছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মইন উদ্দিন। ওমর ফারুকের বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দহবন্দ গ্রামে। বাবা মো. দেলোয়ার৷ 

মাসুদের ভাষ্যমতে, 'ফারুক ভাইয়ের সাথে আমার কথা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার সপ্তাহ খানেক আগে। তখন ফারুক ভাই বলেন, এভাবে পরীক্ষা দাও। টাকা পাবা। তারপর আমি রাজি হয়ে যাই। অন্য যাদের সাথে কাজ করতাম তাদের সাথে কথা হতো শুধু। কারো সাথে দেখা হয়নি কখনও।' তবে ওমর ফারুকের নাম্বারে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

এদিকে প্রশাসনের হেফাজতে থাকাবস্থায় মেসেঞ্জারে এবং মোবাইল ফোনে বেশ কিছু কল আসে মাসুদের কাছে। সেসবের মধ্যে রাসেল সরকার নামের এক জনের সাথে কথা হয় তার। পরে ওই ব্যক্তির সাথে মাসুদের কোনো এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার মেয়ের এডমিট কার্ড আদান প্রধানের প্রমাণ মিলেছে। রাসেল সরকার রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। রাসেলকে তার বন্ধু দাবি করে তার বাড়িও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় বলে জানান মাসুদ।

আটক মাসুদ এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, তিনি এ বছরের  গুচ্ছ পরীক্ষার বি ইউনিটে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে দিনাজপুরের হাজি দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ইউনিটে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে অন্যের বদলে পরীক্ষা দিয়েছেন৷ প্রত্যেকটা থেকে অগ্রিম নিয়েছেন ৩ হাজার টাকা করে। সেগুলোতে সফলভাবে উতরেও গেছেন। এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি ইউনিটে তিনি ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী জুলকারনাইনের বদলে পরীক্ষায় বসেছিলেন তিনি। সে পরীক্ষার বিনিময়ে চুক্তি হয়েছিল ১০ হাজার টাকার। জুলকারনাইন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের এ আর এম শরিফুল ইসলাম জর্জের ছেলে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া দৈনিক ইত্তেফাককে বলেন, প্রক্সি দেওয়ার সময় আমরা একজনকে আটক করেছি। ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দিলেও আমরা আটক রেখেছি। তার সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। আপাতত আমাদের হেফাজতেই আছে সে। আমরা এটা নিয়ে মামলা দায়ের করার কথা চিন্তা করছি।