বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

স্টাইল ক্রাফটের শ্রমিকরা কবে পাবেন বকেয়া বেতন

আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২১, ২১:৪৫
প্রায় ৮০ কোটি বকেয়া বেতন আদায়ের লক্ষ্যে রাজধানীর শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন গাজীপুরের স্টাইল ক্রাফট গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা। গত কোরবানির ঈদের ঠিক আগেরদিন কারখানা বন্ধ করে ‘লাপাত্তা’ হয়েছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)  শামস আলমাস সুখ।
 
শ্রমিকরা বলছেন, ৪ হাজার ৩০০ শ্রমিক-কর্মচারী পদভেদে ৪ থেকে ১১ মাসের বেতন পাননি। এরসঙ্গে রয়েছে দুটি ঈদ বোনাসও। সোমবার (১ নভেম্বর) সপ্তম দিনে গড়িয়েছে তাদের অবস্থান কর্মসূচি।
 
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শ্রম প্রতিমন্ত্রী, শ্রমিক প্রতিনিধি ও কারখানার মালিকপক্ষের প্রতিনিধিদের মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে পাওনা ৮০ কোটি টাকার বিপরীতে তাৎক্ষণিকভাবে মাত্র আড়াই কোটি দিতে চায় মালিকপক্ষ। শ্রমিকরা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে পাওনা আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) এ বিষয়ে আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
শ্রমিকদের অবস্থান কর্মসূচি
 
শ্রমিক নেতা নজরুল ইসলাম ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, ‘বকেয়া বেতন আদায়ের জন্য প্রথমে আমরা বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)-এর কাছে যাই। তখন মালিক টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা রাখেনি। পরে শ্রম প্রতিমন্ত্রীর কার্যালয়ে ২৫ কর্মদিবসের মধ্যে স্টাফদের দুই মাসের বকেয়া বেতন, একটি বোনাস ও শ্রমিকদের একমাসের বেতন ও বোনাস দেওয়ার কথা হয়েছিল। বাকিটা প্রতিমাসের বেতনের সঙ্গে দেবে এমনও বলা হয়েছিল। কিন্তু সময় কেটে গেলেও এই টাকা দেওয়া হয়নি। এরপর গত ২৬ অক্টোবর আমরা বাধ্য হয়ে শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছি। দাবি আদায় না করে আমরা ফিরবো না।’
 
শ্রমিক নেত্রী আফরিন ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, ‘আসলে পেছনে যাওয়ার আর জায়গা নেই। দীর্ঘদিন ধরে আমরা কাজের অভাবে বসে আছি। অনেক জায়গায় ধর্ণা দিয়েছি। কোনো কিছুই হয়নি। মালিকরা বলছে, দেওয়ার মতো টাকা নেই। তারা নাকি জমি-কারখানার যন্ত্রপাতি বিক্রি করে টাকা দেবে। মন্ত্রণালয়ও বলছে দেবে। কিন্তু এখনো কিছুই পাইনি।’
 
গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের সভাপতি শবনম হাফিজ ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, ‘গত সেপ্টেম্বরের ৫ তারিখ মালিকরা বলেছিল পাওনা পরিশোধ করে কারখানা খুলে দেবে। আর খুলতে না পারলেও পাওনা দেবে। এটা বাস্তবায়ন করার দাবিতেই শ্রমিকরা শ্রম ভবনে অবস্থান নিয়েছে। মালিকরা টাকা না দিলে এই দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী, তিনি মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় নিয়েছেন। তবে আজ (সোমবার) সন্ধ্যা পর্যন্তও আমাদের কিছু জানানো হয়নি।’
শ্রমিকদের অবস্থান কর্মসূচি
 
এসব বিষয়ে জানার জন্য স্টাইল ক্রাফট-এর এমডি শামস আলমাস সুখকে একাধিকার কল দিয়ে তার মোবাইলফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। সোমবার (১ নভেম্বর) রাত আটটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাকে মোবাইলফোনে পাওয়া যায়নি।
 
শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, ‘শ্রমিকরা টাকা পাবে তা ঠিক। মালিকপক্ষ দিচ্ছে না। কিভাবে টাকাটা পরিশোধ করা যায়, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। শ্রমিকরা কয়েক মাসের বকেয়া বেতন পাবে। মালিকরা প্রথমে যে টাকা দিতে চেয়েছিল, তা দিয়ে তাদের ১৫ দিনের বেতনও হয় না।’
 
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ড.  গোলাম মোহাম্মদ ফারুক ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, ‘টাকা দেওয়ার প্রক্রিয়াটা একটু লম্বা। মালিকরা দিতে না পারলে কারখানার এসেট থেকে কিভাবে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা যায়, তা দেখছি।’  
 
ইত্তেফাক/এনই/এসএ