শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আবারও কেন বাড়লো এলপিজির দাম   

আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২১, ০০:৩১

চলতি বছরের অক্টোবরের পর নভেম্বরেও দাম বাড়লো তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি)-এর। আগের দামের চেয়ে প্রায় পাঁচ শতাংশ বাড়িয়ে প্রতিকেজি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১০৯ টাকা ৪২ পয়সা। এর আগে, অক্টোবরে কেজিতে প্রায় ১৯ শতাংশ বাড়ানোর পর দাম দাঁড়িয়েছিল ১০৪ টাকা ৯২ পয়সা। এখন ফের দাম বাড়ায় ১২ কেজি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বেড়ে ১ হাজার ২৫৯ টাকার স্থলে ১৩১৩ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এই হিসাবে একমাসের ব্যবধানে দাম বাড়লো ৫৪ টাকা। এভাব দাম  বাড়ার বিষয়টিকে ভোক্তাদের ওপর বাড়তি চাপ বলে মনে করছেন রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। 

বাংলাদেশে রান্নার কাজে এলপিজি সিলিন্ডারের ব্যবহার গত কয়েক বছরে অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এখন গ্রামীণ এলাকায়ও এই সিলিন্ডারের ব্যবহার বেড়েছে। শিল্প ও আবাসিক মিলিয়ে বছরে দেশটিতে ১২ লাখ মেট্রিক টনের বেশি এলপিজি ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৪১ লাখ পরিবার এলপিজি ব্যবহার করেন। দাম বাড়ানোর ফলে রান্নার ব্যয়ও বাড়বে।

এলপিজির দাম বাড়ানোর কারণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাজনীতিবিদরা। ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন নান্নু ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, ‘দেশের অবস্থা ভয়াবহ। একদিকে ডিজেল-কেরোসিনের দাম বাড়লো, আরেকদিকে এলপিজির দামও বাড়লো। ফলে খাওয়ার খরচ  ও পরিবহন খরচ দুটোই একসঙ্গে বাড়লো। বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার করা দরকার। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামও নাগালের মধ্যে আনতে হবে।’

আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দামের সমন্বয়ের প্রসঙ্গে ইত্তেফাক অনলাইনকে নান্নু আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তো মানুষের আয় আপডাউন করে না। গতমাসের চেয়ে এমাসে তো মানুষের আয় বাড়েনি। কিন্তু গ্যাসের দাম বেড়ে গেলো। তাই এটা বাড়ানো উচিত নয়। রাষ্ট্রের উচিত ভর্তুকি দেওয়া।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকার নিজেদের খুশিমতো যা করার, তা-ই করে। আমরা জানি, এলপিজি গ্যাস কারা আমদানি করে, ফুয়েল কারা আমদানি করে। সব কিছু মিলে এমন একটা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এই সরকার দমনমূলক আচরণ করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর একটা প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হবে।  মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও কমবে।’

কনজুমার  অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, ‘এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আসলে বিভ্রান্তিতে ভূগছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এ মাসে যে গ্যাসের দাম বেড়েছে, সেটা দেশে আসবে আরও তিনমাস পর। তাহলে এখনই কেন দাম বাড়ানো হলো, তা পরিষ্কার নয়। এই সিদ্ধান্তের কারণে বাড়তি মুনাফা করছে কিছু কোম্পানি। তারা ছাড়া আর কারও কোনো লাভ হচ্ছে না।’

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সদস্য মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, ‘দাম আমরা বাড়িয়েছি, এটা ভুল ধারণা। আগের গণশুনানির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে এলপিজির দাম সমন্বয় করা হয়েছে মাত্র। প্রতি মাসেই সমন্বয় করা হচ্ছে। সামনের মাসেও হবে। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দেশেও কমে যাবে। আন্তর্জাতিকভাবে সৌদি কন্ট্রাক্ট প্রাইস (সিপি) প্রতি মাসে ঘোষণা করা হয়, সেটা প্রায় প্রতিমাসেই ওঠানামা করে। তাই আমাদেরও সেটার সঙ্গে মিল রেখে মূল্য ঠিক করতে হয়। এসব কারণে নতুন করে দর নির্ধারণ করতে হয়েছে।’

ইত্তেফাক/এনই