শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কপ-২৬: তহবিলের খসড়ায় পথরেখা না থাকায় টিআইবির উদ্বেগ

আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২১, ২০:০০

প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলার তহবিল নিয়ে কপ-২৬ এর খসড়া ঘোষণায় সুর্নিদিষ্ট পথরেখা না থাকায় উদ্বেগ জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একইসঙ্গে অর্থায়ন নিশ্চিতে বাংলাদেশসহ ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) প্রতিনিধিদের শক্ত অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি এ অবস্থানের কথা জানায়।

এতে উল্লেখ করা হয়- স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে কপ-২৬ সম্মেলনে প্রকাশিত প্রাথমিক খসড়ার ঘোষণা জলবায়ু পরিবর্তন বা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ঠেকাতে সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতির বদলে আবারও কথার ফুলঝুরি নিয়ে হাজির হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশসহ জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার তহবিল দেওয়ার বিষয়টি উন্নত দেশগুলোর কথার মারপ্যাঁচে এড়িয়ে যাবার প্রবণতায় উদ্বিগ্ন টিআইবি।

একইসঙ্গে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর জন্য অভিযোজন তহবিলের বরাদ্দ বাড়ানো এবং প্রতিশ্রুত জলবায়ু তহবিল দিতে বাংলাদেশসহ সিভিএফ প্রতিনিধিদের আরও শক্ত অবস্থান নেওয়া এবং ধনী দেশগুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহবান জানিয়েছে সংস্থাটি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কপ-২৬ সম্মেলন শুরুর আগে বিশ্বনেতারা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে একটি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে যে উচ্চাশা তৈরি করেছিলেন, তার বড় অংশই পূরণ হয়নি। বরং ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণায়ন লক্ষ্যমাত্রাকে অযৌক্তিক ও অনৈতিকভাবে ২ ডিগ্রিতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, জ্বালানি হিসেবে কয়লার ব্যবহার বন্ধে সুনির্দিষ্ট টাইমলাইন রাখা হয়নি। একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য অভিযোজন এবং ক্ষয়-ক্ষতিসহ (লস অ্যান্ড ড্যামেজ) প্রতিশ্রুত শত কোটি ডলার বাৎসরিক জলবায়ু তহবিল দেওয়ার নিশ্চয়তা দিতে উন্নত দেশগুলো আবারও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। অথচ প্যারিস চুক্তির আওতায় ২০২০ সাল থেকে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার কথা ছিল। এখন পর্যন্ত সর্বসাকুল্যে ৮০ বিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে সর্বোচ্চ ২০ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু তহবিল বলে নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে।

প্যারিস চুক্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য অভিযোজন খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হলেও জলবায়ু অর্থের মাত্র ২৫ শতাংশ এ খাতে পাওয়া গেছে। নতুন খসড়ায় এই অর্থ বাড়ানোর বিষয়ে কোনও অগ্রগতি দেখা যায়নি। এটি জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে উন্নত দেশগুলোর প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকাকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। তবে প্রকাশিত খসড়ায় ক্ষয়-ক্ষতি সংক্রান্ত প্রসঙ্গটি আলাদা করে উল্লেখ করার বিষয়টি ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে জানান ড. জামান।

এ নিয়ে তিনি বলেন, প্যারিস চুক্তিতে লস অ্যান্ড ড্যামেজকে অভিযোজন থেকে আলাদা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও উন্নত দেশগুলো জলবায়ু অর্থায়ন সংক্রান্ত আর্থিক প্রতিবেদনে দুর্যোগের ক্ষয়-ক্ষতি মোকাবিলায় দেওয়া সহায়তা পৃথক কলামে উল্লেখ করতো না। বরং এবার বিষয়টি নিয়ে স্বল্পোন্নত দেশগুলো জোর দাবি তুললেও উন্নত দেশগুলো দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই যুক্তি দেখিয়েছে। এটি লস অ্যান্ড ড্যামেজ মেকানিজমের আওতায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষতিপূরণের অর্থ পাওয়া নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে।

তিনি বলেন, আমরা আশা করবো, এই অবস্থান থেকে সরে এসে উন্নত দেশগুলো ক্ষতিপূরণের বিষয়ে একমত হবে এবং দ্রুত এর বাস্তবায়ন হবে। এর মাধ্যমে জলবায়ু অর্থায়নের বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের পাশাপাশি উন্নত দেশগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।

ইত্তেফাক/এমএএম