রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষককে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস ও উত্তর বিক্রির অভিযোগে ১৭ নভেম্বর গ্রেফতার আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক দেলোয়ার হোসেন, পারভেজ মিয়া এবং প্রেসকর্মী রবিউল আউয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কর্মকর্তারা। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, বুয়েট শিক্ষক নিখিল রঞ্জন ধর প্রতিবার প্রেস থেকে দুই সেট প্রশ্ন ব্যাগে করে নিয়ে যেতেন। আর এভাবেই তিনি সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন চক্রের অন্যদের কাছে পৌঁছে দিতেন।
দেলোয়ারের দাবি, বুয়েটের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইপিই) বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান নিখিল রঞ্জনের মাধ্যমেই অল্প টাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিয়োগ পরীক্ষার টেন্ডারগুলো পেয়েছে আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন নিখিল রঞ্জন।
এদিকে দেলোয়ারের দেওয়া তথ্যকে ভুল উল্লেখ করে নিখিল রঞ্জন গণমাধ্যমকে জানান, ‘আমি শুধু সেখানে টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিতাম। প্রশ্ন তৈরির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। সে (দেলোয়ার) যা বলছে, এটা ঠিক নয়। আমি বুয়েটের শিক্ষক, আমি কেন প্রশ্ন নিয়ে আসব। ... ওরা টেকনিক্যাল সাপোর্ট চায়, আমি তখন যাই। সিট ও সেন্টার অ্যারেঞ্জমেন্টটা আমি করে দিই। প্রশ্নের সব কিছু উনারাই করেন।’
গত ৬ নভেম্বর পরীক্ষায় আসা প্রশ্নের সঙ্গে সকালে পাওয়া প্রশ্ন ও উত্তর হুবহু মিলে গেলে স্বপনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রূপালী ব্যাংকের সাভার শাখার শ্রীনগর থেকে জানে আলম মিলনকে গ্রেফতার করা হয়। রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার জানে আলম মিলনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র সরবরাহকারী শামসুল হক শ্যামলকে ঢাকার দক্ষিণ বাড্ডা থেকে গ্রেফতার করা হয়। অপর তিন আসামি সোহেল, খোকন ও জাহিদকে ১০ নভেম্বর রাতে গ্রেফতার করা হয়।
পরে ১৭ নভেম্বর রাতে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকা থেকে দেলোয়ার ও রবিউলকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মহাখালী থেকে পারভেজকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন তাদের তিন জনকেই ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদেও অপরাধ স্বীকার করেছেন তিনজন। এ সময় তারা ছয় বছর ধরে প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত বলে জানান। এ সময় ৬ নভেম্বর সমন্বিত পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস করে উত্তর তৈরির কাজ কীভাবে হয়েছে তা বর্ণনা করেন তিনজন। তাদের দেওয়া তথ্যে কাজী শরীফুল নামে আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা এবং দেলোয়ারের ভগ্নিপতি মুবিন উদ্দিনের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে।