সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩, ১৩ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

তবু থামছে না ‘হাফ পাস’ আন্দোলন 

আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২১, ০১:১৪

বিআরটিসির বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য ৫০ শতাংশ কম ভাড়া নির্ধারণ করার ঘোষণা দিয়েছেন সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এরপরও থামছে না ছাত্রদের ডাকা ‘হাফ পাস’ আন্দোলন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, শনিবার (২৭ নভেম্বর) থেকে ফের রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। একই দাবিতে ২৯ নভেম্বর (সোমবার) সকাল সাড়ে দশটায় শাহবাগ মোড় অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে আটটি প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির চাপায় নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাইম মারা যাওয়ার পর ওই কলেজের ছাত্ররা ২৫ নভেম্বর দুপুরে গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে ১০ দফা দাবি ঘোষণা করেন। এসব বাস্তবায়নে তারা ৪৮ ঘণ্টা সময়ও বেঁধে দেন। এই সময়সীমার মধ্যে দাবি না মানলে তারা ফের আন্দোলনে নামবেন বলেও হুমকি দিয়ে রেখেছেন।

নটরডেম শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হচ্ছে,  ১) যথাযথ তদন্ত করে শিক্ষার্থী নাঈমকে হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া; ২) জেলা শহরের বিভিন্ন রুটে শিক্ষার্থীদের জন্য বাস সার্ভিস চালু; ৩) স্কুল-কলেজের সামনে হর্ন ও ওভারস্পিডিংয়ের জন্য শিক্ষার্থীদের জরিমানা আদায়ের পাশাপাশি  তা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তরের অধিকার দেওয়া; ৪) সব শিক্ষার্থীর হাফ পাস নিশ্চিত করা; ৫) প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে একাধিক গতিরোধক তৈরি; ৬) শহরের প্রত্যেক অচল ট্রাফিক লাইটের সংস্কারসহ সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা; ৭) ট্রাফিক আইনের সঠিক প্রয়োগ;  ৮) জেব্রা ক্রসিংয়ের পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার নিশ্চিত করা; ৯) চলন্ত বাসে যাত্রী ওঠানামা করালে প্রত্যেক বাসকে আইনের আওতায় আনা এবং ১০)  নিরাপদ সড়ক আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন করা।

এদিকে, নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে চলমান হাফ পাস আন্দোলনের পাঁচ দফা দাবিগুলো হলো,  গণপরিবহনে বর্ধিত ভাড়া বাতিল;  সড়ক-নৌ-রেলপথসহ সব ধরনের পরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ পাস নিশ্চিত করা;  জ্বালানি তেল ও এলপিজি গ্যাসের মূল্য কমানো; সড়কে ব্যক্তিগত পরিবহন কমানোর পাশাপাশি গণপরিবহনের মানোন্নয়ন এবং গণপরিবহনে কাউন্টারভিত্তিক টিকিট সিস্টেম চালু করা।

হাফ পাসের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা (ছবি: ইত্তেফাক)

একই দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করবে আটটি প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন। এগুলো হলো বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন (গোলাম মোস্তফা), বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন (মিতু সরকার), গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন। এর আগে, গত ২৩ নভেম্বর রাজধানীর নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করে এই ছাত্র সংগঠনগুলো।


 
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের (নিসআ) যুগ্ম আহ্বায়ক ইনজামুল হক ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন,  ‘সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কথায় আমরা মোটেই সন্তুষ্ট হতে পারছি না। আমাদের দাবি সারাদেশের সব সরকারি-বেসরকারি গণপরিবহনে হাফ পাস নিশ্চিত করতে হবে। বিআরটিসি বেশিরভাগ রুটে আমাদের হাফ পাস দিত আগে থেকেই।  শনিবার (২৭ নভেম্বর) থেকে আবার শিক্ষার্থীদের আন্দোলন হবে। আসাদগেট, ফার্মগেট, নীলক্ষেতসহ আগে যেসব জায়গায় আন্দোলন হয়েছে, সেখানেই আবার হবে। ২০১৮ সালেও আমাদের হাফ পাস নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এবার হাফ পাস না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’

হাফ-পাস-আন্দোলনরতদের একাংশ (ছবি: ইত্তেফাক)

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবির ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, ‘শাহবাগ অবরোধের কর্মসূচি আমরা দিয়েছি। এর বাইরে যারা আন্দোলন করছেন, তারাও তাদের মতো আন্দোলন চালিয়ে যাক। ওবায়দুল কাদের একটা দায়সারা বক্তব্য দিয়েছেন। বিআরটিসির বাস খুবই অল্প। অন্য গণপরিবহনগুলো কেন নেবে না? আমরা মনে করি, যেকোনো গণপরিবহনে হাফ পাস শিক্ষার্থীদের অধিকার।’ তিনি আরও বলেন, ‘এরপর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সামনের কর্মসূচির কথা আমরা ২৯ নভেম্বরই জানাবো।’

গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ও সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেছেন, ‘নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করছেন, এই আন্দোলন ২০১৮ সাল থেকেই চলে আসছে। আমরা সেই আন্দোলনের অন্যতম অর্গানাইজার ছিলাম। তখন থেকেই বলে আসছি, এই দাবি অরাজনৈতিক। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের মানুষরা বলেছিলেন, ছাত্ররা তাদের চোখ খুলে দিয়েছেন। তবু সড়কের নিরাপত্তা এখনো অবহেলিত। নটরডেমের শিক্ষার্থী নাইম হত্যার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা আবার নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকে উজ্জীবিত করেছেন। আর হাফ পাসের দাবি সামনে এনেছেন। সরকার এই দাবি মানছে না। ছাত্রদের আন্দোলনে আমাদের সবসময়ই সংহতি ও সমর্থন থাকবে। আমরাও কর্মসূচি দিচ্ছি।’

৮ প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে শাহবাগ অবরোধে গণ অধিকার পরিষদ বা ছাত্র অধিকার পরিষদ সক্রিয় অংশগ্রহণ করবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল হক বলেন, ‘আমরা তো আলাদা কর্মসূচি দিচ্ছিই। দেখি আমরাও কিভাবে থাকতে পারি। আমার মতে সব সংগঠন মিলে একই কর্মসূচি দিতে হবে, এমনও না। ছাত্র সংগঠনগুলো যার যার জায়গা থেকে কর্মসূচি দিতে পারে। ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বিক্ষোভ করেছে, মশাল মিছিল করেছে। বাম ছাত্র সংগঠনগুলো কর্মসূচি দিচ্ছে, এটাও ভালো। আমি মনে করি চলতে থাকুক। সবাই যার যার জায়গা থেকে সরকারের ওপর চাপ তৈরি করুক। চাপ তৈরি করতে না পারলে দাবি মানতে সরকারকে বাধ্য করা যাবে না।’

নটরডেম কলেজের এক নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষার্থী ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা ১০ দফা দাবি দিয়েছি। সেগুলো পূরণে ৪৮ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আশানুরূপ পদক্ষেপ না পেলে ফের আন্দোলন হবে।’

ইত্তেফাক/ সাকিব/এনই