শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

জাবিতে ‘গেস্টরুমের’ অত্যাচারে হল ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা!

আপডেট : ১১ মার্চ ২০২২, ২০:২১

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে দ্বিতীয় বর্ষের (৪৮ ব্যাচ) শিক্ষার্থীদের ডেকে নিয়মিত ‘গেস্টরুম’ কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হলে নিয়মিত রাত সাড়ে ১০টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ‘গেস্টরুম’ কার্যক্রম চালানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের (৪৭ ব্যাচ) শিক্ষার্থীরা ‘গেস্টরুম’ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বলে জানায় দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, সিনিয়রদের সালাম না দেওয়া, সালাম দিয়ে হ্যান্ডশেক (করমর্দন) না করা ও নিয়মিত রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়ার মতো ঠুনকো অপরাধে ‘গেস্টরুমে’ ডেকে খারাপ ব্যবহার করা হয়।

অভিযুক্ত তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের কর্মী বলে পরিচিত। এদের মধ্যে, ইতিহাস বিভাগের খন্দকার আতিকুল ইসলাম শাকিল, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের মেহেদী, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের নয়ন, ফার্মেসি বিভাগের আশিক, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রান্ত, ইন্সটিটিউট অব বিজনেস এ্যাডমিনিস্ট্রিশনের মাহফুজ, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের মারুফ ও পরিসংখ্যান বিভাগের ফরিদ হলের সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।

এছাড়া প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তানভীর, আইন ও বিচার বিভাগের মাসুম বিল্লাহ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের আপন, পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের অভি, দর্শন বিভাগের রিশাদ ও অর্থনীতি বিভাগের জিয়াদ হলের সভাপতি গ্রুপের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের কর্মী বলে পরিচিত এই শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ‘গেস্টরুম’ কার্যক্রম চালায়।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ম্যানার শেখানোর নামে রাতে নিয়মিত ‘গেস্টরুম’ চালাচ্ছেন তৃতীয় বর্ষের সিনিয়র ভাইয়েরা। সিনিয়রদের সালাম না দেওয়া, হ্যান্ডশেক না করা ও রাজনৈতিক প্রোগ্রামে যেতে সামান্য দেরি হওয়ার কারণে ভাইয়েরা অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। এছাড়া একই অপরাধে আমাদের কয়েকজন বন্ধুর ওপর মাঝেমধ্যে চড়াও হন কয়েকজন সিনিয়র। ‘গেস্টরুমের’ অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে দ্বিতীয় বর্ষের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী হল ছেড়েছেন বলেও জানা গেছে।

হল ছেড়ে দেওয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, হলে মধ্যরাত পর্যন্ত ‘গেস্টরুম’ চলে। ‘গেস্টরুম’ না করলে সিনিয়ররা অকথ্য ভাষায় গালাগালিও দেন। তাই চাইলেও হলে থেকে পড়ালেখা করতে পারি না। এদিকে সামনে পরীক্ষাও চলে আসছে। তাই বাধ্য হয়ে হল থেকে বের হয়ে গেছি।

এদিকে গত সোমবার হলের ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের রাজনীতি না করা তৃতীয় বর্ষের (৪৭ ব্যাচ) কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ‘মিনি গণরুমে’ রাখার চেষ্টা করেন ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আবদুল্লাহ হেল কাফী ইত্তেফাককে বলেন, হলে গেস্টরুম চলার বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো। যদি সত্যিই এ ধরণের ঘটনা হয়ে থাকে, তাহলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইত্তেফাক/এমএএম