বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রানওয়েতে ঢুকে পড়ছে মানুষ, গরু-ছাগলও

আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২১, ০৪:৩৪

আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মর্যাদা পেলেও অব্যবস্থাপনার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে কক্সবাজার বিমানবন্দর। বিশ্বমানের রানওয়ে তৈরি হলেও বিমানবন্দরের সীমানা দেওয়ালের ভাঙা অংশ দিয়ে চলাচলের ‘শর্টকাট’ পথ হিসেবে অবাধে রানওয়ের ভেতর দিয়ে এপার-ওপারে যাতায়াত করছেন লোকজন। শুধু মানুষ নয়, বিমান অবতরণ ও উড্ডয়নের সময় প্রাচীরের ভাঙা অংশ দিয়ে ঢুকে পড়ছে গরু, ছাগল, কুকুরসহ বিভিন্ন প্রাণী।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উড্ডয়নের সময় বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজের পাখার ধাক্কায় দুটি গরুর মৃত্যু হয়। অলৌকিক ভাবে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে ৯৪ যাত্রীসহ বিমানটি রক্ষা পাওয়ার পর কক্সবাজার বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বত্র আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। গরুর সঙ্গে ধাক্কার পরও পাইলটের বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতায় যাত্রী নিয়ে আকাশে ওড়ে বিজি ৪৩৪ ফ্লাইটটি নিরাপদে ঢাকায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়।

কক্সবাজার বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক এসপি নাইমুল হক নাইম জানান, বিমানের ফ্লাইটটি মঙ্গলবার উড্ডয়নের সময় ডান পাশের পাখায় ধাক্কা লেগে ছিটকে পড়ে দুটি গরু ঘটনাস্থলেই মারা যায়। তবে উড়োজাহাজটি ৯৪ যাত্রী নিয়ে সফলভাবেই উড্ডয়ন করে। বিমান চলে গেলে গরু দুটির মরদেহ সরিয়ে ফেলার পর নভোএয়ার ও ইউএস বাংলার দুটি ফ্লাইট সুন্দর মতো ঢাকার উদ্দেশ্যে কক্সবাজার ত্যাগ করে।

কক্সবাজার বিমানবন্দর

কক্সবাজার বিমানবন্দরে বিমান ও গরুর সংঘর্ষের ঘটনায় চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনার সময় সেখানে দায়িত্বরত আনসারের চার সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে বুধবার সন্ধ্যায় নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার বিমানবন্দরের ম্যানেজার মো. গোলাম মোর্তুজা হোসেন।

বুধবার বিকালে কক্সবাজার বিমানবন্দর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিমানবন্দরের কূল ঘেঁষে নুনিয়াছড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, নুনিয়াছড়া শেষ মাথা, ৬ নম্বর এলাকার অনেকাংশে নেই কোনো গাইডওয়াল, আবার যেটুকু আছে তা-ও জরাজীর্ণ। এসব অংশ দিয়ে অবাধে রানওয়ের ওপর দিয়ে এপার-ওপার যাতায়াত করছেন স্থানীয়রা। রানওয়েতে চলাচলের ‘শর্টকাট’ পথ হিসেবে ব্যবহার করছেন তারা। অকারণে ঘোরাঘুরি করতেও রানওয়েতে ঢুকছেন অনেকে। প্রাচীরের ভেঙেপড়া অংশ কিংবা দেওয়াল না থাকা স্থান দিয়ে গরু, ছাগলসহ বিভিন্ন প্রাণী ঢুকে পড়ছে।

সূত্র জানায়, ব্রিটিশ আমলেই কক্সবাজার বিমানবন্দরের যাত্রা। একে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীতকরণ প্রকল্প শুরু হয় ২০১৫ সালের ২ জুলাই। পুরোপুরি কাজ শেষ না হলেও ২০১৭ সালের ৬ মে থেকে রানওয়েটিতে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ওঠা-নামা করছে। রোহিঙ্গা ইস্যুসহ নানা কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে এর উদ্বোধন করেন। পর্যটন ও রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে প্রতিদিনই আকাশপথে কক্সবাজার আসছেন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার অসংখ্য কর্মকর্তা। এমন অবস্থায় মঙ্গলবার উড্ডয়নের সময় উড়োজাহাজের ধাক্কায় দুটি গরুর মৃত্যুর পর অব্যবস্থাপনার কারণে বিমানবন্দরটির নিরাপত্তা ঝুঁকি নতুন করে সামনে এলো।

বিষয়টি নিয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে যেমন বাড়ছে তেমনি অবকাঠামোরও উন্নয়ন হচ্ছে। তবে সেভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের অভাব রয়েছে। পর্যাপ্ত স্ক্যানার মেশিন নেই, বিমানবন্দরের চারদিকে গাইডওয়াল নেই। ফলে গরু-ছাগল ঢুকছে, রানওয়ে দিয়ে এপারের লোক ওপারে সহজে যাতায়াত করছে। এর ফল মঙ্গলবারের অঘটন। এসব বিষয়ে আরও গভীর ভাবে চিন্তা করে যে অব্যবস্থাপনাগুলো রয়েছে সেগুলো দূরীভূত করতে হবে। নইলে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটিতে যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক মো. গোলাম মোর্তজা হোসেন বলেন, মঙ্গলবারের ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি খুঁজতে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। বিমানবন্দরের কয়েকটি পয়েন্টে সীমানা প্রাচীর সংস্কারের কাজ চলছে। দ্রুত কাজ শেষ হলে অবৈধ প্রবেশ বন্ধ হয়ে যাবে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য কক্সবাজার-২ আসনের এমপি আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, মঙ্গলবারের ঘটনায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক হয়েছে বুধবার। সেখানে বিষয়টি নিয়ে বিষদ আলোচনা হয়েছে। নিরাপত্তা সম্পর্কিত সমস্যাগুলো শিগগিরই সমাধান করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বৃহস্পতিবার থেকেই ভাঙা গাইডওয়াল নির্মাণ শুরু এবং প্রাচীর নির্মাণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেখানে নিরাপত্তা প্রহরী বাড়াতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যে পাইলট মঙ্গলবারের ঘটনায় বিমানটিকে দক্ষতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করে নিরাপদে অবতরণ করিয়েছেন তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে সংসদীয় কমিটি।

উল্লেখ্য, কক্সবাজার বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমান, নভোএয়ার ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের ৯-১০টি বিমান দৈনিক আসা-যাওয়া করে। ২০১৭ সালে একটি বেসরকারি উড়োজাহাজের চাকায় পিষ্ট হয়ে এই রানওয়েতে মারা যায় তিনটি কুকুর। ২০১৬ সালে বিমানবন্দরের উত্তরে বঙ্গোপসাগরে একটি কার্গো উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে বিদেশি পাইলটসহ তিন জনের মৃত্যু হয়। 

ইত্তেফাক/এসআই