শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পূর্ণতা পায়নি ১১ বছরেও

দিবস এলেই সজ্জিত হয় গল্লামারী স্মৃতিসৌধ

আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯:৪৯

শুধু দিবস এলেই সাজানো হয় খুলনার গল্লামারী স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধ| সেটিও কেবল তিনটি দিবসেই সীমাবদ্ধ থাকে| দিবস তিনটি হলো—স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস| বছরের বাকি সময় স্বাধীনতা যুদ্ধে অকাতরে জীবন উৎসর্গকারী শহিদদের স্মৃতিসৌধ থাকে অযত্ন-অবহেলায় অরক্ষিত| পরিণত হয় গরু-ছাগলের বিচরণ ভূমিতে|

এদিকে, নির্মাণের পর দীর্ঘ ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও এর নকশা বাস্তবায়ন হয়নি| নকশা অনুযায়ী পূর্ণতা পায়নি স্মৃতিসৌধটি| ফলে এখানে অবাঞ্ছিত লোকজন ও নানা ধরনের প্রাণী অবাধে বিচরণ করে| এছাড়া সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় প্রবেশপথের কাঁচা সড়ক| তবে জেলা পরিষদ বলছে, সৌধটির পূর্ণতা দেওয়ার পরিকল্পনা তাদের রয়েছে|

জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের গোড়ার দিকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবহুল গল্লমারীতে স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধ নির্মাণে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সংস্থাটি| সৌধটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১১ কোটি টাকা| নকশা অনুযায়ী প্রকল্পে থাকে মূল স্তম্ভ নির্মাণ, সৌধ অ্যাপ্রোচ রাস্তা, পার্কিং ইয়ার্ড, সীমানাপ্রাচীরসহ ফটক, গার্ড-ওয়েটিং রুম, রেস্টুরেন্ট, ম্যুরাল দিয়ে গেট নির্মাণ, বৃক্ষ রোপণ ও দৃষ্টিনন্দন ফুলের বাগান তৈরি, চত্বরে পানির ফোয়ারা এবং বৈদ্যুতিকরণ ইত্যাদি| এর মধ্যে মূল স্তম্ভ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি ১৬ লাখ ২৭ হাজার টাকা|

সূত্র মতে, প্রকল্পটি অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্দের পর স্তম্ভ নির্মাণে দুই দফা দরপত্রের আহ্বান করে খুলনা জেলা পরিষদ| সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২৩ জুন আহ্বানকৃত দরপত্রের পরিপ্রেক্ষিতে কাজটি পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আজাদ-ইলোরা জেভি| যার ওয়ার্ক অর্ডার হয় ২০০৯ সালের ১৫ নভেম্বর| মূল স্তম্ভ নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয় ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে|

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সৌধে অবাধে গরু-ছাগল বিচারণ করছে| চত্বরে যত্রতত্র অবাঞ্ছিত, অনাকাঙ্ক্ষিত লোকজন শুয়েবসে আছে| শিশুরা সৌধের মধ্যে খেলাধুলা করছে| তবে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস এলেই কেবল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে সাজসজ্জা করা হয় সৌধটি| স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহমান জানান, প্রকল্পের সব কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় বিশেষ করে সীমানাপ্রাচীর না থাকায় চত্বরে অবাঞ্ছিত, অনাকাঙ্ক্ষিত লোকজন ও পশুর পদচারণায় সৌধের পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে| এছাড়া রাতে এখানে মাদকসেবীদের আনাগোনা বাড়ে| এছাড়া জাতীয় অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি হয়| সুজন-এর খুলনা সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা বলেন, নকশা অনুযায়ী বাস্তবায়ন না হওয়ায় সৌধটি অরক্ষিত হয়ে পড়েছে| প্রতিনিয়ত মাদকের আড্ডা বসছে| তাই সৌধটির পূর্ণতা দেওয়া খুবই দরকার| পাশাপাশি পুকুরটির জায়গা অধিগ্রহণ করে সংরক্ষণ প্রয়োজন| তিনি আরো বলেন, সৌধটি পূর্ণতা পেলে এটি হবে দৃষ্টিনন্দন স্বাধীনতা সৌধ| মানুষ এখানে স্বাচ্ছন্দ্যে শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন| মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্মিলনী ও বইমেলাসহ নানা কর্মসূচি এখানে পালন করার সুযোগ তৈরি হবে| তবে সৌধটি পূর্ণতা দেওয়ার পর এটি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তরের দাবি জানান তিনি|

খুলনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) মো. আসাদুজ্জামান জানান, সৌধটির পূর্ণতা দেওয়ার পরিকল্পনা তাদের রয়েছে|

 

ইত্তেফাক/এমএএম