শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ছাদকৃষিতে সফল হবেন যেভাবে

আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:০২

ছাদকৃষি বা ছাদে বাগান করেন এমন লোকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউ-বা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন; কেউ সফল হন না। এক্ষেত্রে তারা ছোট ছোট কিছু ভুল করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। যারা ছাদে বাগান বা চাষ করেন তাদের জন্য কিছু টিপস দেওয়া হলো। যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে। প থমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ হ করতে পারে না। রোগ বালাই হলো কি-না সেটাও বুঝে ব্যবস্হা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। 

* মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মিশাবেন। গাছের গোড়া স্যাঁতসেঁতে হতে দিবেন না। স্যাঁতসেঁতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাঁতসেঁতে না। কেকোপিট মিশালে পানি কম দিলে হবে। কোকোপিট (নারিকেলের ছোবলার গুঁড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে, যা গাছের বৃদ্বিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ ‚ত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়। 

* গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে কমপক্ষে পাঁচ দিন। সাত দিন কিংবা পনেরো দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল পচা পানি দিবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী। 

গাছের গোড়া স্যাঁতসেঁতে হতে দিবেন না

* আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।

* যাই লাগান না কেন। ভালো জাতের বীজ কি-না নিশ্চিত হয়ে নিবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নিন না কেন। সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন। সেটার জাত ভালো হবে। সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেওয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো, ছত্রাকনাশক দেওয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।

* গাছ বেশি তো ফলন বেশি। এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেমি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি টবে একটি গাছ।

* ছাদে মাচা দেওয়া সমস্যা। কারণ ঘুটি থাকে না। এজন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেওয়া যায়। লতা-পাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা পচা সার; তারপর ভার্মি কম্পোস; তারপর গোবর সার। পাতাপচা সার সহজলভ্য নয়, দামও বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেওয়া উত্তম। 

* নিম কীটনাশক এমন একটি জিনিস, যেটাকে ক্ষতিকারক পোকামাকড় খুবই অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্পে্র করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্পে্র করে দেওয়া উত্তম। অনুরূপভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড মিশিয়ে স্পে্র করা ভালো।

গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি

* ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দিবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দিবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্পে্র করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শসা গাছের বৃদ্ধির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শসা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্পে করতে হয়। খুব রোদে গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া। 

* ফুল আসার পরে প্রাণোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্পে্র করবেন। বাসায় দুটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন ম্যানসার, মেটারিল।  ১৫ দিনে একবার স্পে্র করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্পে্র করে দিবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপ-ডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলেও ঝরে পড়তে পারে। এজন্য হাত পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদন্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে। 

* ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার বিশেষ কারণ পানি বেশি বা কম দেওয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কী চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন। 

* গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র করলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লাল শাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না। 

ইত্তেফাক/কেকে

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন