বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তারানা তাবাসসুম মিম বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপনের এই ঐতিহাসিক মুহুর্তে নিজেকে বড় ভাগ্যবান মনে করছি। ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ শহীদের প্রাণ এবং কয়েকলাখ মা বোনের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজ উপভোগ করছি আমাদের এই স্বাধীনতা। ৫০ বছর পেরিয়ে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসেবনিকেশ করতে গেলে প্রাপ্তির পাল্লাই ভারী মনে হয়। যুদ্ধপরবর্তী সময়ের তলাবিহীন ঝুড়িই আজ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। শিক্ষার হার, রপ্তানি বানিজ্য, মাথাপিছু আয়, কর্মসংস্থান, প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। আশানুরূপ না হলেও প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে শিক্ষা খাতে। কিন্তু দুঃখজনক এটাই যে এই উন্নতি , মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির সুফল একটা নির্দিষ্ট শ্রেণিই ভোগ করছে। খেটে খাওয়া মানুষের অবস্থান এই উন্নতির ছোঁয়া থেকে বহুক্রোশ দূরে। তবু স্বপ্ন দেখি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত শোষণমুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত এক সুখী সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশের। যেখানে সমতা প্রতিষ্ঠিত হবে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে, থাকবেনা বেকারত্ব, দুঃখ-দুর্দশার অভিশাপ।
আইন বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান বলেন, মুক্তিযুদ্ধে আমরা বাইরের শত্রু থেকে মুক্ত হয়েছিলাম, তবে ভেতরে নয়। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও দেশটাকে আমরা সেভাবে গড়ে তুলতে পারিনি, যেভাবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি নেতা জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার নেতৃত্বে পথচলা দেশপ্রেমিক বীরেরা। উন্নয়নের পথে দ্রুত ছুটে চলে এই দেশটাকে এগিয়ে নিতে জাতির ভূমিকা আশানুরূপ নয়। এখনো পদে পদে নানা বাধার সম্মুখীন হচ্ছে আমাদের সোনার বাংলা। এখনো নীরব আন্দোলনে দেশকে ক্ষতবিক্ষত করার অপচেষ্টায় আছে কলঙ্কিত কাপুরুষেরা৷ আর তাদের এই সুযোগে সদ্ব্যবহারের উপায় বাতলে দিয়েছি আমরাই। দেশের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালনে উদাসীনতা, জাতীয় সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণে দায়িত্বহীনতা, সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতির মতো জঘন্য বৈশিষ্ট্যগুলো লালিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। যা দেশের উন্নয়নে বড় অন্তরায় এবং বাঙ্গালি জাতি হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জাজনক। আমরা না ঘাটছি দেশের অতীত আর না ভাবছি দেশের ভবিষ্যৎ। এই দুই ভাবনার ঘাটতি আমাদেরকে আত্নকেন্দ্রীক হতে বাধ্য করছে। দেশের প্রতি প্রেম ও শ্রদ্ধাবোধ না থাকলে দেশের শত্রুদের বিরুদ্ধে মোকাবেলা করে দেশের উন্নয়ন তরান্বিত করা সম্ভব নয়৷
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী লিয়ন শেখ বলেন, ৫০ বছর পুর্বেও ক্ষুধা ছিল এবং আজও ক্ষুধা আছে। তবে এই ক্ষুধা এবং ৫০ বছর পূর্বের ক্ষুধার এই ব্যবধানই আমাদের প্রাপ্তি, আমাদের অর্জন। ৫০ বছর পূর্বের বাংলাদেশের মানুষ যেমন ছিলেন, সে জায়গায় আজ যোজন যোজন ব্যবধান। তবে অস্বীকার করার উপায় নেই যে আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা এবং বাধ্যবাধকতা আছে। এই যে উপলব্ধি এবং আকাঙ্ক্ষা, এটা জাতি হিসেবে সচেতনতা প্রকাশ করে এবং গঠনমূলক সমালোচনাই মেধাভিত্তিক এবং মুক্তচিন্তার চালিকাশক্তি। যা জাতিকে আগামীদিনে অগ্রযাত্রা নামক শব্দটির সাথে ওতপ্রেতভাবে জড়িয়ে এগিয়ে নেবে।
মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী যারিন তাসনিম (সুজানা) বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করে। ... ২০২১ সালে স্বাধীনতার ঘোষণা ও যুদ্ধে বিজয় অর্জনের ৫০ বছর পূর্ণ হয়। তাই স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকীকে স্মরণীয় করে রাখতে ২০২১ সালকে সুবর্ণজয়ন্তী হিসাবে পালন করা হচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে বা অবকাঠামোগতভাবে বা রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের এক রোল মডেল আজ সারা বিশ্বে। অথচ এদেশের জন্মের সময়ে হেনরী কিসিঞ্জার মন্তব্য করেছিলেন একে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে। এক সময়কার শুধুমাত্র পাট ফলানো, প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত, তলাবিহীন রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ নামের এই দেশটি আজ বিশ্বের দরবারে সম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে আছে। বেড়েছে শিক্ষার হার, বেড়েছে কর্মসংস্থান, রপ্তানি বাণিজ্য। প্রভূত উন্নতি হয়েছে শিক্ষা স্বাস্থ্য খাতে। হয়তো যতটুকু আশা করেছিলাম সকলে ততটুকু হয়নি, কিন্তু যা হয়েছে তাও নেহায়েত কম নয়।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী মনিরুজ্জামান হাসান বলেন, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার পর ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত হয় বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে মাথাপিছু আয়, সাক্ষরতার হার ও বিদ্যুতের উৎপাদন বেড়েছে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটেছে। তবে উন্নয়নের ছোয়া সর্বত্র সমানভাবে লাগে নি। ধনী ও দরিদ্রের মাঝে আয় বৈষম্য অনেক বেশি। গুণগত, মানসম্পন্ন ও যুগোপযোগী শিক্ষা নিশ্চিত করা বর্তমান সময়ের দাবি। দুইটি বড় রাজনৈতিক দলের পরস্পরকে অবিশ্বাস, রাজনৈতিক অস্থিরতা বিনিয়োগ ও অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন ব্যাহত করছে। দারিদ্র্য ও শিক্ষিত বেকারত্বের হার কমাতে হবে। দুর্নীতি দমন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, জনগণের অংশগ্রহণ, কার্যকর সংসদ, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য নিশ্চিত করার মাধ্যমে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ এটাই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রত্যাশা।
উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সারা ইসলাম বলেন, নিঃসন্দেহে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর উদযাপন আমাদের জন্য সৌভাগ্যের বিষয়। পাওয়া না পাওয়ার হিসেবের বাইরে গিয়ে যদি ইতিবাচক চিন্তা করি তাহলে আমরা দেখতে পাই, আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের গণ্ডিতে পা রেখেছি, বেড়েছে মাথাপিছু আয়। একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় মহামারী করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় তুলনামূলকভাবে অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। শিক্ষা-সাহিত্যেও আছে উন্নয়নের ছোঁয়া। তদুপরি পঞ্চাশ বছর সময়টা হয়তো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার জন্য যথেষ্ট সময় ছিল কিন্তু রাজনৈতিক বাস্তবতায় কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও, জনগণ ও সরকার সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা সমুন্নত থাকলে অতি দ্রুতই আমাদের দেশ বিশ্বমানচিত্রে উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে পারবে।