পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, সম্প্রতি মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বা অন্য কোনো কারণে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছ থেকে বাংলাদেশের ওপর কোনো চাপ নেই। তারা তাদের নিয়মে চলছে। আমরা আমাদের কাজ করছি। তিনি বলেন, যখনই কোনো দেশ উন্নতি করতে থাকে তার শত্রু বাড়ে, চাপও বাড়ে। আপনি যখন সহকর্মীর থেকে ভালো করেন, অনেক সহকর্মীই শত্রু হয়ে দাঁড়ায়। আপনি বেশি ভালো করলে কিছু শত্রুর দেখা পাবেন।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এক আলোচনা শেষে তিনি সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের কিছু লোক যারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে অর্থ পায়, তারা দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমাদের দেশে কিছু লোক আছেন, যারা ধারাবাহিকভাবে মার্কিন আইন প্রণেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছেন। তারা মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন, মিথ্যা ভিডিও বানাচ্ছেন।
ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশে এক জন মরলে বিচারবহির্ভূত হত্যা হয়। আর যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেলে বলা হয় দায়িত্ব পালনের সময় মারা গেছে। এদেশে এক জন মরলেই সংবাদপত্র বড় হরফে লেখে ‘বিনা বিচারে হত্যা’। ঐসব এখন তারা ফলাও করে। তিনি বলেন, দেশেই কিছু লোক আছেন, যারা দেশের উন্নয়নে খুব সন্তুষ্ট নন। একদল লোক আছেন, যারা মনে করেন আওয়ামী লীগ এত ভালো করে ফেলছে কেন! সুতরাং তারা এটা পছন্দ করেন না। খুব সম্ভবত তারা তাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) কাছ থেকে টাকা পান। তারা তথ্যগুলো ঠিকমতো দেন না। মিথ্যা তথ্য দেন। আর অনেকে তা বিশ্বাস করেন। প্রসঙ্গত, ১০ ডিসেম্বর র্যা ব ও বাহিনীটির উচ্চপদস্থ বর্তমান-সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিত্ রায় হত্যায় দণ্ডিত পলাতক দুই আসামি সৈয়দ জিয়াউল হক, আকরাম হোসেনসহ এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য চেয়ে ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এভাবে পুরস্কার ঘোষণা করে সফল হয়েছে। অনেক দেশে যখন তথ্য পাওয়া যায় না, আমি শুনেছি, ওসামা বিন লাদেনের ক্ষেত্রেও একইভাবে হয়েছে। আমরা যেমন বঙ্গবন্ধুর তিন পলাতক খুনি, যাদের অবস্থান জানি না, তাদের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছি। কেউ যদি সঠিক তথ্য দিতে পারেন, অবশ্যই সরকার তাদের পুরস্কার দেবে। তারাও (যুক্তরাষ্ট্র) এ রকম দিয়েছে।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এর সমাধান মিয়ানমারের হাতে। মিয়ানমার আমাদের শত্রু নয়, আমরা আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরাতে চাই। তিনি বলেন, ২০১৭ সাল থেকে প্রত্যাবাসনের জন্য একাধিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফিরতে পারেনি। মিয়ানমারে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি এবং রোহিঙ্গাদের মধ্যে আস্থা তৈরির মাধ্যমে স্বেচ্ছায় ও টেকসই প্রত্যাবাসনের পথ সুগম হবে।
তিনি বলেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হলে রোহিঙ্গারা আরো হতাশাগ্রস্ত হবে এবং মাদক চোরাচালান, মানব পাচার, খুনের মতো অপরাধমূলক কার্যকলাপে আরো বেশি ঝুঁকে পড়বে।