শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শীতের আমেজ 

হেমন্তের পালাবদলে প্রকৃতিতে চলে এলো শীত। শেষ রাতের হিমেল হাওয়া ষড়ঋতুর বাংলাদেশে শীতের জানান দিচ্ছে। কুয়াশাচ্ছন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলো শীতের প্রকৃতিতে এক অপরূপ সৌন্দর্য ধারণ করে। শীতের সাজে সেজে উঠা ক্যাম্পাসগুলো এক ভিন্ন আবহ তৈরি করে।  কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের চোখে  বিশ্ববিদ্যালয়  ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য তুলে ধরেছেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী যোবায়ের ইবনে আলী

আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২১, ২১:৪৭

শীতের ক্যাম্পাস একটু বেশিই সুন্দর
তাইয়েবা ইসলাম মীম, শিক্ষার্থী, হাবিপ্রবি, দিনাজপুর

দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের অন্যসব বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় এখানে তুলনামূলক বেশি শীত অনুভূত হয়।  উত্তরবঙ্গের দিনাজপুর জেলায় অবস্থিত হওয়ায়  শীতের প্রভাব একটু বেশিই বলা যায়।
সবুজ ঘাসের ওপর ভোরের সূর্যের আলো হালকা লালচে রঙয়ের আলো,  দূর থেকে দেখলে মনে হয় প্রতিটি ঘাসের মাথায় যেন মুক্তোদানার মতো শিশির কণা জমে আছে। সকালবেলা শিশিরে ভেজা আর ঘন কুয়াশা চাদরে আবৃত শীতের ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য থাকে দেখার মতো।
ঘন কুয়াশা ভেদ করে  মিষ্টি আলোয় সকাল নামে ক্যাম্পাসে। শীতের ঋতুতে হাবিপ্রবি ক্যাম্পাসের প্রধান আকর্ষণ নান রঙের ফুল। চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, অ্যাস্টার, ডেইজি, কসমস,জিনিয়া,  সিলভিয়া,   গ্ল্যাডিওলাস, গাঁদা, ডালিয়াসহ নানান প্রজাতির ফুলের সৌরভে মুখরিত হয়ে যায় ক্যাম্পাস। ফুলেল ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ক্যাম্পাসে  দর্শনার্থীদেরও দেখা মেলে। 
দিন পেরিয়ে সন্ধ্যা নামে। সন্ধ্যায় শুরু হয় হিমেল বাতাস এবং খুব বেশি রাত হওয়ার আগেই সবাই চলে যায় নিজেদের হলে বা রুমে। দিনাজপুরের তাপমাত্রা কমে চলে যায় ৪-৫ ডিগ্রির দিকে। তাই এমনটি হয়। এরপর আবার কুয়াশার চাঁদর ভেদ করে মিষ্টি আলোয় শুরু হয় নতুন আরেকটি দিনের। 

 


ক্যাম্পাসে শীতের মুগ্ধতা
আতাউর রহমান ফাহমিদ, শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

বাতাসে হিমশীতল ভাব। কাক ডাকা ভোরে কুয়াশার চাপ। মিষ্টি নরম সোনা রোদের তাপ। শিশির ভেজা ঘাসে পরিপূর্ণ মাঠ।  শীতের আবহে এসব দেখে  পুলকিত হয় মানব মন। শীত বললে স্মরণ হয়ে যায় চাদর মুড়িয়ে আগুনের তাপ পোহানোর দৃশ্য, অনুভব হয় খেজুরের রসের মিষ্টি মধুর ঘ্রাণ আর বাহারি খাবারের মনোমুগ্ধকর সমারোহ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এ মুগ্ধতার কোন তুলনাই হয় না। 
শীতের রিক্ততায় ঝরে  পড়া পত্র-পল্লবে ঝিকমিক করে উঠে সকালের মিষ্টি রোদ। সকালের মুগ্ধতা দেখতে অনেকেই দল বেঁধে নেমে আসেন রাস্তায়। দুপুর পেরিয়ে বিকেল হলে ক্যাম্পাসে ঢল নামে নানামুখী মানুষের পদচারণায়। হেমন্তের সাজে সজ্জিত ক্যাম্পাসে প্রকৃতির অপূর্ব লীলাভূমি দেখতে মানুষের এই কোলাহল। শান্ত বিকেল মাতোয়ারা হয়ে যায় পাখির কলরবে। এছাড়াও পিঠা-পুলির উৎসব শিক্ষার্থীর মনে জাগিয়ে তুলে আনন্দের শিহরণ। করোনার প্রকোপ শেষে শীতের আবেশে ক্যাম্পাস যেন নতুন করে প্রাণবন্তকর পরিবেশ ফিরে পেয়েছে।

 


শীতে ক্যাম্পাসে সৌন্দর্যের পূর্ণতা আসে
ফারহানা ইয়াসমিন, শিক্ষার্থী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ দেশ হিসেবে পরিচিত হলেও শীত যেন জনমনে এক হিমেল আবহ তৈরি করে। উষ্ণ পোশাক, গাছে নতুন পাতার আনাগোনা, শিশিরের আঁকিবুঁকি, খেজুরের রস আর কুমড়া বড়ি ইত্যাদিতে শীতের মুগ্ধতা পাওয়া যায়। এগুলো ছাড়া যেমন শীত ঋতুকে কল্পনা করা যায় না, ঠিক তেমনি বন্ধুদের সাথে আড্ডার ফাঁকে গরম চায়ের কাপ, ভাপা পিঠার প্লেট আর এক পশলা বেসুরো গলার গান ছাড়াও ক্যাম্পাস জীবন পরিপূর্ণ হয় না। ৫০ একর জমির ওপর কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে  থাকা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) বিলাসবহুল লালিমায় ঘেরা বিল্ডিং গুলো তার নিজস্বতা ফিরে পায় সকালের শিশির আর রাতের কুয়াশার মাঝে।
শীতের সকালে খোলা মাঠের উপর শিশিরে সিক্ত ঘাস গুলোর নুয়ে পড়ার দৃশ্য যে শিল্পীর রং-তুলি দিয়ে আঁকা ছবিকে হার মানাবে নিঃসন্দেহে। সকালে ক্লাসে যাওয়ার আগে এ দৃশ্য মুঠোফোনে ধারন করা আজকাল নিত্যদিনের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবসরে মোবাইলের গ্যালারিতে সেই ছবির ওপর চোখ বুলায়, যা আমার মাঝে কিছু টা হলেও যান্ত্রিকতার অবসাদ থেকে স্বস্তি এনে দেয়। আবার ক্লাস শেষে সব ব্যস্ততা উপেক্ষা করে এই শীতের সন্ধ্যায় বন্ধুদের সাথে কীর্তনখোলার পাড়ে দাঁড়িয়ে ডুবন্ত সূর্যের সঙ্গী হতেও বেশ লাগে। 

 

 

পিঠার ধোঁয়া আর কুয়াশায় ভেসে আসে শীত
ইকবাল হাসান, শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা

প্রতিটি ঋতুই নিজস্ব সৌন্দর্যে মহিমান্বিত। তবে বাংলায় শীতের আগমন যে জনমনে এক মাদকতা তৈরি করে তা বলাই যায়। ক্যালেন্ডারের পাতা ঘুরিয়ে এখন শীতের হিমেল হাওয়া ধীরে ধীরে গ্রাস করছে চারদিক।  সন্ধ্যা হওয়ার পর পরই হালকা কুয়াশাচ্ছন্ন পুরো ক্যাম্পাস , অনুভূত হচ্ছে শীত। দেশের প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শীতে শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা ভিন্ন রকম। পাতা ঝরা এই শীতে কোন কোন ক্যাম্পাসে দেখা যায় পরিযায়ী পাখি। 
তবে প্রতিটা ক্যাম্পাসে বিকেলের হালকা কুয়াশা আর পিঠার দোকান থেকে ভেসে আসা ঘ্রাণ এবং মাটির চুলার ধোঁয়া শীতকে উসকে দেয় দ্রুত আসার জন্য। ষড়ঋতুর এই বৈচিত্র্যপূর্ণ পরিবেশে শিক্ষার্থীরা এক শীতে ক্যাম্পাস জীবনের শুরু করে, আবার কোন এক শীতে পড়ালেখা শেষে ফিরে যায় পরবর্তী জীবনের গন্তব্য খুঁজতে। সময়ের পরিক্রমায় প্রতি বছর শীত আসবে, পরিযায়ী পাখি আসবে, কুয়াশা আসবে, রাস্তার মোড়ে পিঠার দোকান বসবে কিন্তু ক্যাম্পাসে কাটানো শীতের মুহূর্ত একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর আর পাওয়া যাবে না। এ জীবনকে সবার উপভোগ্য করে তোলা উচিত।

ইত্তেফাক/এএইচপি