বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শঙ্কা থাকলেও চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ছে পুতিনের দেশ

রাশিয়াকে চাপ দিয়ে উল্টো চাপে পশ্চিমা বিশ্ব 

আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২১, ০৩:৪৮

ই‌উক্রেন নিয়ে রাশিয়াকে ব্যাপক চাপে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্ব। ইউক্রেনকে পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য করতে পশ্চিমারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এ নিয়ে রাশিয়াকে বারবার হুমকি দেওয়া হচ্ছে এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞাও দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের অনেক দেশ।

উইঘুর মুসলিম ও বাণিজ্য ইস্যুতে চীনের ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে চীন বারবার হুঁশিয়ারি দিলেও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থামছে না। কিন্তু এরই মধ্যে রাশিয়া এবং চীনের প্রেসিডেন্ট ভিডিও কনফারেন্স করেছেন। তারা পশ্চিমাদের চাপ মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করা এবং তাদের হস্তক্ষেপকে অগ্রাহ্য করার অঙ্গীকারও করেছেন। এরপরই পশ্চিমা বিশ্বই এখন নতুন চিন্তায় পড়ে গেছে। বিশ্বের অর্থনৈতিক ও প্রভাবশালী দুই দেশ এবং তাদের মিত্ররা একত্র হলে পরিস্হিতি কোন দিকে যাবে তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় পশ্চিমা বিশ্ব।

চীনকে নিয়ে ভয় থাকলেও বন্ধুত্বের দিকে রাশিয়া: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরই চীন এবং রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক খুব একটা ভালো যায়নি। দুই দেশই বিভিন্ন ইইস্যুতে আলাদা থেকেছে। যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিমাদের সঙ্গে মিলে সবচেয়ে বড় সামরিক জোট ন্যাটো গঠন করলেও রাশিয়ার সঙ্গে চীন তাল মেলায়নি বা একসঙ্গে কাজ করতে উদ্বুব্ধ হয়নি। 

৯৬১ সালেই চীন এবং রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক ভেঙে যায়। এরপর ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙলে সমাজতান্ত্রিক এই দুই দেশ পুঁজিবাদের দিকে অগ্রসর হয়। রাশিয়া এবং চীন জানে যে, তাদের একসঙ্গে কাজ করা উচিত। কিন্তু তারপরও তারা আলাদা। সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগ থাকলেও ক্রেমলিনের অনেকে চীনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভয়ে আছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং

পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর বিরুদ্ধে সামরিক লড়াই চালাতে হচ্ছে মস্কোকে। কিন্তু এখানেও চীনের আধিপত্য তাদেরকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। ব্রিটিশ থিংক ট্যাংক রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসের সিনিয়র ফেলো রাফায়েলো পান্তুচির মতে, রাশিয়া সবসময় চীনকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকে। বেইজিংকে মস্কো দ্বিতীয় অংশীদার মনে করে।

পান্তুচির মতে, এমন কোনো বিষয় আছে যা চীন করতে পারে না সেই বিষয়ই রাশিয়াকে চীনের কাছাকাছি নিয়ে আসছে। রাশিয়ানরা চীনাদের চেয়ে বেশি ক্ষমতা দেখাতে পারদর্শী। তাই চীনের অর্থনৈতিক শক্তি এবং রাশিয়ার সামরিক আধিপত্যই একে অপরকে কাছে টানছে বলে মনে করেন পান্তুচি।

তিনি বলছেন, পশ্চিমাদের চাপ দুই দেশের ওপর এত বেড়ে গেছে যে, তারা বন্ধুত্ব গড়তে বাধ্য হচ্ছে। তাইতো রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ভিডিও লিংকে আলাপ করেছেন এবং একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। তারা আগামী বছরের শুরুতে সরাসরি সাক্ষাতেরও পরিকল্পনা করছেন।

চ্যালেঞ্জের মুখে পশ্চিমা বিশ্ব : এসরেফ ইয়ালিঙ্কিলিক্লির মতে, রাশিয়ার সামরিক শক্তি এবং চীনের অর্থনৈতিক ক্ষমতা আছে। এই দু্ই দেশ এক হলে পশ্চিমাদের জন্য অবশ্যই উদ্বেগের। এমনিতেই পশ্চিমারা চীনের কাছে অর্থনৈতিক দিক থেকে ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে। আবার ইউক্রেনসহ পূর্ব ইউরোপে রাশিয়ার সামরিক মহড়া এবং আধিপত্যও তাদের চিন্তায় ফেলেছে। দুই দেশই এখন সামরিক দিক থেকে আরো শক্তিশালী হচ্ছে।

এসরেফ ইয়ালিঙ্কিলিক্লি বলছেন, তাইওয়ান এবং ইউক্রেন ইস্যুতে এই দুই দেশ একত্র হতেই পারে। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র তাইওয়ান চীনের জন্য সমস্যার এবং পশ্চিমাপম্হি ইউক্রেন রাশিয়ার বিষফোঁড়া।

পুতিন ও শির মধ্যে আলাপের পর চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও জানিয়েছিল, তাইওয়ান ইসু্যতে চীনকেই সমর্থন দেবে রাশিয়া। রাশিয়া এবং চীন দুটিকে স্বৈরতান্ত্রিক সরকার বলে মনে করে পশ্চিমারা। সেই সরকারগুলো এক হলে পরিস্হিতি কোন দিকে যাবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন পশ্চিমা বিশ্ব।

ক্রেমলিনের রাজনীতিক এবং পণ্ডিতরা মনে করছেন, পশ্চিমাদের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করা খুব কঠিন এবং এজন্য অনেক মূল্যও দিতে হবে। ফলে কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলাই রাশিয়ার জন্য মঙ্গল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পশ্চিমাদের নীতির কারণেই রাশিয়া-চীন বিভক্ত ছিল। আবার তাদের নীতির কারণেই তারা একত্র হচ্ছে। রাশিয়া এবং চীনের এই সম্পর্ককে পশ্চিমারা দেখছে একটা ‘খারাপ বিবাহ’ হিসেবে। কেউ আবার স্বৈরতন্ত্রের মিলন হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। আবার পুতিনকে এখন হুমকি মনে করছে পশ্চিমারা। আর সেজন্যই ইউক্রেন নিয়ে পুতিনের প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রসহ তার মিত্ররা মেনে নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ ইউরোপে গ্যাসের ৪০ শতাংশ আসে রাশিয়া থেকে।

ইত্তেফাক/টিআর