ইচ্ছে করে হই ইচ্ছে-ঘুড়ি
মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল
মনের মাঝে মাঝেমাঝেই
তীব্রভাবে ইচ্ছে করে
বনপাখিদের গান শোনাব
প্রবলভাবে ইচ্ছে করে স্বপ্নচরে
হরেক রঙের ঘুড়ি উড়াব
কখনো বা ভাবি আমি মন মাঝি
অকূল পাথারে নাও ভাসাব।
আবার কখনো কখনো ইচ্ছে করে
দূরন্ত ঘোড়া হয়ে মরুভূমি দেব পাড়ি
ইচ্ছে করে হয়ে ইচ্ছে-ঘুড়ি
দ্যুলোক-ভূলোক যাব ছাড়ি,
কখনো কখনো ভাবি পাখি হয়ে
উড়াল দেব আকাশে
সবেগে ছুটব অনন্তের পানে
কখনো কখনো ভাবি
সেসব কখনোই কি হবে
যা আছে মনে।
তেরাবেকা
শাহীন রেজা
মরণ বেঁধেছে বাসা দেখো তার গায়ে
জলহীন দেহ, বালু লেগে আছে পায়ে
অথচ এখানে একদিন ছিল প্রাণ
বাতাসে বাতাসে লবণের বুনো ঘ্রাণ
তেরাবেকা থেকে উঠে আসা সেই ঢলে
কাঁপত হূদয় বন-ঘুঘুদের ছলে
হরিণের চোখে নেচে যেত প্রজাপতি
মাছের চেয়েও জলের প্রবল গতি
আশি ফুট দেহে ফুঁসত ভয়ংকর
কোথাও ছিল না মাটির আভাস; চর
সেই বুকে আজ বিরানের হাহাকার
নেই তো কোথাও জীবনের ধ্বনি আর।
দিনযাপনের খণ্ডচিত্র
চন্দনকৃষ্ণ পাল
এইখানে দিন যাপনে প্রতিনিয়তই মাখি ক্লেদ আর গ্লানি
তোমরা তো বোঝো না কিছুই—
চোখের কোলের কাছে সুর্মার ছায়া নিয়ে
উপাসনা করো আর রাস্তা মাতাও যত
ক্লিশে হওয়া ফালতু স্লোগানে।
কত করে বললাম
মানুষের মন নিয়ে ব্যবসা কোরো না,
মানো না কিছুই, ঘটে থাকা পচা মাটি
নিয়মিত দিয়ে যায় শূন্য ফলাফল
সেই ফলে চিন্তিত হই, ভাঙে রাত্রির ঘুম।
নিজের ভবিষ্য তহবিল শূন্য পড়ে আছে
সন্তানসন্ততির দিন নিয়ে ভাবি
অন্ধকারে ফেলে রেখে নিজে যদি চিতার আলোকে
ঠিক আলোকিত হই
নিজেকে কী করে আমি ক্ষমা করি বলো?
ঘৃণাটুকু উগরে দিতে চাই, দিতে তো পারি না
কী এক অস্বস্তি নিয়ে দিন-রাত করছি যাপন।
আহা ডিসেম্বর!
বীরেন মুখার্জী
স্মৃতি ঠেস দেয়া যাবতীয় দুঃখরেখা এসে
মিশে যায় ডিসেম্বরে; আহা ডিসেম্বর!
নিজস্ব অধিকারে প্রতিবছর এসে দাঁড়াও
সম্মিলিত প্রাণের পল্লবে।
আহা ডিসেম্বর! তুমি এলে বধ্যভূমির
চিত্কার মুছে যেতে যেতে অর্থপূর্ণ
ভৈরবী বাজে সহস্র অন্তরে;
তুমি এলে, তন্দ্রালু সন্ধ্যা রাতের আয়তন
ভেঙে তুলে ধরে খুশিমুখ; গান ওঠে
তর্জনী ও বজ্রকণ্ঠে-প্রাণাধিক ব-দ্বীপে
প্রসঙ্গত তোমারই বুকের ভেতরে।
একটি ল্যাম্পপোস্ট ও
বিদ্যাসাগর মশাই
গাফফার মাহমুদ
নিয়ন আলোর ল্যাম্পপোস্ট
শিরদাঁড়া উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে
একদল দাঁড়কাকের পুরীষের ছাপ
মাতোয়াল চাঁদ-রাত
ফুলে ফেঁপে ওঠা দর্জিবাড়ির সুঁই বু
ক্রিংক্রিং বেল্ট ধ্বনি
নেমে পড়ে রিকশাওয়ালা
অদূরে ঘুটঘুটে বিচ্ছিরি অন্ধকার—
একটুকু আলো চাই, নিয়ন আলো
শিরদাঁড়া ল্যাম্পপোস্ট দাঁড়িয়ে ঠাঁই
একদিন বিদ্যাসাগর মশাই
পাঠ নিতেন কত সরল বইয়ে।
তুলনাহীন এক ইতিহাস
আবু আফজাল সালেহ
ষোলো ডিসেম্বরের রচিত বিশাল মহাকাব্য।
বজ্রকণ্ঠের অসীম ওঙ্কার
পরাজিত দখলদার
রেসকোর্সের মাঠে, বিলের শাপলা পাতায়
পল্লবিত বটের ছায়ায়, উড়ন্ত দোয়েল-চিলের ডানায়,
ভেসে ওঠে প্রিয় ভূমি, মাতৃভূমি
বাংলাদেশ।
এবং সূর্যোদয়ের রাঙাসূর্যে
মায়ের মুখের ছবি আঁকা
চির প্রেরণার, চিরঞ্জীবী
অমর, অক্ষয়
নতুন এক তুলনাহীন ইতিহাস।