মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

নজর এখন শিক্ষার্থীদের টিকায় 

  • তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকার জন্য বিশেষ সপ্তাহ ১৬ জানুয়ারি শুরু
  • ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সি শিক্ষার্থীদের টিকা দিয়েছে ৩৫ শতাংশ
  • বাকি ৭৫ লাখ শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা ৩১ জানুয়ারির মধ্যে 
আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২২, ০১:১১

বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশের আলোকে যতদিন সম্ভব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার রাখার সিদ্ধান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। এ কারণে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। স্কুলের শিক্ষার্থীর থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষা স্তরে পড়া শিক্ষার্থীদের বিষয়টি সামনে রেখে ইতিমধ্যে নানামুখী পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়নি, তাই শিক্ষার্থীদের টিকা দিয়েই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে চায় সরকার। এর অংশ হিসাবে ১৫ জানুয়ারি থেকে টিকা ছাড়া স্কুলে না যাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে। যদিও প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এ নির্দেশনা প্রযোজ্য নয়। তারা স্কুলে যেতে পারবে। 

অন্যদিকে টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের নানামুখী ভোগান্তির চিত্র ফুটে উঠেছে। কেন্দ্রের সংখ্যা কম থাকায় একই কেন্দ্রে একাধিক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জড়ো করে টিকা দেওয়া হচ্ছে। এতে ভিড়ের কারণে শিক্ষার্থীদের করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। আর এ কারণে অভিভাবকরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের টিকা কেন্দ্র চালুর আবেদন জানিয়েছেন। তবে শুরুতে আটটি কেন্দ্র দিয়ে শুরু হলেও এ পর্যন্ত ৩০টি কেন্দ্র টিকা দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে বলে শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। দ্রুত টিকা প্রদান শেষ করার লক্ষ্যেই টিকা কেন্দ্র বাড়ানো হয়েছে। 

টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে এখন অনেকটা এগিয়ে রয়েছে ঢাকা মহানগরী। ঢাকা মহানগরীতে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সি ৭ লাখ ২৩ হাজার শিক্ষার্থীর রয়েছে। ১৫ জানুয়ারির মধ্যে এসব শিক্ষার্থীর প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া শেষ হবে। এরপর থেকে দ্বিতীয় ডোজ শুরু হবে। 

ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল মজিদ গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, ঢাকা জেলার অন্যান্য উপজেলা একটু পিছিয়ে রয়েছে। গত ১১ জানুয়ারি থেকে এসব উপজেলায় টিকাদান শুরু হয়েছে। টিকা দিতে বাড়তি তিন/চার দিন লাগবে। পুরো ঢাকা জেলার অধীনে প্রায় ৯ লাখ শিক্ষার্থীর টিকাগ্রহণের উপযোগী। ইতিমধ্যে সাড়ে ৭ লাখ শিক্ষার্থীর ১ ডোজ টিকা নিয়েছে। 

তিনি জানান, প্রথমে আটটি দিয়ে শুরু হলেও ঢাকা মহানগরীতে ৩০টি কেন্দ্র টিকাদানের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। এ কারণে এখন আর শিক্ষার্থীদের দূরের প্রতিষ্ঠানে গিয়ে টিকা দিতে হয় না। উচ্চ শিক্ষা স্তর : সরকারি, বেসরকারি, জাতীয়, উন্মুক্ত ও আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী আছে ৪৪ লাখ ৩৪ হাজার ৪৫১ জন। এদের মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছে ২৩ লাখ ২৮ হাজার ৪৬৮ জন। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছে ১৭ লাখ ১৩ হাজার ৩০২ জন। আর নিবন্ধন করেছে ২৭ লাখ ৩১ হাজার ২৮৭ জন। পাবলিক এবং প্রাইভেটে ৯৫ ভাগ টিকা দেওয়া শেষ হয়েছে।

করোনার টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্হ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের শিক্ষার্থীরা। কয়েকমাস আগে নিবন্ধনের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হলেও ৩৪ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮ লাখ শিক্ষার্থীর নিবন্ধন করেছিল। আবার এর মধ্যে কত শিক্ষার্থীর টিকা নিয়েছে সে তথ্যও নেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল হোসেন গতকাল ইত্তেফাককে জানান, নিবন্ধন করা ৮ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে হয়তো অধিকাংশ শিক্ষার্থীর টিকা নিয়েছে। নিবন্ধন না করা ২৬ লাখ শিক্ষার্থীকে নিবন্ধন করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টির পক্ষ থেকে নতুন করে টিকা বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত ও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যেসব শিক্ষার্থী করোনারোধী টিকা নেননি তাদের টিকা দিতে ‘বিশেষ সপ্তাহ’ পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, যা শুরু হবে ১৬ জানুয়ারি থেকে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বলেন, আমরা চেষ্টা করছি নির্ধারিত তারিখের মধ্যে সবাইকে নিবন্ধন করে টিকা দিতে। 

সারাদেশের চিত্র

দেশে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সি শিক্ষার্থী ১ কোটি ১৬ লাখ ২৩ হাজার ৩২২ জন। প্রথম ডোজ পেয়েছে ৪৪ লাখ শিক্ষার্থী। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে ৪ লাখ ১৯ হাজার ৫৫৪ জন। মোট টিকা পেয়েছে ৪৮ লাখ ১৯ হাজার ৫৫৪ জন। এখনো ৭৫ লাখ ৫৪ হাজার ৬০৬ জন শিক্ষার্থী টিকা পায়নি। ৩৯৭টি উপজেলায় ১৫ জানুয়ারির মধ্যে টিকাদান শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। আর সব স্হানে প্রথম ডোজ টিকা কার্যক্রম শেষ করার পরিকল্পনা ৩১ জানুয়ারির মধ্যে। তথ্য অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ৯২ শতাংশ শিক্ষার্থী টিকা পেয়েছে বাগেরহাটের শিক্ষার্থীরা, সর্বনিম্ন ৪ শতাংশ করে টিকা পেয়েছে নরসিংদী ও লালমনিরহাটের শিক্ষার্থীরা। 

টিকা গ্রহণ সহজ করল মন্ত্রণালয়

বর্তমানে শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রেশন ছাড়াও নিজ নিজ আইডি কার্ড নিয়ে কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিতে পারবে। যাদের আইডি কার্ড নেই তারা রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিয়ে গেলে টিকা পাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানেও একসঙ্গে গিয়ে বা এককভাবে টিকা নেওয়া যাবে। ১২ বছরের ঊর্ধ্বে হলেই তাকে টিকা দেওয়া হবে। দ্রুত সময়ে শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনতে এ কার্যক্রম সহজ করা হয়েছে । 

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংক্রমণ পরিস্হিতি মনিটরিংয়ের সিদ্ধান্ত

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংক্রমণ পরিস্হিতি মনিটরিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে প্রতিদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের করোনা সংক্রান্ত তথ্য পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। নির্দেশনায় বলা হয়, মাউশি থেকে জারি করা গাইডলাইন, নির্দেশনাপত্র ও কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সুপারিশের আলোকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়মিতভাবে সুরক্ষিত রাখার জন্য দৈনিক ভিত্তিতে মনিটরিংয়ের লক্ষ্যে একটি চেকলিস্ট প্রস্ত্তত করা হয়েছিল। কোভিড-১৯ সংক্রমণ ফের বৃদ্ধি পাওয়ায় মনিটরিং চেকলিস্টের তথ্যগুলো গুগল ফরমের মাধ্যমে প্রতিদিন বেলা ৫টার মধ্যে পাঠাতে হবে। নির্ধারিত লিংকে প্রবেশ করে গুগল ফরমে তথ্য দিতে হবে।

ইত্তেফাক/জেডএইচডি