মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

নতুন ইসি গঠন 

আগামী সপ্তাহে সার্চ কমিটি করবেন রাষ্ট্রপতি 

আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২২, ০৩:৫৭

নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে জোর কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। আলোচনায় সরব নতুন কমিশন গঠন নিয়ে। কে হচ্ছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং কারা হচ্ছেন কমিশনার, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা তুঙ্গে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ শেষ হওয়ার পরপরই সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। আগামী সপ্তাহে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ঐ সার্চ কমিটি গঠন করতে পারেন। তবে চার সদস্যের, নাকি ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। আগের মতো সার্চ কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি বর্তমান কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপতির প্রেসসচিব মো. জয়নাল আবেদীন ইত্তেফাককে বলেন, আগামী ১৭ জানুয়ারি চলমান সংলাপ শেষ হবে। এর পরই রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠন করবেন। তবে পূর্বের ন্যায় ঐ সার্চ কমিটি গঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।

 গত ২০ ডিসেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করেন রাষ্ট্রপতি। আগামী ১৭ জানুয়ারি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে চলমান সংলাপ শেষ হবে। বুধবার পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ২৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের সময়সূচি ছিল। এর মধ্যে বিএনপিসহ সাতটি রাজনৈতিক দল এবারের সংলাপ বর্জন করেছে। আর সংলাপে অংশ নেওয়া কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে। 

যদিও ইতিমধ্যে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক জানিয়েছেন, সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। তিনি বলেন, কোভিডের কারণে এখন নতুন আইন করে ইসি গঠনের সুযোগ নেই। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন ইসি গঠনের কথা জানিয়েছিলেন। 

সংবিধানে বলা আছে, কমিশন-সংক্রান্ত একটি আইনের অধীন রাষ্ট্রপতি এ নিয়োগ দেবেন। তবে গত ৫০ বছরেও এই আইন প্রণয়ন সম্ভব হয়নি। ২০১২ সালের ২২ জানুয়ারি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে চার সদস্যের সার্চ কমিটি করেছিলেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদও ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি একই পদ্ধতি অনুসরণ করে ছয় সদস্যের করেছিলেন। প্রথমবার সার্চ কমিটিতে একজন নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত করেন। ইতিমধ্যে সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধও তৈরি হয়েছে।

আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে প্রথমবার গঠিত সার্চ কমিটিতে হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান ও কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) পদধারী ঐ কমিটিতে ছিলেন। দ্বিতীয় বার গঠিত সার্চ কমিটিতে উপরোক্ত চার জনের পাশাপাশি অতিরিক্ত দুই জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তারা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিরীণ আখতার। দুই বার গঠিত সার্চ কমিটির দুই বারই প্রধান ছিলেন তৎকালীন আপিল বিভাগের বিচারপতি ও সদ্যবিদায়ি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। 

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ড. শামসুল হুদার নেতৃত্বে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশনের আমলে দেশের নির্বাচনি ব্যবস্হাপনার পরিবর্তন আসে। ঐ সময়ে ইসি গঠন নিয়েও একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়। যদিও পরবর্তী সময়ে তাদের ঐ প্রস্তাব পরে আর গৃহীত হয়নি। ২০১১ সালের ২৯ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধন হয়। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ চার নির্বাচন কমিশনার নিয়ে সর্বোচ্চ পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠনের বিধান যুক্ত হয়। এর আগে কমিশনের সদস্যসংখ্যা নির্দিষ্ট ছিল না। 

সার্চ কমিটির কাজ

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য বিভিন্ন সেক্টরের যোগ্য ব্যক্তিদের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব করাই সার্চ কমিটির কাজ। চার জন নির্বাচন কমিশনারের বিপরীতে আট জনের এবং এক জন সিইসির বিপরীতে দুই জনের নাম সুপারিশ করে থাকে সার্চ কমিটি। সার্চ কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালনকারী মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব। রাষ্ট্রপতি কমিটি গঠনের পর সাধারণত সুপ্রিমকোর্টের সম্মেলনকক্ষে কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ১০ কার্যদিবসের মতো সময় পায় সার্চ কমিটি। সার্চ কমিটি নির্বাচন কমিশন ঠিক করে দেবে না, তারা রাষ্ট্রপতিকে সহায়তা করতে কিছু নাম বাছাই করে দেবে। রাষ্ট্রপতি তা থেকে নিয়োগ দেবেন।

 

ইত্তেফাক/জেডএইচডি