মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ব্যাটারিচালিত রিকশার নেপথ্যে কে

আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৭:০২

রাজধানীর সড়ক-মহাসড়ক ও অলিগলিতে চলমান  ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।  অভিযানের প্রথম দিন  চলতি বছরের ২ জানুয়ারি ১৫টি ব্যাটারিচালিত রিকশা জব্দ করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এই প্রসঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালতে নেতৃত্ব দেওয়া ডিএসসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুস ছামাদ শিকদার বলেন, ‘হাইকোর্ট থেকে এসব অটোরিকশা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবু কিছু কিছু অসাধু ব্যক্তি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ব্যবসা অব্যাহত রেখেছেন। আমরা এসব অবৈধ যানগুলোর বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছি।’

এর আগে, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর দুপুরে নগর ভবনে ডিএসসিসি’র দ্বিতীয় পরিষদের একাদশতম বোর্ড সভায়  মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘আগামী বছর থেকে অবৈধ রিকশা, অনুমোদনহীন রিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান আরম্ভ করবো।’

এরই ধারাবাহিকতায়, ব্যাটারিচালিত অবৈধ অটোরিকশা বন্ধে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।

ব্যাটারিচালিত অবৈধ রিকশা ও অটোরিকশা বন্ধ বিষয়ে ডিএসসিসি’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুস ছামাদ শিকদার ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, ‘রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মাত্রা খুব বেশি বেড়ে গেছে। তাদের কারণে সড়কে অনেক দুর্ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত।  আমরা এসব অবৈধ যানবাহনগুলো বন্ধ নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবো।’

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা (ছবি: ইত্তেফাক)

গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর অ্যাসিড ব্যাটারিচালিত ৪০ লাখ ইজিবাইক বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এগুলো আমদানি ও ক্রয়-বিক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। বিচারপতি মামনুন রহমানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আতিক তৌহিদুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত। গত ১৩ ডিসেম্বর বাঘ ইকো মোটরস লিমিটেডের সভাপতি কাজী জসিমুল ইসলামের পক্ষে হাইকোর্টে রিটটি করা হয়। রিটে শিল্প সচিব, সড়ক পরিবহন সচিব, পরিবেশ সচিবসহ ৭ জনকে রিটে বিবাদী করা হয়।

 এই প্রসঙ্গে আইনজীবী আতিক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ইজিবাইকগুলোতে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে ব্যাটারি চার্জ দেওয়া হয়। এই ইজিবাইকগুলো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া, ইজিবাইকগুলো রুট পারমিট ছাড়াই রাস্তায় চলাচল করছে। এই ইজিবাইকের বিদ্যুৎ খাত থেকে সরকার কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না। এ কারণে সারাদেশে চলা অবৈধ ইজিবাইক বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে আমরা হাইকোর্টে রিট করি।’

আইনজীবী আতিক তৌহিদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘রিটের শুনানি নিয়ে আজকে আদালত ব্যাটারিচালিত অবৈধ ইজিবাইক জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এগুলো আমদানি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। অবৈধ ইজিবাইক আমদানি থেকে বিরত থাকতে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, এই মর্মে রুল জারি করা হয়েছে।’

এর আগে, ২০১৭ সালে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশনা উপেক্ষা করে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশকে ম্যানেজ করে বিভিন্ন অলিতে-গলিতে এখনো চলছে এসব ব্যাটারিচালিত রিকশা। আর এসব অটোরিকশায় চড়ে প্রায় দুর্ঘটনার শিকার হয়ে সারাজীবনের জন্য কেউ হচ্ছেন পঙ্গু, কেউ হারাচ্ছেন প্রাণ।

সচেতন যাত্রীমহলের অভিযোগ, পুলিশ, ট্রাফিক বা হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার কারণে এসব যানবাহন গলি থেকে শুরু করে সড়ক-মহাসড়কে চলছে। তারা বলছেন, সড়ক-মহাসড়ককে ৩ চাকার বাহন মুক্ত রাখতে হলে কঠোর নজরদারির দরকার। এদিকে হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশ বলছে, দায়িত্বে কোনো অবহেলা নেই। বেশিরভাগ সময় চালকরা পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে মহাসড়কে গাড়ি চালান।

ব্যাটারিচালিত রিকশা (ছবি: ইত্তেফাক)

রিকশা-শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মহামারিতে মানুষ তার রুটি-রুজির বন্দোবস্ত করতে হিমশিম খাচ্ছে। এর মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা বাতিলের মাধ্যমে নতুন করে লাখ লাখ মানুষের জীবিকা বিপদের সম্মুখীন করা হয়েছে। সরকার ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখতে গিয়ে শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। শোনা যাচ্ছে, বিদেশ থেকে নতুন ধরনের রিকশা আমদানির প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার এবং এ কারণেই ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বাতিল করা হয়েছে। অবিলম্বে সরকারকে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে।’

সরেজমিনে রাজধানীর মুগদা, মান্ডা, বাসাবো, হাজারীবাগ, জিগাতলা, কামরাঙ্গীরচর, দক্ষিণখান, মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, বাড্ডা, জুরাইন, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, শনির আখড়া, ডেমরা, বাসাবো ও মাদারটেকসহ রাজধানীর ছোট বড় প্রায় ৫০টি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রত্যেক এলাকায়ই ব্যাটারিচালিত রিকশার উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। বিভিন্ন এলাকার রিকশাচালক ও মালিকদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, এই করপোরেশনে প্যাডেলচালিত রিকশার সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ। এর মধ্যে অনুমোদিত প্যাডেলচালিত রিকশার সংখ্যার ২ লাখ ১৩ হাজার। 

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, এই করপোরেশনে প্যাডেলচালিত রিকশার সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। এর মদ্ধে অনুমোদিত প্যাডেলচালিত রিকশার সংখ্যা প্রায় ২৮ হাজার।

ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা উচ্ছেদ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, ‘সারাদেশে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও  রিকশার সংখ্যা  প্রায় ২০ লাখ। এর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগামে সর্বাধিক। আমারা প্রায় একযুগ ধরে দাবি জানিয়ে আসছি, ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ সব ধরনের অবৈধ ও ঝঁকিপূর্ণ যানবাহন বন্ধ হবে।  মনে রাখতে হবে, মানুষের জীবিকা আগে, না জীবন আগে। সারাদেশে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করে গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ানো হোক। ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়ানোকে নিরউৎসাহিত করা উচিত।

ইত্তেফাক/এনই