বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মানুষ কেন বাঘের শিকার? 

আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০২২, ০২:৪৮

মানুষের বসবাসের স্থানে বাঘ বা সাপ ঢুকে পড়লে মানুষ মোটেই তাদেরকে আপ্যায়ন করে না। বরং বাঘ ও সাপ দেখতে পাওয়ামাত্রই তাদেরকে পিটিয়ে মারে। কেউবা ভয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। বাঘও তাদের এলাকায় মানুষ পেলে আক্রমণ করবে, এমনকি খাবার হিসেবে দেখবে—সেটাই স্বাভাবিক। 

মানুষ ক্রমে ক্রমে বাঘের আশ্রয়স্থল জঙ্গল কেটেকুটে সাফ করে দখল নিয়ে বাড়িঘর আর চাষাবাদের জমি বাড়াচ্ছে। আবার কি না সুন্দরবনে ঢুকে মানুষ কত কী করছে। কাঁকড়া, মধু ও কাঠ সংগ্রহ করার জন্য বাঘের এলাকায় ঢুকে পড়ছে মানুষ। তাই মানুষ তার স্বভাবদোষে আক্রান্ত হচ্ছে। কয়েকটা মোষ নিয়ে ঢুকে বাঘের সামনে দিলে তো মানুষ বাঘের আক্রমণের শিকার হয় না। 

বাঘের কী দোষ? মানুষ যায় কেন বাঘের আশ্রয়স্থলে? বাঘ তো মানুষ খাবেই— তার খাবারের একটি হলো মানুষ। মানুষ কেন জেনেশুনে ঢুকে যায় সুন্দরবনে? বাঘের খাবার সংগ্রহের প্রধান অস্ত্র তার গতি ও শক্তি। বয়স বাড়লে সেই সময় বাঘের সামর্থ্য কমে, গতি মন্থর হয়। খাবার হিসেবে বাঘের পছন্দ হরিণ, মোষ। সেগুলো শিকার করতে গেলে যে শক্তি ও গতির প্রয়োজন, তা বয়সের কারণে হারিয়ে ফেলে। তখন অন্য প্রাণীর তুলনায় মানুষ শিকার সহজ হয়। জখম বাঘের ক্ষেত্রেও এটা সত্য।

সজারুর কাঁটায় জখম হওয়ার ঘটনা বাঘের ক্ষেত্রে ঘটে প্রায়ই। তাছাড়া মানুষের রক্তের নোনা স্বাদও নাকি বাঘের খুব প্রিয়। শিকারিদের মধ্যে এ নিয়ে নানা গল্প চালু আছে, খাবার না পেলেই বাঘ জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে আসে। কেননা খাদ্য-খাদক সম্পর্ক এখানে। তাই সুন্দরবনে মানুষের সঙ্গে বাঘের লড়াই থাকবেই। 

মানুষ জঙ্গল সাফ করছে, আবার বাঘের আশ্রয়স্থলে ঢুকছে! দোষটা কি মানুষের নয়? সার্ভাইভ্যাল অফ দ্য ফিটেস্ট-এর তত্ত্ব তা-ই বলে। ইয়ান মার্টেলের উপন্যাস অবলম্বনে বিখ্যাত হলিউড মুভি ‘লাইফ অফ পাই’ যারা দেখেছেন, তারা জানেন— ভয়ানক রয়াল বেঙ্গল টাইগারকে মাঝ-সমুদ্রে মাছ খাইয়ে খাইয়ে কীভাবে পোষ মানিয়েছিল পাই। পেটে খাবার থাকলে মানুষ খাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয় না বাঘ। তাই সুন্দরবনের বাঘেদের পেট ভরানোর ব্যবস্থা জরুরি। বন দপ্তরকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, মাছ কাঁকড়া মধু ইত্যাদি সংগ্রহকারীদের জঙ্গলে যেতে হলে কয়েকটি মোষ সঙ্গে নিয়ে যেতে বাধ্যবাধকতা দরকার। 

ইত্তেফাক/এসজেড

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন