শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শীতে কাঁপছে উত্তরাঞ্চল বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ

আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২২, ০৬:১৩

উত্তরের জনপদে আবারো জেঁকে বসেছে শীত। তীব্র ঠাণ্ডায় স্থবির হয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চল। ঠাণ্ডাজনিত রোগও বেড়েছে। বুধবার (১৯ জানুয়ারি) দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আমাদের প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর :

দিনাজপুর: তীব্র ঠাণ্ডায় কাহিল হয়ে পড়েছে এই অঞ্চলের মানুষ। শীতে স্থবির হয়ে পড়েছে দিনাজপুরসহ এই জনপদের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। 

দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, বুধবার দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিনি আরও বলেন, দিনাজপুরসহ এই অঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। ঘণ্টায় ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার গতিতে ধাবিত হচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। তবে ঘন কুয়াশার কারণে বৃহস্পতিবার থেকে রাতের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে। কিন্তু দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর): ফুলবাড়ীতে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। মধ্যরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে জনপদ। খেটে খাওয়া মানুষের বেড়েছে কষ্ট। বৃদ্ধ ও শিশুদের ডায়রিয়াসহ ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগ দেখা দিয়েছে। এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলাচল করছে যানবাহন। শীতে কাতর মানুষেরা খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। এদিকে, শীতকালীন ফসল সরিষা, গম, আলু, বেগুন, পেঁয়াজ, মরিচ ও বোরো ধানের বীজতলা শীত বা কুয়াশা থেকে রক্ষা করতে মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়ার কথা জানায় উপজেলা কৃষি বিভাগ। ফুলবাড়ী পৌরশহরের রিকশাচালক হবিবুর রহমান ও তরণী কান্ত রায় বলেন, কয়েক দিন থেকে ঠাণ্ডার কারণে সকাল সকাল দোকানপাট খুলছে না। যেখানে দুপুরের আগে আমরা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা আয় করি, সেখানে এখন দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ৫০ টাকাও আয় হয়নি। 

ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন জানান, উপজেলায় তালিকা করে অসহায় মানুষদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে।

পাটগ্রাম (লালমনিরহাট): পাটগ্রাম উপজেলায় তীব্র শীতে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। গত দুই সপ্তাহে ঠাণ্ডাজনিত রোগে শিশু ও বয়স্কদের আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় রাস্তাঘাট ঢেকে যাওয়ায় হাট-বাজারে লোকের সমাগম কমেছে। খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। দেখা গেছে, গত কয়েক দিনে সকাল প্রায় ১০টা পর্যন্ত কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকে রাস্তাঘাট। দুপরের পর সূর্যের দেখা মিললেও বিকেল থেকে হিমেল হাওয়া এবং সন্ধ্যায় শুরু হয় কনকনে শীত। মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতে পাটগ্রাম উপজেলার পৌরসভার বাঁধের পাড়, মাস্টারপাড়া, পূর্বপাড়া, সাহেব ডাঙ্গা, রেল স্টেশনপাড়া, বেংকান্দা, সোহাগপুর, ইউনিয়নের মধ্যে জগত্বেড়, পাটগ্রাম, দহগ্রাম ও জোংড়া ইউনিয়নের দরিদ্র শ্রেণির মানুষদের কষ্ট বেড়েছে অধিক হারে। অপর দিকে ঘন কুয়াশা এবং হিমেল হাওয়ার কারণে কৃষকরা কৃষি খেতে কাজ করতে পারছে না। একই সঙ্গে ভুট্টাখেত এবং বোরো বীজতলার ক্ষতি হচ্ছে। 
পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচঅ্যান্ডএফপিও) ডা. সাইফুল ইসলাম জানান, শীত বৃদ্ধি পাওয়ায় ঠাণ্ডাজনিত রোগীর হারও বেড়েছে। শীতে শিশু ও বৃদ্ধরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয় বেশি। চলতি জানুয়ারি মাসের শুরু থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত ৭৩ জন শিশু ডায়রিয়ার পাশাপাশি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় এবং ১০ জনের অধিক বয়স্ক ব্যক্তি ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। এখনও অনেকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ইত্তেফাক/এমএএম