জাগরণের বিষ
নাসরীন জাহান
বিছানায় ঘুমাতে গিয়ে তুমি জাগরণের খাদে
পড়ে যাও রোজ রাতে।
আর নখহীন আঙুলে ভেজাসাবানের মতো
মাটি খামচে যত ওপরে ওঠার চেষ্টা,
প্রহর ঝিমাতে ঝিমাতে হাঁটে,
একসময় তুমুল ক্লান্তি আর অবসাদ নিয়ে
চিত হয়ে তুমি ধীরে ধীরে
ঘুমের গুহার মধ্যে ঢুকে যেতে থাকো।
ফের শূন্যলোক তোমার পিঠ খামচে
সোজা, টেনে দাঁড় করায়।
এভাবে ভেতর ভেতর রোজ সৃষ্ট তুমি,
রোজ মরুভূমি।
যেন সাইবেরিয়ান পাখি, এভাবে কেউ কেউ
তোমার জীবনে এসেছিল,
ডেকেছিল কুহক আর জেগে থাকা ভ্রমেরা
টুকরো টুকরো মুক্তোগুলো
হরিদ্রাভ টাইলসের ওপর,
যে যত জাগ্রত,
তার অপমান ততোই নিদ্রাহীন।
একসময় তুমি আগুনের ভেতর ঢুকে পড়ো,
তখন বাতাস তোমাকে ছুঁয়ে ফেলে,
দেখা যায়, আকাশ চরাচরে একটা ফানুস উড়ছে।
বকুলের ডালের মতো
চৌধুরী ফেরদৌস
বকুলের ডালের মতো আমার মাথার পরে
কী-রকম ছড়িয়ে রেখেছ তুমি হাত!
শাখা ও প্রশাখা: আঙুল,
চুলগুলো: পাতা একঝাঁক...
ধ্যানমগ্ন সন্ধ্যায়
পাতার আঁধার থেকে তুমি চেয়ে আছ
যেন কোনো পোড়ো মন্দির,
পূজালয়, মরা দিঘি, বুনো গাছপালা,
খসা-ধসা স্যাঁদলাধরা ইট:
অজ্ঞাত বছর আগে
ধংসপ্রাপ্ত সভ্যতার অবশিষ্ট ভিত।
বকুলের ডালের মতো
কালচে আর খয়েরি আর পীত:
তোমার ভগ্ন-অভগ্ন বাহু শ্যামল কিঞ্চিৎ
কোথাও ডাকছে না পাখি, সরছে না হাওয়া,
নড়ছে না পাতা, নীরব-নিথর সরীসৃপ...
শুধু তুমি চেয়ে আছ
আমার চোখের পরে, অপলক:
হাজার বছর ধরে অনির্বাণ মঙ্গলদ্বীপ!
ফকফকে আঁধারে
জহুরুল ইসলাম
গাছের পাতায় ঝুলে আছে ফকফকে রাত,
শিশিরের সাথে সারা রাত মিতালি।
রাতজাগা পাখি জানালায় উঁকি মারে,
আকাশের জানালায়।
ভিতর বাহিরে রূপালি আগুন,
শিশিরের মতো সুখ আসে হৃদয়ে।
ফকফকে আঁধারে
রাতের কোলাহল থেমে গেলে
রূপালি রাতে আগুন পোহাই
আগুনের ঠোঁট যেন পাকা ডালিমের দানা।