শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শাবিতে প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবি যেভাবে অনশনে গড়ালো

আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ২০:২৭

অবশেষে অনশন ভাঙলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আন্দোলনকারী ২৮ শিক্ষার্থী। ‘আমরণ অনশনে’ বসার ১৬২ ঘণ্টা পর বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টা ২১ মিনিটে  হামিদা আব্বাসীকে পানি পান করিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অনশন ভাঙান সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ ড. জাফর ইকবাল।

এর আগে,  উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে গত বুধবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুর ২টায় অনশনে বসেন শিক্ষার্থীরা৷ তীব্র শীতে না খেয়ে থেকে অনেকেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তবু উপাচার্য পদত্যাগ না করলে অনশন ভাঙবেন না—এমন সিদ্ধান্তে তারা অটল ছিলেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের থেকেও অনেকেই বারবার চেষ্টা করে অনশনরতদের  সিদ্ধান্ত থেকে টলাতে পারেননি। এতে প্রাণহানিরও আশঙ্কা দেখা দেয়। অনশন ভাঙায় এবার কিছুটা স্বস্তিতে সবাই। তবে এখনো উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

যেভাবে শুরু এই আন্দোলন: 
১৩ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার। রাত ৮টার দিকে শাবির বেগম সিরাজুন্নেসা হলের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আবাসিক ছাত্রীরা রিডিং রুমে আলোচনায় বসেন। আলোচনা শেষে হল প্রভোস্ট ও সহযোগী অধ্যাপক জাফরিন আহমেদ লিজাকে ফোনে কল করে তাদের দাবিদাওয়া জানাতে চান। মূলত হলের সিট, খাবার, ইন্টারনেট সংযোগ, পানি সহ নানবিধ বিষয়ে ছাত্রীদের অভিযোগ ছিল। এ সময় তারা প্রভোস্টকে হলে আসতে বললে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করেছেন। 

প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার রাত ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের বাসভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করেন ওই হলের কয়েকশ' ছাত্রী। এ সময় উপাচার্য বাসভবন থেকে বেরিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলে ছাত্রীরা হলে ফিরে যান। শুক্রবার উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনার পর সমাধান না পেয়ে ফের বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।

ছাত্রীদের দাবি পূরণ না হওয়ায় বিক্ষোভ গড়ায় ১৫ জানুয়ারি শনিবারে। এ দিন সন্ধ্যায় আন্দোলনে সংহতি জানাতে যাওয়া ১০-১২ জন শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর করে  হামলাকারীরা । হামলাকারীদের হাত থেকে তাদের বাঁচাতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হন আন্দোলনরত কয়েকজন ছাত্রী। এতে পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। এ ঘটনার পরপরই প্রতিবাদ জানিয়ে ক্যাম্পাসের গোলচত্বর থেকে একটি মশাল মিছিল বের করেন তারা। পরদিনের সব ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।


উপাচার্য অবরুদ্ধ, পুলিশ-শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ:

ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে রবিবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। ৩ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। ৩ দফা দাবির মধ্যে ছিল প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগ, হলের যাবতীয় অব্যবস্থাপনা দূর করে হলের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, অবিলম্বে দায়িত্বশীল প্রভোস্ট কমিটি নিয়োগ দেওয়া। রবিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. তুলসী কুমার দাস আন্দোলনকারী ছাত্রীদের কাছে এক সপ্তাহ সময় চান। কিন্তু ছাত্রীরা তা প্রত্যাখ্যান করেন। এছাড়া, প্রশাসনের সামনে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার বিচার চান তারা।
ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া ভবনে অবরুদ্ধ উপাচার্য। ছবি: ইত্তেফাক

এক পর্যায়ে অধ্যাপক তুলসী কুমার দাসসহ প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তারা কোনো সিদ্ধান্ত না জানিয়ে স্থান ত্যাগ করলে আন্দোলনকারী ছাত্রীরাও তাদের অনুসরণ করে স্লোগান দিতে দিতে এগোতে থাকেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবন থেকে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বের হলে আন্দোলনকারী ছাত্রীরা তার পথরোধ করেন। পরে তিনি আইসিটি বিল্ডিংয়ে অবস্থান নিলে ছাত্রীরা তাকে ওই ভবনের ৩৩৩ নম্বর রুমে অবরুদ্ধ করে রাখেন। আন্দোলনের মুখে সিরাজুন্নেসা হলে নতুন প্রভোস্ট হিসেবে অধ্যাপক ড. নাজিয়া চৌধুরীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

অন্যদিকে,  অবরুদ্ধ উপাচার্যকে মুক্ত করতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সন্ধ্যায় পুলিশের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ রাবার বুলেট ছোড়ে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী মিলে  প্রায় অর্ধশত আহত হন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় সোমবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেন উপাচার্য। বন্ধ ঘোষণা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়।


এবার উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ শুরু:
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর রবিবার (১৬ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে 'প্রতিবাদ মিছিল' বের করেন। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের নির্দেশ উপেক্ষা করে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে শাবি ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন তারা। সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের গোলচত্বরে আন্দোলন শুরু করেন। পরে উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। এসময় তারা শিক্ষকদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টার ত্যাগ করতেও অনুরোধ করেন। একমাত্র দাবি হিসেবে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগ দাবি জানিয়ে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এ আন্দোলন।


রাষ্ট্রপতির উদ্দেশ্যে শাবি শিক্ষার্থীদের খোলা চিঠি:

সোমবার (১৭ জানুয়ারি) রাত ১১টার দিকে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আব্দুল হামিদের প্রতি খোলা চিঠি দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে অপসারণের দাবিতে তারা এ চিঠি লেখেন।

চিঠিটিতে তারা বলেন, 'নিরাপদ আবাসন পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরস্থ বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের আবাসিক ছাত্রী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বিনা উসকানিতে সুপরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে পুলিশের হামলার ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশের জনগণের টাকায় ক্রয়কৃত আধুনিক অস্ত্রসজ্জিত পুলিশের নির্বিচার লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডের হামলার শিকার হন নিরস্ত্র শিক্ষার্থীরা।'
রাষ্ট্রপতির উদ্দেশে লেখা চিঠি পাঠ করছেন আন্দোলনকারী দুই শিক্ষার্থী। ছবি: ইত্তেফাক

চিঠিতে আরও বলা হয়, 'ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক পুলিশ ডেকে এনে শিক্ষার্থীদের ওপর এমন নৃশংস হামলার ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। দাবি না মেনে উল্টো পুলিশি হামলায় শিক্ষার্থীদের মৃত্যুঝুঁকিতে ফেলার ঘটনায় উপাচার্য যেভাবে মূল কুশীলবের ভূমিকা পালন করেছেন, তা সরাসরি সংবিধানবিরোধী।  রাষ্ট্রপতির কর্তৃক ফরিদ উদ্দিন আহমদের ওপর অর্পিত দ্বায়িত্বের সরাসরি বরখেলাপ। ফরিদ উদ্দিন আহমদ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের দ্বায়িত্ব পালনের সব নৈতিক, যৌক্তিক ও সাংবিধানিক যোগ্যতা হারিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান হিসেবে আপনার কাছে রাষ্ট্রতির কাছে আবেদন, আপনার সরাসরি হস্তক্ষেপে উপাচার্যের পদত্যাগ নিশ্চিত করে, একজন সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিকে উপাচার্য হিসেবে অতিসত্ত্বর নিয়োগ দিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে উদ্যোগ নিন।'

সোমবার (১৭ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টার দিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেনের প্রতিনিধি পরিচয়ে গাড়ি নিয়ে ড্রাইভারসহ তিনজন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাসে যেতে দেন। তখন একজন নিজেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পিএ পরিচয় দিয়ে বলেন, শাবির ঘটনায় তিনি (পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন) দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক। সার্বিক পরিস্থিতির আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


৩০০ জনের বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা:
সোমবার (১৭ জানুয়ারি) রাতে জালালাবাদ থানার উপ-পরিদর্শক মো. আব্দুল হান্নান বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৩০০ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেবে না বলে জানান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে শাবি ক্যাম্পাসে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে শিক্ষামন্ত্রীর বরাত দিয়ে শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল আরও বলেন, ‘আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী বহন করবেন বলে আমাকে জানিয়েছেন।’

মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা মামলা প্রত্যাহারের আল্টিমেটাম দেন। এসময় তারা আরো বলেন, রাত ১০টার মধ্যে মামলা প্রত্যাহার না হলে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবো। পরে, উপাচার্য পদত্যাগ না করলে আমরণ অনশনে থাকার ঘোষণা দিয়ে তারা উপাচার্যকে বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময় বেধে দেন।


শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাঝেই শিক্ষকদের একাংশের মানবন্ধন:
শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের মাঝেই শিক্ষকদের একাংশ বুধবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে এক মানববন্ধন করেন। শিক্ষকদের সম্পর্কে সামাজিক যোগাযগমাধ্যমে অশালীন মন্তব্য করা হচ্ছে, এমন দাবি করে শাবির অধ্যাপক ড. লায়লা আশরাফুন বলেন, আমরা সম্মানটুকুর জন্যই শিক্ষকতা পেশায় এসেছি। আমরা বুদ্ধিজীবী শ্রেণিতে বিলং করি (অন্তর্ভুক্ত)। আমরা কোনো চাষাভুষা নই যে আমাদের যা খুশি তাই বলবে।
শিক্ষকদের মানববন্ধনে অধ্যাপক ড. লায়লা আশরাফুন

তবে, শিক্ষকদের এসব দাবি নাকচ করে আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা আন্দোলনকারীরা শিক্ষকদের নিয়ে এসব লেখা কোথাও লিখছি না। হতে পারে, তাদের মধ্যে থেকে এসব করা হচ্ছে যেন  আমাদের ন্যায্য দাবির আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়া যায়। তবে সত্যিই এ ধরনের কাজ কেউ করে থাকলে আমরা আন্দোলনকারীরা তার তীব্র নিন্দা জানাই। সেটি মোটেও আন্দোলনের অংশ নয়।


শাবি উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষার্থীদের অনশন:

পূর্বঘোষিত আল্টিমেটাম অনুযায়ী উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ পদত্যাগ না করায় বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে অনশনে বসেন আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে ২৪ জন। এদের মধ্যে ১৫ জন ছাত্র ও ৯ জন ছাত্রী অংশ নেন। উপাচার্যের বাসভবনের সামনে তারা এই কর্মসূচি শুরু করেন। এতে বাসভবনে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন উপাচার্য।
শাবি শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন কর্মসূচি। ছবি: ইত্তেফাক

বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শাবি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে ২০-৩০ জন  শিক্ষকের একটি প্রতিনিধি দল আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন। এ সময় তারা বলেন, ‘আমরা তোমাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্য সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। এ ক্যাম্পাসে যেন আর এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, আমরা সে পরিবেশ নিশ্চিত করবো। আমরা এ ব্যাপারে আলোচনা করে সমাধানে যেতে চাই।’

এ সময় শিক্ষার্থীরা শাবি কোষাধ্যক্ষের আলোচনার বিষয়টিকে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, 'স্যার এখন আর আলোচনার কোনো পথ খোলা নেই। আমরা যখন আলোচনার জন্য বসে ছিলাম তখন আপনারা আসেননি।  এখন আমাদের একটাই দাবি, যে ভিসি গুলি করার অনুমতি দেন, তিনি আর ভিসি থাকার অধিকার রাখেন না। গুলিতে যারা আহত হয়েছেন, তাদের কেউ মারা যেতে পারতেন। ভিসিকে তখন আমরা অ্যাটেম্পট টু মার্ডারের আসামি করতাম। সে হিসেবে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ আর আমাদের ভিসি থাকার অধিকার রাখেন না।'

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, আমরা এখন আর সহমর্মিতা চাই না। আমরা আপনাদের একাত্মতা চাই, স্যার।'


আন্দোলনের স্লোগান 'আমরা সবাই সাস্টিয়ান, চাষাভুষার সন্তান':

অধ্যাপক ড. লায়লা আশরাফুনের মন্তব্য (আমরা কোনো চাষাভুষা নই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর উল্টো তা নিয়ে তুমুল প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই এ নিয়ে বিদ্রূপাত্মক মন্তব্য করেন। এই মন্তব্যের পাল্টা জবাব হিসেবে আন্দোলনকারীরা নতুন স্লোগান দেন। শাবি ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরের গোলচত্বর বাসস্ট্যান্ডের যাত্রী ছাউনিতে লেখা হয়, 'আমরা সবাই সাস্টিয়ান, চাষাভুষার সন্তান'। এরপর এটি আন্দোলনের নতুন স্লোগানে রূপ নেয়।

Amra-Sustian
বৃহস্পতিবার দিনভর উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আন্দোলন ও অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের মুখে এই স্লোগান শোনা গেছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা ১০ মিনিটের দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দিক প্রদক্ষিণ করে একই জায়গায় এসে শেষ হয়। মশাল মিছিলে প্রায় পাঁচশ শিক্ষার্থী অংশ নেন। এসময় তারা 'যে ভিসি মানুষ মারে, সে ভিসি চাই না',  'চাষাভুষার সন্তান, আমরা সবাই সাস্টিয়ান' সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।


অনশনরতরা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে:

অনশন কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে ১১ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। উপাচার্যের বাসভবনের সামনে খোলা আকাশের নিচে পাকা সড়কের ওপর মাঘের তীব্র শীতে না খেয়ে থেকে তারা দুর্বল হয়ে পড়েন। পরে তাদেরকে হাসপাতালে নেয়া হয়। উপাচার্যের বাসভবনের সামনে সাত অনশনকারীকে ক্যানোলার মাধ্যমে লিকুইড স্যালাইন ও ভিটামিন সাপ্লিমেন্টারি দেওয়া হয়।
টানা অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়েন তারা। ছবি: ইত্তেফাক
এদিকে লাগাতার আন্দোলনে কার্যত অচল হয়ে পড়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা। শুধু শ্রেণিকক্ষ নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো প্রশাসনিক কাঠামোই যেন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। বিভিন্ন দফতর ও বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মধ্যে দেখা দেয় অন্তর্দ্বন্দ্ব। অনেকেই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে বিপরীতমুখী অবস্থান নেন।


শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা:
শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের মধ্যস্থতায় শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্তে আসেন আন্দোলনকারীরা। এসময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা শাবি শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করেন। সংকট নিরসনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে অনলাইনে আলোচনায় বসতে চান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার রাতে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে এ বিষয়টি সাংবাদিকদের জানানো হয়।
কাফনের কাপড় পরে মিছিল। ছবি: ইত্তেফাক

এদিকে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে শনিবার (২২ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর থেকে কাফনের কাপড় পরে মৌন মিছিল বের করেন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। এ সময় প্রতীকী লাশ কাঁধে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করেন  এবং পরে একই স্থানে এসে প্রতীকী লাশ সামনে রেখে শিক্ষার্থীরা কয়েক মিনিট অবস্থান করেন। 'অনশনে কারোর মৃত্যু হলেও আন্দোলন থামবে না', এমন বার্তা দিতে চান তারা। এদিন রাতেই শাবি শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনায় বসেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। আলোচনা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙার আহবান জানান।

শনিবার (২২ জানুয়ারি) রাত ১২টার দিকে শাবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অনলাইনে বৈঠকে বসেন শিক্ষামন্ত্রী।  এই বৈঠকের পর আওয়ামী লীগ নেতা শফিউল আলম নাদেল জানান, যেসব শিক্ষার্থী আন্দোলনে যুক্ত সেসব শিক্ষার্থীর যে কোনো সমস্যা দেখবেন বলে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন। তিনি জানান, লিখিতভাবে সব দাবি-দাওয়া জমা দিলে সেসব সমস্যা সমাধানে শিক্ষামন্ত্রীর সহযোগিতা থাকবে। তবে শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠকে উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।


উপচার্যের পদত্যাগের ব্যাপারে সরকারকে অনুরোধ শাবি শিক্ষক সমিতির: 
রবিবার (২৩ জানুয়ারি) রাত ৮ টা ২০ মিনিটের দিকে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. তুলসী কুমার দাস ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ মহিবুল আলম এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেন। এতে উপচার্যের পদত্যাগের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে সরকারকে অনুরোধ জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের উপর বর্বোরচিত পুলিশি হামলার ঘটনায় সরকার কর্তৃক নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নিতে হবে। অনশনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে যা দরকার অনতিবিলম্বে তা করতে হবে।


উপাচার্যের বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন:
রবিবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। এই সময় তারা ঘোষণা দেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাড়া উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তারা উপাচার্যের বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। রবিবার সন্ধ্যায় অনশনের ১০০ ঘণ্টা পার হয়। তবু কোনো সমাধান না হওয়ায় তারা সন্ধ্যায় মশাল মিছিল বের করেন। বুধবার অনশনে বসা ২৩ জনের সঙ্গে নতুন করে আরও পাঁচজন যোগ দেন। তবে উপাচার্যের বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়টির তীব্র নিন্দা জানান আওয়ামী লীগ নেতারা। পরবর্তীতে পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন করা হয়।


শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে সংসদে আলোচনা:
উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে শাবিতে চলা আন্দোলন নিয়ে জাতীয় সংসদেও আলোচনা হয়। জাতীয় পার্টির দুই সদস্য তাদের বক্তব্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। শাবির আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে ঢাবি, জাবি, জবি, চবি, রাবি, বশেমুরবিপ্রবি সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন। এছাড়া ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট সহ ছাত্রসংগঠনগুলোও শাবির ঘটনায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠনগুলো থেকেও দেওয়া হয় বিবৃতি। 


আন্দোলনে আর্থিক সহায়তা করায় শাবির সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থী আটক:
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আটক হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের গ্রেফতার করে সিলেটের জালালাবাদ থানার এক মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়। মামলায় পুলিশি কাজে বাধা দান এবং আন্দোলনে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ করা হয়।


শাবিতে জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হক: 
মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) রাত ১১টার দিকে আন্দোলনকারীরা জানান, ক্যাম্পাসে আসছেন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। ভোর ৪টায় শাবিতে পৌঁছে সেখানে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেন তিনি। আন্দোলনকারীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে তিনি অনশনরতদের অনশন ভাঙতে অনুরোধ করেন।  এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মামলা দিয়ে হয়রানি না করার জন্য আইনশৃঙ্খলারা বাহিনীর প্রতি আহবান জানান তিনি।

বুধবার ভোরে শাবি ক্যাম্পাসে আসেন ড. জাফর ইকবাল ও ড. ইয়াসমিন হক। ছবি: ইত্তেফাক
ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী ড. ইয়াসমিন হকের অনুরোধে বুধবার ভোর ৫টার দিকে অনশন ভাঙার ব্যাপারে সম্মত হন শিক্ষার্থীরা। 'আমরণ অনশনে' বসার ১৬২ ঘণ্টা পর বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টা ২১ মিনিটে হামিদা আব্বাসী নামের এক অনশনরত শিক্ষার্থীকে পানি পান করিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অনশন ভাঙান ড. জাফর ইকবাল। 

সংবাদ সম্মেলনে জাফর ইকবাল বলেন, ‘তোমরা টের পাচ্ছো না তোমরা কী করেছ। দেশের ৩৪টা ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর বলেছেন যে, এই ইউনিভার্সিটির ভিসি যদি পদত্যাগ করেন, তাহলে তারা সবাই পদত্যাগ করবেন। এটা দেখার খুবই শখ আমার।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এরকম ভাইস-চ্যান্সেলররা আছেন, যাদের আদর্শ এত বেশি যে তারা অন্যকে সহমর্মিতা দেখিয়ে  নিজেরা পদত্যাগ করবেন। কিন্তু আমার মনে হয় না আমার এ আশা সহজে মিটবে। তোমরা বড় ধরনের নাড়া দিয়েছ। এখন কাউকে কোথাও ভিসি পদে বসানো হলে  তার যোগ্যতা নিয়ে সবাই চুলচেরা বিশ্লেষণ করবে। তোমরা যেটা করেছ তার তুলনা নেই। এই আন্দোলনে  বাংলাদেশের প্রত্যেকটা যুবক ছেলেমেয়ে তোমাদের সঙ্গে আছে।’
ড. জাফর ইকবাল এক শিক্ষার্থীকে পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙাচ্ছেন। ছবি: আব্দুল বাতিন ফয়সাল/ইত্তেফাক

তবে 'আমরণ অনশন'-এর ইতি ঘটলেও, উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে জানিয়েছেন মীর রানা।


আন্দোলনে সংহতি ও অনশন ভাঙাতে জাফর ইকবালের উপস্থিতি প্রসঙ্গে যা বলছেন অন্যরা: 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম বলেছেন, ‘উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থীদের প্রথমে পুলিশ, ছাত্রলীগ দিয়ে পেটানো হলো, রক্তাক্ত করা হলো, খাবার বন্ধ করে দেওয়া হলো, মেডিক্লযা সাপোর্ট বন্ধ করে দেওয়া হলো, গণচাঁদাকে ক্রিমিনালাইজ করে সাবেক ৫  ছাত্রকে থানায় সোপর্দ করা হলো—এত এত অন্যায় দেখেও অধ্যাপক জাফর ইকবাল নীরব ছিলেন, যেটি বেদনাদায়ক ছিল। অন্তত তিনি শেষ সময়ে হলেও শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙিয়েছেন এটি স্বস্তির। এখন শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে অন্তত একজন হলেও তিনি যদি তাদের সঙ্গে থাকেন তাহলে ভালো। তবে এ আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা যে নৈতিকভাবে প্রজ্ঞা, সাহস, ধৈর্য্য রেখেছেন, সেটা অনুসরণীয়।’

সাংবাদিক ও উন্নয়নকর্মী শরিফুল হাসান জাফর ইকবালের উদ্ধৃতি টেনে বলেন, ‘‘গতকাল গভীর রাতে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে জাফর ইকবাল বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ৩৪ জন ভাইস চ্যান্সেলর বলেছেন, এখানকার ভাইস চ্যান্সেলর পদত্যাগ করলে তারা পদত্যাগ করবেন। আমার খুবই শখ, এটা দেখতে। যদিও আমার ধারণা, এ শখ মিটবে না। তবে তোমরা যেটা করেছ, সেটার তুলনা নেই। বাংলাদেশের প্রতিটি ইয়াং ছেলেমেয়ে তোমাদের সঙ্গে আছেন।’ শিক্ষার্থী আন্দোলনের বহুদিন পর অবশেষে জাফর ইকবাল স্যারকে পাওয়া গেলো। হঠাৎ করে তার হাজির হওয়া নিয়ে নানা ধরনের নানা মত‌। তবে তার কথাগুলো বেশ ছিল। জাফর ইকবাল বলেছেন, 'আমি আইজিপিকে বলেছি, ছাত্রদের বিশ্বাস করুন। তাদের মারবেন না। সবার হাতে স্মার্টফোন থাকে। একটা ছবি দেখান যে, ছাত্ররা গুলি করেছে। এ সবের কোনো প্রমাণ নেই।’'

লেখক মারুফ ইসলাম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘শাবিতে আরেকবার ভিসিবিরোধী আন্দোলন হয়েছিল। ভিসি আমিনুল হকের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন শিক্ষকরাই। তখন শিক্ষকদের পিটিয়ে তক্তা বানিয়ে দিয়েছিল ছাত্রলীগ। এই ঘটনার পর ক্ষোভে লজ্জায় শহীদ মিনারে বসে পড়েছিলেন জাফর ইকবাল স্যার। ঝুম বৃষ্টি নেমেছিল সেদিন। আকাশ সাদা করে নামা বৃষ্টির অবিরল ধারার মধ্যে মিশে যাচ্ছিল স্যারের চোখের জল। লজ্জিত জাফর স্যার বারবার বলছিলেন, আমাদের ছাত্ররা শিক্ষকের গায়ে হাত তুলেছে। এই লজ্জায় আমার গলায় দড়ি দিয়ে মরা উচিত। এবার আরেকটি ভিসিবিরোধী আন্দোলন চলছে। এবার আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। সেখানেও যথারীতি হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। তারপর পুলিশ। তবু আন্দোলন থামেনি। সেই আন্দোলনে গভীর রাতে উপস্থিত হলেন জাফর ইকবাল স্যার। শীতের রাত। ঝিরঝির করে কুয়াশা নামছে। কুয়াশায় ভিজতে ভিজতে এবারও জাফর স্যার লজ্জিত হতে পারতেন। গলায় দড়ি দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করতে পারতেন। তা করেননি। উল্টো ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলেছেন, চাইলে গ্রেফতার করুন। এই প্রতিবাদ আমার ভালো লেগেছে।'

প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন ইত্তেফাকের সিলেট ব্যুরো প্রধান হুমায়ূন রশিদ চৌধুরী, শাবি প্রতিনিধি জিএম ইমরান, ইত্তেফাক অনলাইনের প্রদায়ক আরিফুল হাসান শুভতানভীর তানিম

ইত্তেফাক/এসটিএম