বৃহস্পতিবার, ০৮ জুন ২০২৩, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

ওটিটি রিভিউ

‘শাটিকাপ’:মুগ্ধ ও অবাক করেছে

আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ০৮:১৭

এখন ঘরোয়া বিনোদনে দর্শকদের বিশেষ আকর্ষণ হয়ে উঠেছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। কিছুদিন আগেও দর্শক দেশি বিদেশি বিভিন্ন টিভি চ্যানেলনির্ভর থাকলেও এই মুহূর্তে টিভি যেন দর্শকদের আগের মতো টানতে পারছেন না। একটু পর পর বিজ্ঞাপনসহ নানা কারণে বিরক্ত দর্শক বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের কবল থেকে যেন মুক্তি পেতে চাইছিলেন। আর দর্শকদের সেই অবস্থা থেকে বিকল্প ঘরোয়া বিনোদন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ওটিটি (ওভার দ্য টপ) স্বস্তির সুবাতাস বয়ে এনেছে।

বিদেশি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশি নির্মাতাদের সিনেমা, ওয়েব সিরিজ আন্তর্জাতিক বলয়ে ছড়িয়ে পড়ছে খুব দ্রুত এবং সহজেই। এর পাশাপাশি বাংলাদেশি বেশ কিছু ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আত্মপ্রকাশ করে কম সময়ের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে। এ সময়ে বাংলাদেশি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকি অনেকটাই এগিয়ে গেছে এ ক্ষেত্রে। চরকিতে নতুন যোগ হয়েছে ওয়েব সিরিজ ‘শাটিকাপ’।

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল রাজশাহীর সীমান্তবর্তী একটি এলাকার কিশোর গ্যাং আর প্রভাবশালী মাদক কারবারিদের নিয়ে ওয়েব সিরিজটির গল্প আবর্তিত হয়েছে। দর্শক গতানুগতিক একঘেঁয়ে পুরানো ছকে বাঁধা কাহিনির একক নাটক, ধারাবাহিক নাটক, ওয়েবফিল্ম, ওয়েবসিরিজ দেখতে দেখতে যখন ক্লান্ত বিরক্ত তখন ব্যতিক্রমধর্মী বিষয়বস্তুর ওয়েব সিরিজ ‘শাটিকাপ’ তাদের জন্য নতুন স্বাদ বয়ে এনেছে সন্দেহ নেই। সাধারণত নাটক, সিনেমা ও সিরিজের গল্প ঘুরেফিরে ঢাকা শহরের মধ্যেই আটকে রয়েছে। ঢাকার বাইরে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায়, উপজেলায়, জনপদে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য গল্প কাহিনি। আমাদের অধিকাংশ নির্মাতার মধ্যে ঢাকার বাইরের বাংলাদেশটাকে দেখানোর তেমন প্রচেষ্টা বা উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায় না। অথচ ঢাকার বাইরেও আছে চমক লাগানো গল্প, কাহিনি; আর সেই গল্পে অভিনয় করার মতো অভিনেতাও রয়েছেন। ওয়েব সিরিজ ‘শাটিকাপ’ তেমনই এক সাহসী প্রচেষ্টা, আন্তরিক উদ্যোগ সন্দেহ নেই।

এখানে দুই দেশের সীমান্তবর্তী এক এলাকার গল্প তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে এমনসব ঘটনা ঘটে, যার অনেক কিছু লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে যায়। ঘটে মাদক পাচার, চোরাচালানির মতো ভয়ঙ্কর সব অপরাধ। রাজশাহীর একটি এলাকার কিশোর গ্যাং আর প্রভাবশালী মাদক কারবারীদের কর্মকাণ্ড নিয়ে ‘শাটিকাপ’ সিরিজটি নির্মিত হয়েছে। ভাষা থেকে শুরু করে, জীবনযাপন, আচরণ, কর্মকাণ্ড সবই উঠে এসেছে সেই এলাকাকে ঘিরেই। পুরো সিরিজটির শ্যুটিং করা হয়েছে সেই এলাকায়। ফলে ‘শাটিকাপ’ সিরিজটি দেখতে বসে দর্শকদের মনে হয়েছে তারা গল্পের সেই জনপদেই যেন চলে গেছেন, সেখানেই বিচরণ করছেন। এসব কারণেই হয়তো ওয়েব সিরিজটির নির্মাতা গোষ্ঠীসহ আরও অনেকেই ‘শাটিকাপ’কে খাঁটি গল্পের শতভাগ লোকাল সিরিজ বলে উল্লেখ করছেন। ওয়েব সিরিজটি দেখতে বসে পাত্রপাত্রী সবাইকে জীবন্ত এবং খাঁটি মনে হয়েছে। কারণ, এখানে আমাদের ছোটপর্দা, বড়পর্দার কোনো মুখকে দেখা যায়নি। আহসাবুল ইয়ামিন, ওমর মাসুম, অমিত রুদ্র, নাজমুস সাকিব, শাহ আসিফ আহমেদ, ওয়াসিকুল ইসলাম, সাজিয়া খানম, গালিব সরদার... তারা কেউই দর্শকদের কাছে মোটেও পরিচিত নন। কিন্তু তাদের সবাইকে চিনিয়ে দিয়েছে অভিনয়। বিদেশি গল্পের অনুকরণে নয়, বাংলাদেশের পটভূমিকায় বাস্তবধর্মী একটি থ্রিলার গল্পকে অত্যন্ত গোছানো এবং আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরার ক্ষেত্রে দারুণ মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন নির্মাতা মোহাম্মদ তাওকীর ইসলাম।

ইত্তেফাক/ ইআ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন