শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ব্যবসায়ীরাই বাড়াচ্ছে ভোজ্য তেলের দাম

আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২২, ০২:২১

ভোজ্য তেলের বাজার লাগামহীন হয়ে পড়েছে। দফায় দফায় বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম। গত ১৯ জানুয়ারি সচিবালয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছিলেন, আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি আবার বৈঠক করে দাম বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর আগে সয়াবিন-পাম অয়েলের দাম আর বাড়বে না। কিন্তু ব্যবসায়ীরা মন্ত্রীর সেই বক্তব্যকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তার আগেই নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।

সরকারের অনুমতি ছাড়া কীভাবে ব্যবসায়ীরা নিজেদের সিদ্ধান্তে দাম বাড়ান— তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার অজুহাতে একটি সিন্ডিকেট দেশের বাজারে ভোজ্য তেলের বাজার অস্হির করে তুলেছে। তারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেছেন, মিলাররা নতুন নির্ধারিত দরের বোতলজাত সয়াবিন সরবরাহ করেছে। বাড়তি দরেই তেল বিক্রি করা হচ্ছে। দাম আরো বাড়তে পারে বলে তারা জানিয়েছেন।

এদিকে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানিয়েছে, তেলের দাম না বাড়িয়ে উপায় নেই। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন, পাম অয়েলের দাম বেশি। সরকারের অনুমোদন ছাড়া কীভাবে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল—এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা নিজেরা দাম বাড়াতে পারেন না। এ ব্যাপারে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হবে।’

শনিবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর পাইকারি ভোজ্য তেলের বাজার মৌলভীবাজার ও খুচরাবাজার কাওরান বাজারে খোঁজ নিলে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ার কথা জানান।

মৌলভীবাজারের পাইকারি ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী মো. আলী ভুট্টো ইত্তেফাককে বলেন, বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১৩৮ টাকা, পাম অয়েল ১২৭ টাকা ৫০ পয়সা ও ও সুপার পাম অয়েল ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়। যা সপ্তাহের ব্যবধানে তিন থেকে চার টাকা বেশি বলে তিনি জানান।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় দেশের বাজারেও সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম বাড়ছে। তিনি বলেন, সামনে রমজান। এ সময় ভোজ্যতেলের চাহিদা বাড়ে। মুসলিম দেশগুলো প্রচুর পরিমাণে সয়াবিন-পাম অয়েলের অর্ডার দিচ্ছে। এর একটা চাপ পড়েছে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ভোজ্য তেলের বাজার বাড়তি বলে তিনি জানান।

দাম বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করে কাওরান বাজারের বাশার এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. বাশার ও সাহ মিরান জেনারেল স্টোরের মো. সিয়াম বলেন, কোম্পানিগুলো তেলের দাম বাড়িয়েছে। নতুন দরের বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ করা হয়েছে বলে জানান তারা। এতে রুপচাঁদা ও তীরের পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিনের গায়ের দর ৮০০ থেকে ৮২০ টাকা লেখা আছে। তবে তারা ৭৬০ থেকে ৭৭০ টাকায় বিক্রি করছেন। এক সপ্তাহ আগে এই পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তারা ৭৩০ টাকায় বিক্রি করেছেন বলে জানান। আর বসুন্ধরার পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেল বর্তমানে ৭২০ থেকে ৭৩০ টাকায় বিক্রি করছেন। যা এক সপ্তাহ আগে ৬৯০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি করেছেন বলে জানান।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ভোজ্য তেলের আন্তর্জাতিক বাজার অস্থির। ফলে দেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। বিশ্ব ব্যাংক ও মালয়েশিয়ার সংবাদপত্রে প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বছর এই সময়ে প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১ হাজার ১৬৯ ডলার। এক মাস আগে ডিসেম্বরে ছিল ১ হাজার ৪১১ ডলার। আর গতকাল ছিল ১ হাজার ৫২৭ ডলার। অন্যদিকে গত বছর এই সময়ে প্রতি টন অপরিশোধিত পাম অয়েলের দাম ছিল ১ হাজার ১৪ ডলার। এক মাস আগে ডিসেম্বরে ছিল ১ হাজার ২৭০ ডলার। আর গতকাল ছিল ১ হাজার ২৯৯ ডলার।

সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে গত এক বছরে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ২৮ শতাংশ, পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ৩০ দশমিক ৪৩ শতাংশ, খোলা সয়াবিন তেলে ২৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ, পাম অয়েল ৩৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ ও সুপার পাম অয়েলে ৩২ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেড়েছে। তবে এক বছরের কিছু বেশি সময়ের হিসাব ধরলে দাম বাড়ার ব্যবধানটা অনেক বেশি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে ২০ লাখ টন ভোজ্য তেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে দেশে উত্পাদিত সরিষা, সূর্যমুখীসহ অন্যান্য তেলবীজ থেকে সোয়া ২ লাখ টন তেল পাওয়া যায়। বাকিটা আমদানি করতে হয়। 

ইত্তেফাক/এসজেড