ডয়চে ভেলের ‘দ্য বব্স’ প্রতিযোগিতার একটি বিভাগে ‘জুরি অ্যাওয়ার্ড’ জয় করেছে ভিডিও তথ্যচিত্র ‘রেজর’স এজ’। প্রতিযোগিতার ‘সিটিজেন জার্নালিজম’ বা নাগরিক সাংবাদিকতা বিভাগে পুরস্কার জিতেছে ব্লগার হত্যা নিয়ে তৈরি হয়েছে এই তথ্যচিত্র।
বাংলাদেশের অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের ওপর ধারাবাহিক হামলা নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্রটিতে দেখানো হয়েছে কীভাবে রাজনীতিবিদরা এ সব হামলার পেছনে উৎসাহ যোগাচ্ছেন। ‘দ্য বব্স’ প্রতিযোগিতায় এ বছর চারটি ক্যাটাগরিতে জুরি অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে। সোমবার বার্লিনে এক সংবাদ সম্মেলনে বব্স-এর জুরিমণ্ডলী চূড়ান্ত বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন।
‘নাস্তিকের ধর্মকথা’ ছদ্মনামে ব্লগ লেখা একজন ব্লগার এবং তার স্ত্রী ইয়াসমিন তথ্যচিত্রটি তৈরি করেছেন। দ্য বব্স অ্যাওয়ার্ড জেতায় উচ্ছ্বসিত এই ব্লগার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ডকুমেন্টারিটি আমাদের কাছে কেবলই একটি ডকুমেন্টারি বা শিল্প প্রচেষ্টা নয়, বরং অ্যাক্টিভিজমের মাধ্যম। বর্তমানে বাংলাদেশে যেভাবে একের পর এক মুক্তমনা, নাস্তিক, সেক্যুলার লেখক, ব্লগার, প্রকাশক হত্যার মহোৎসব শুরু হয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটকে আমরা তুলে ধরতে চেয়েছি এর মাধ্যমে।
ডয়চে ভেলের ‘দ্য বব্স’ প্রতিযোগিতায় চলতি বছর বাংলা ভাষার বিচারক ছিলেন ব্লগার বন্যা আহমেদ। গতবছর ঢাকায় মৌলবাদীদের হামলায় গুরুতর আহত এই ব্লগার বলেন, পরপর দু’বছর বাংলাদেশের ব্লগারদের প্রকল্পকে স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থ হচ্ছে সেখানকার পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি। বরং অবস্থা আরেও খারাপ হয়েছে। গত কয়েকদিনে চারটি চাপাতি হামলার ঘটনা ঘটেছে। মুক্তমনা অ্যাক্টিভিস্ট, লেখক, ব্লগার, শিক্ষক, সংখ্যালঘু– কেউই দেশটির কোথাও আর নিরাপদে নেই। গত বছর এই অ্যাওয়ার্ড জয় করেছিল ঢাকায় খুন হওয়া লেখক অভিজিৎ রায়ের মুক্তমনা ব্লগ।
‘দ্য বব্স’ প্রতিযোগিতার দ্বাদশ আসরের অন্যান্য ‘জুরি অ্যাওয়ার্ড’ বিজয়ীরা হচ্ছেন প্রগতির জন্য প্রযুক্তি বিভাগে ইরানের অ্যাপ ‘গেরশাদ’, সামাজিক পরিবর্তন বিভাগে ভারতের অ্যাসিড হামলা বিরোধী প্রচারণা, শিল্প এবং সংস্কৃতি বিভাগে জার্মানির ‘সেন্টার ফর পলিটিক্যাল বিউটি’। এছাড়া, শিল্প এবং সংস্কৃতি বিভাগে অনলাইন ব্যবহারকারীদের ভোটে ‘ইউজার অ্যাওয়ার্ড’ জয় করেছে বাংলাদেশের আলোকচিত্রী জিএমবি আকাশের ‘ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট’। আর বাংলা ভাষা বিভাগে ‘ইউজার অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছে ‘জার্মান প্রবাসে’ ওয়েবসাইট। চলতি বছর এক লাখের বেশি অনলাইন ভোট গণনা করা হয়।
‘দ্য বব্স’ বিজয়ী প্রকল্পগুলো সম্পর্কে ডয়চে ভেলের মহাপরিচালক পেটার লিমবুর্গ বলেন, ডয়চে ভেলে বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে গোটা বিশ্বে বাকস্বাধীনতাকে উৎসাহ দিচ্ছে। দ্য বব্স প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমরা বাকস্বাধীনতা রক্ষার বৈচিত্র্যময় এবং মহৎ বিভিন্ন উদ্যোগকে স্বীকৃতি দিচ্ছি। বিজয়ী এ সব উদ্যোগ অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করতে পারে। কাজের ক্ষেত্রে ভিন্নতা থাকলেও এ সব উদ্যোগ মূলত নিপীড়িত মানুষদের সহায়তায় কাজ করছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছর ‘দ্য বব্স’ প্রতিযোগিতায় ২,৩০০ মনোনয়ন জমা পড়ে। এগুলোর মধ্য থেকে ১২৬টি প্রকল্পকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়, যার মধ্য থেকে চারটি প্রকল্প জয় করে জুরি অ্যাওয়ার্ড। আগামী জুন মাসে জার্মানির বন শহরে অনুষ্ঠিতব্য গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামে ‘জুরি অ্যাওয়ার্ড’ বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।