নিয়ম মেনে জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন আবরার। অপরদিকে নিয়ম ভেঙ্গে প্রতিযোগিতা করছিল ঘাতক বাস। আর সেই বাসের চাপায় প্রাণ যায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরীর (২০)।
মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সেই জেব্রা ক্রসিংয়ে এখনো লেগে আছে আবরারের রক্ত। আর সেই জায়গাটি ঘিরে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। তারা চালকের শাস্তির দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, আবরার জেব্রা ক্রসিংয়ে দিয়ে রাস্তা পার হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে উঠতে যাচ্ছিলেন। এসময় অন্য একটি বাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে সুপ্রভাত পরিবহনের বাসটি আবরারকে ধাক্কা দেয়। এরপর ওই বাসের নিচে চাপা পড়েন তিনি। এক প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী জানান, বাসটি আবরারকে ধাক্কা দিয়ে কিছু দূরে টেনেও নিয়ে যায়।
মঙ্গলবার সকাল ৭টার পর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেইটের সামনে আবরারকে চাপা দেয় বাস। এরপর তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের সঙ্গে বেসরকারি নর্থ সাউথ ও ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যোগ দেন। এতে বিমানবন্দর থেকে বিশ্বরোড ও বাড্ডা হয়ে রামপুরা এবং গুলিস্তান রুটের সকল যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ঘটনাস্থলে যান ঢাকা উত্তরের নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম।
রক্ত মাখা আবরারের আইডি কার্ড। ছবি: সংগৃহীত
তখন শিক্ষার্থীরা তার কাছে কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন। তার মধ্যে রয়েছে- আবরারকে চাপা দেওয়া বাসের চালককে ফাঁসি দিতে হবে, সুপ্রভাত বাসের রুট পারমিট বাতিল করতে হবে, বাসস্টপেজের ব্যবস্থা করা, সিটিং সার্ভিস বন্ধ করা, চালকদের ছবি ও লাইসেন্স গাড়িতে ঝোলানোর ব্যবস্থা করা, বসুন্ধরা গেইটে ফুটওভার ব্রিজ করা, জেব্রা ক্রসিংয়ে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা ও ট্রাফিক পুলিশের দুর্নীতি বন্ধ করা।
আরো পড়ুন: হামলাকারীর নাম কখনও মুখে আনবো না: নিউজিল্যান্ড প্রধানমন্ত্রী
এসময় মেয়র বাসচালকের শাস্তি নিশ্চিত করা ও নিহত শিক্ষার্থীর নামে সেখানে একটি পদচারী-সেতু নির্মাণের আশ্বাস দেন। একই সঙ্গে সুপ্রভাত পরিবহনের কোনো বাস ওই রুটে চলতে দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি। এরপর মেয়র অবরোধকারীদের সড়ক ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। এসময় অবরোধকারীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তারা মেয়রের কাছে প্রশ্ন রাখেন, জাবালে নূর পরিবহন এখনো চলছে। এখনো প্রতিদিন সড়কে মানুষ মারা যাচ্ছে। অবরোধকারীদের এমন মন্তব্যের পর মেয়র ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। এদিকে পুলিশ দাবি করছে ওই বাস চালককে আটক করা হয়েছে। তবে তার নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত
নিহত আবরার আহমেদ চৌধুরীর রাজধানীর মালিবাগে পরিবারের সঙ্গে নিজস্ব বাসায় থাকতেন। তার বাবার নাম বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবিদ আহমেদ চৌধুরী। দুপুর দেড়টার দিকে রাজধানীর মিরপুর সেনানিবাসের বিইউপি এডিবি গ্রেড গ্রাউন্ড মাঠে আবরারের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে তাকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়।
ইত্তেফাক/জেডএইচ