শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ঈদে অনলাইন পণ্য কেনাবেচায় রেকর্ড

আপডেট : ২২ জুন ২০১৭, ০২:২০

দেশে ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অনলাইন বেচাকেনা। এই ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ভার্চুয়াল জগতে পণ্য ব্যবসা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি জমেছে। শাড়ি, থ্রিপিস, শার্ট, পাঞ্জাবি, মোজা থেকে শুরু করে টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার, মোবাইল— হরেক রকম পণ্য বিক্রি হচ্ছে অনেকটা আঙুলের ছোঁয়াতেই।

অনলাইন ব্যবসায় জড়িতরা জানান, ঈদ উপলক্ষে বিখ্যাত ব্র্যান্ড, ছোট উদ্যোক্তাদের স্বল্প পরিসরের ব্যবসা কিংবা ফেসবুক কেন্দ্রিক ই-দোকানগুলো ঢেলে সাজিয়েছে নিজেদেরকে। ক্রেতারা শুধু রাজধানী বা জেলা শহরগুলোর শপিংমলে সীমাবদ্ধ না থেকে অনলাইন সাইট ও ফেসবুকেও ভিড় জমিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব মিলিয়ে এ বছর ঈদ মৌসুমে অনলাইন বিক্রি প্রায় ৫০০ কোটি টাকায় দাঁড়াবে। প্রতিষ্ঠানভেদে অনলাইন বেচাকেনার হার গতবারের চেয়ে এবার ৩০ থেকে শতভাগ পর্যন্ত বেড়েছে।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) সূত্র জানায়, সময় বাঁচাতে এবং সহজে বেচাকেনার সুযোগ খোঁজেন এমন ব্যক্তিরাই অনলাইন শপিং বেশি করেন। এখন দেশে প্রতিদিন ১০ হাজারের বেশি ই-কমার্স লেনদেন হচ্ছে। তবে ঈদকে সামনে রেখে এই লেনদেনের পরিমাণ ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সুবাদে এ ক্রয়-বিক্রয় বেশ সহজ এবং তৃণমূলেও ছড়িয়ে গেছে।

এবারের ঈদে পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের জামাকাপড় পুরোটাই অনলাইনে কিনেছেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা আসিফুর রহমান। তিনি বলেন, নগর জীবনের ব্যস্ততায় বাজারে গিয়ে জিনিসপত্র কিনে তা আবার আত্মীয়স্বজনের বাসায় পৌঁছে দেওয়া খুব কঠিন ও সময়সাপেক্ষ। তাই সময় বাঁচাতে অনলাইনে পণ্য কিনে নিয়ে আবার ওই কোম্পানির মাধ্যমেই একাধিক  জেলায় থাকা আত্মীয়-স্বজনের নির্দিষ্ট বাসাবাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। এতে মোটামুটি পছন্দমতো পণ্যও কেনা হলো, ঝামেলা ছাড়া তা পৌঁছানোও গেল।

ই-ক্যাব জানায়, দেশে বর্তমানে ১০০টির বেশি ই-কমার্স সাইট রয়েছে। তবে এর প্রায় অর্ধেকই পুরোদমে চালু নেই। এর বাইরে ফেসবুক কেন্দ্রিক ই-শপ রয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি। দেশে অনলাইন বেচাকেনার প্রায় ৪০ শতাংশই হয় ফেসবুকে। রমজানে ই-কমার্স সাইট, ব্র্যান্ডগুলোর নিজস্ব সাইট এবং ফেসবুক শপ— সব শ্রেণির অনলাইনেই বিক্রি বেড়েছে।

দেশে অনলাইনে বেচাকেনার সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম বিক্রয় ডটকম। কোম্পানিটির বিপণন পরিচালক ইয়াসির নূর বলেন, এ বছর তাদের সাইটে অনলাইন বিক্রি গতবারের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। সার্বিকভাবে এবার অনলাইনে বেচাকেনা আগের তুলনায় বেশ বেড়েছে। তিনি জানান, গত ৮ থেকে ১০ জুন পর্যন্ত তিনদিনব্যাপী অনলাইন সেলস মেলার আয়োজন করে বিক্রয় ডটকম। এ তিন দিনে আড়াই হাজারের বেশি আইটেম বিক্রি হয়।

অনলাইনে বিক্রি যেমন বেড়েছে তেমনি এই মাধ্যমে পণ্য কিনে হয়রানির শিকার হওয়ার সংখ্যাও কম নয়। একাধিক ক্রেতা তাদের অনলাইনে পছন্দ হওয়া ডিজাইনের পণ্যের বদলে অন্য পণ্য পাওয়ার অভিযোগ করেছেন। এ প্রসঙ্গে ই-ক্যাবের সভাপতি রাজিব আহমেদ বলেন, সাধারণত কিছু ছোট ই-শপ এমনটি করে থাকে। তবে বর্তমানে এমন অভিযোগ কমে এসছে। ই-ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্বার্থেই এটি প্রতিরোধ করছেন। অনেকেই প্রতারণা রোধে এখন পণ্য সরবরাহের পর গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছেন। অনলাইন বেচাকেনার আরো সম্প্রসারণে ক্রেতা-বিক্রেতা দুই পক্ষের মধ্যেই আরো সচেতনতা ও উদ্ভাবন প্রয়োজন।

অনলাইন বেচাকেনার সঙ্গে ই-ব্যাংকিং এবং মোবাইল ব্যাকিং লেনদেনের পরিমাণও কয়েকগুণ বেড়েছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সবচেয়ে বেশি কেনাবেচা হচ্ছে বিকাশে। এরপরই রয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের রকেট। বিকাশের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জাহেদুল ইসলাম জানান, বিকাশের গ্রাহকরা  রমজান মাসে ২৮টি ই-কমার্স সাইটসহ দেশের ৫৯টি নামি ব্র্যান্ড ও সুপার স্টোরের ১ হাজার ১৩২টি  আউটলেটে কেনাকাটার মূল্য বিকাশ দিয়ে পরিশোধ করতে পারছেন। এ কেনাকাটায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক দেওয়া হচ্ছে। গ্রাম, পাড়া, মহল্লার ছোট দোকান থেকে শুরু করে ৪০ হাজারেরও বেশি দোকানে বিকাশের মাধ্যমে কেনাকাটা করা যাচ্ছে।

ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখা যায়, ঈদকে সামনে রেখে নামি ব্র্যান্ড আড়ং, ইয়েলো, গ্রামীণ চেক, গ্রামীণ ইউনিকলো, আগোরা, আম্বার, বাটা, ক্যাটস আই, জেন্টল পার্ক প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান নানা ছাড়-অফারে তাদের ই-শপ সাজিয়েছে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ফেসবুক শপগুলোও সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে নানা পণ্যের সমাহারে। এমনই কয়েকটি পেজ হলো— আমোহা, দামিনী, ক্যাটকিন, নলিনী, আল্পনা, উইমেন্স ওয়ার্ল্ড, বস্ত্রবাড়ি, সূফি ফ্যাশন, সুফিয়ানা ইত্যাদি। নানা ছাড় ও পুরস্কারে সমৃদ্ধ ই-কমার্স সাইটগুলোর মধ্যে রয়েছে দারাজ, কিকশা, আজকের ডিল, আমারশপ২৪, রকমারি ইত্যাদি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনলাইনে বেচাকেনার আর্থিক পরিমাণ সঠিকভাবে নিরূপণ করা খুবই কঠিন। কেননা ব্যক্তি পর্যায়ে বেচাকেনার তথ্য সংগ্রহ বা সংরক্ষণ করা হয় না। এরপরও গত সপ্তাহ পর্যন্ত অনলাইনে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা বিক্রি হয়েছে। ঈদের দিন পর্যন্ত বেচাকেনায় এটি ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন বিক্রেতারা।

ইত্তেফাক/নূহু