শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

যদি বর্ষে মাঘের শেষ... 

আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৪:০৪

দেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় শৈত্যপ্রবাহের পর পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে গতকাল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে। মাঘের বিদায়লগ্নে এই বৃষ্টিতে জেঁকে বসছে শীতের দাপট। উত্তরাঞ্চলের কিছু এলাকায় ঝোড়ো বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টি, বজ্রবৃষ্টি আর হিমেল হাওয়া বয়ে গেছে। শীতের সঙ্গে তুমুল মাঝারি বর্ষণে দুর্ভোগের আবর্তে পড়েছে জনজীবন। 

কৃষি-পঞ্জিকা মতে, মাঘের শেষের বৃষ্টি আশীর্বাদপূর্ণ। বিদুষী খনার অতিপরিচিত বচন—‘যদি বর্ষে মাঘের শেষ, ধন্যি রাজার পুণ্য দেশ’। মর্মার্থ—মাঘ মাসের শেষভাগের বৃষ্টি ফল-ফসলের জন্য অতি উপকারী। রাজা ধন্য হয়। দেশ হয় শ্রেয়। এই বৃষ্টিতে জমি নরম ও সরস হয়, চাষাবাদে ফলন  স্ফীতি বয়ে আনে। সেচ দিতে হবে না। আম, লিচু, ধান, গম, ভুট্টা, সরিষা, সবজিসহ আবাদি ফসলের অসামান্য উপকার হয়। 

তবে কৃষি বিভাগ বলছে, মাঘের এই বৃষ্টিতে সর্বনাশ হবে রবিশস্যের। পানি জমলে কিছু ফসলের ক্ষতি হবে। গতকাল শুক্রবার উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় দিনভর ভারী বৃষ্টি হওয়ায় মসুর ডালের গাছ পচে ফসল মাটিতে ঝরে পড়ে যাবে। আলুর ক্ষতি হবে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঘের শেষে ঝোড়ো বাতাস অতঃপর বৃষ্টিতে ধুয়ে যাচ্ছে বৃক্ষের পত্রপল্লবে জমে থাকা ধুলো-বালুর স্তূপ। আগমন ঘটছে ঋতুরাজ বসন্তের।

শীত শেষের বৃষ্টিতে যেমন প্রকৃতিতে যৌবন ফিরে আসে তেমনি মানুষের মধ্যেও আসে রিক্ততা ঝরা প্রফুল্লতা। আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ বলেন, পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে ঝরছে বৃষ্টি। বছরটা শুরুই হয়েছে অস্বাভাবিকভাবে। শেষটাও স্বাভাবিক ছিল না। ডিসেম্বরে ঘূর্ণিঝড় না এলেও এর প্রভাবে অনেক বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে গেছে। এ সময়ে এসে বজ্রপাত হওয়ার কথা না কিন্তু কোথাও কোথাও হয়েছে। কালবৈশাখীর আগে শিলা বৃষ্টি হয় না, এবার সেটাও হয়েছে। ঋতু চক্র পরিবর্তনের যে নিয়ম, তা এবার আর ঠিক থাকছে না। এ সময়ের বৃষ্টিতে কিছু ফসলের উপকার হবে। মেঘ কেটে গেলেই তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যেতে পারে। তারপর আরো কমে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়ে যাবে। তবে তেমন ঠাণ্ডা অনুভূত হবে না। সকালের দিকে একটু ঠাণ্ডা লাগবে।

আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা জানান, শুক্রবার সকাল থেকেই রাজধানীসহ দেশের উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে। তবে শনিবার সকাল ৯টার পর রাজধানীতে আকাশ পরিষ্কার হতে পারে। আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, শৈত্যপ্রবাহ কেটে যাওয়ার পর দুই-এক দিন ধরে তাপমাত্রা বেড়েছে। তবে পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে গতকাল বৃষ্টি হয়েছে, আজ শনিবারও থাকবে। আগামীকাল রবিবার থেকে আকাশ পরিষ্কার হলেও তাপমাত্রা কমে শীতের অনুভূতি বাড়বে। 

গতকাল শুক্রবার রাজধানীতে দুপুর থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। দেশের অনেক স্থানে বৃহস্পতিবার রাত থেকে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে কর্মজীবী অনেক মানুষ কাজে বের হতে পারেননি। রাস্তাঘাটে যানবাহন ও লোক চলাচলও ছিল কম। বিপাকে পড়ে যান দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল রিকশা ও ভ্যানচালকসহ নিম্ন-আয়ের মানুষেরা। দুপুরের বৃষ্টিতে জুমার নামাজে মসজিদে যেতে মুসল্লিদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়, যাতে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। গতকাল তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন রাজশাহীতে ১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। 

বগুড়ায় সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। দিনাজপুরে ভোর ৫টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত চার ঘণ্টায় ৩০ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। 

আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সেই সঙ্গে রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা ২-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। 

তিনি জানান, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল এবং এর আশপাশের উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। 

ইত্তেফাক/এএইচপি