পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে না-ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন ‘সুরের সরস্বতী’ লতা মঙ্গেশকর। তিনি ছিলেন অসংখ্য শিল্পীর অনুপ্রেরণার উত্স। অনেকেই তার আদর্শে নিজেকে তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। গুণী এই সংগীতশিল্পীর প্রয়াণে শোকাতুর হয়ে পড়েছেন তারা। শুধু ভারতীয় নয়, বাংলাদেশের রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, আঁখি আলমগীর থেকে শুরু করে অনেকের সঙ্গে তার আলাদা সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল।
প্রবাদপ্রতিম শিল্পীর স্মৃতিচারণায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন রুনা লায়লা। এতে রয়েছে, তাদের মধ্যকার শেষবারের আলাপচারিতাও। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন : ‘যে কণ্ঠ আমার মতো কোটি কোটি মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে, তিনি হয়তো এখন স্বর্গে সুরের মূর্ছনা ছড়াবেন। আমাদের মধ্যে বছরের পর বছর ভালোবাসা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধায় একটি পরিপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমরা যেন একে অপরের বন্ধু হয়ে উঠেছিলাম।’ এছাড়া প্রতিদিনই লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে মেসেজ আদান-প্রদান হতো রুনা লায়লার।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমরা প্রায় প্রতিদিনই মেসেজ আদান-প্রদান করতাম। ফোনে দীর্ঘ কথোপকথনে সাধারণত গান নিয়ে আলাপ হতো আমাদের। তার অনুমতি নিয়ে জোকস পাঠানোরও সাহস করেছিলাম, যেগুলো তিনি বেশ উপভোগ করেছেন। দিদির দারুণ রসবোধ ছিল। এ বিষয়ে নিজের কিছু অভিজ্ঞতা আমার সঙ্গে ভাগাভাগি করেছেন। আমরা বেশ হাসিখুশি সময় কাটাতাম। তার কথা শুনতে ভালো লাগত আমার। সেই মধুর ঝরনার মতো কণ্ঠ আমার কানে যেন গান হিসেবে বাজত।’
শুধু মেসেজ আদান-প্রদান নয়, প্রায়ই সকালে লতা মঙ্গেশকরকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠাতেন রুনা লায়লা। তার উত্তরও নিয়মিত দিতেন লতা মঙ্গেশকর। এ প্রসঙ্গে রুনা লায়লা আরো লিখেছেন, ‘তাকে শুভ সকাল মেসেজ পাঠালে উত্তরে তিনি আমাকে নিজের পছন্দের জিনিসগুলোর ছবি পাঠাতেন। যেমন ফুল ও শিশু এবং নিজের গানের অডিও-ভিডিও। এসবের বেশির ভাগই শুনেছি ও মুখস্থ করেছি আগেই। তাই তার কাছ থেকে সেসব আসাটা ছিল আমার জন্য বাড়তি পাওয়া।’
এছাড়া রুনা লায়লার জন্মদিনে প্রতি বছরই উপহার পাঠাতেন লতা মঙ্গেশকর। কিন্তু গত ১৭ নভেম্বর রুনা লন্ডনে থাকার কারণে উপহারের শাড়ি পাঠাতে পারেননি। তবে রুনা লায়লা ঢাকায় ফিরলে সেটা পাঠানোর কথা বলেন লতা মঙ্গেশকর। সেই স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে রুনা লিখেছেন, ‘দিদি আমাকে প্রতি জন্মদিনে শাড়ি পাঠাতেন। কিন্তু গত জন্মদিনে আমি লন্ডন ছিলাম। তাই তিনি আমাকে বলেছিলেন, যেহেতু তুমি লন্ডনে যাচ্ছ, ঢাকায় ফিরে এলে তোমাকে উপহার পাঠাব। তখন আমি তাকে বলেছিলাম, দিদি, আমার কাছে সবচেয়ে বড় উপহার হলো, আপনি নিজেই। দিদি আমাকে জানিয়েছিলেন, আমার সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগে তার। তিনি আমাকে তার ছোট বোন বলতেন। দিদি আমাকে খুব ভালোবাসতেন এবং আমার প্রতিভাকে সম্মান করতেন। তিনি বলেছিলেন, আমাকে অনেক মিস করেছেন। শিগ্গিরই তাকে দেখতে যাওয়ার নিমন্ত্রণ জানান, যাতে আমরা দীর্ঘসময় ধরে আড্ডা দিতে পারি। আমি বলেছি, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেই তাকে দেখতে যাব। কিন্তু তা আর হলো না। আমার মধ্যে এমন এক বিমর্ষ অনুভূতি ও শূন্যতা ভর করেছে, যা কখনো ফুরিয়ে যাওয়ার মতো নয়। আমি সেই সুন্দর কণ্ঠ আর শুনতে পারব না। দিদির মুখে আর শোনা হবে না, রুনাজি আপ ক্যায়সি হ্যায়? দিদি, আপনি আমাকে এবং আরো অনেককে অনেক কিছু দিয়েছেন। আপনি আমাকে অনেকের চেয়ে বেশি দিয়েছেন, এজন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমি আপনার আশীর্বাদ ও ভালোবাসা আমৃত্যু লালন করব, সরস্বতী মা।’