ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সঙ্গে এই সময়ে আরো একটি বড় আন্দোলন চলছিল— সেটা ছিল রাজবন্দিদের মুক্তির আন্দোলন। বিশেষভাবে শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবি করে আসছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ। সাপ্তাহিক ইত্তেফাক এ সময় প্রতি সংখ্যাতেই শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হতো।
১৯৫০ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে নিরাপত্তা আইনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক ছিলেন শেখ মুজিব ও বরিশাল মুসলিম লীগের সাবেক সেক্রেটারি মহিউদ্দিন আহমদ।
কারাগারে তিলে তিলে মৃত্যুবরণ করার চাইতে আমরণ অনশন শুরু করেন শেখ মুজিব। ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে অনশন শুরু করেন তিনি। ১৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সরকারের নির্দেশে তাকে ফরিদপুর জেলে স্থানান্তর করা হয়।
ভাষা আন্দোলনের প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গে বন্দিমুক্তির ব্যাপারে পূর্ববঙ্গ বিধান-পরিষদের সদস্যদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির একটি যুক্ত আবেদন পেশ করা হয়। এতে প্রদেশের সব রাজনৈতিক কর্মীর মুক্তির দাবি জানান হয়। এই আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক কাজী গোলাম মাহবুব, আতাউর রহমান খান, মওলানা রাগিব আহসান, সৈনিক পত্রিকার সম্পাদক হাসান ইকবাল প্রমুখ।
২১ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনের মুখে সৈন্যরা গুলি ছুঁড়লে এবং কয়েকজন শহিদ হওয়ার ঘটনায় ২৩ ফেব্রুয়ারি অনশন ভঙ্গ করার কথা জানিয়ে তার প্রেরণ করেন মওলানা ভাসানী। তিনি উল্লেখ করেন, ‘বর্তমান পরিস্হিতিতে শেখ মুজিবুর রহমানের বেঁচে থাকার প্রয়োজন আছে।’
৫ মার্চ ১৯৫২ সালের ৫ মার্চ সাপ্তাহিক ইত্তেফাকের প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয় ‘পূর্ব্ব-পাক আওয়ামী মুসলিম লীগের জয়েন্ট সেক্রেটারি শেখ মুজিবুর রহমান বিগত ২৬ ফেব্র‚য়ারি ফরিদপুর জেল থেকে মুক্তিলাভ করেন। জনাব রহমান ১৯৫০ সালে নিরাপত্তা আইনে বন্দী হন। কয়েক মাস যাবৎ তিনি হৃদরোগে ভুগিতেছিলেন। কতৃর্পক্ষ চিকিত্সার জন্য ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে স্হানান্তরিত করে কিন্তু সরকার টাকার অজুহাতে তাকে পুনরায় জেলে প্রেরণ করে। কারা প্রাচীরের অন্তরালে তিলে তিলে জীবন বিসর্জন দেওয়া অপেক্ষা আমরণ অনশন শ্রেয় মনে করিয়া মি; রহমান বিগত ১৬ই ফেব্রুয়ারি হইতে অনশন শুরু করেন। দেশময় ইহার দারুণ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করিয়া সরকার জনাব রহমানকে মুক্তি দিয়াছেন।’