শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

৩৫ দিনেও খোঁজ মেলেনি অগ্রণী ব্যাংকের অফিসার নজরুলের

আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮:৫৬

অগ্রণী ব্যাংক রাজধানীর মতিঝিলের বি-ওয়াপদা শাখার সিনিয়র অফিসার নজরুল ইসলামের সন্ধান মেলেনি। নিখোঁজের ৩৫ দিন পর্যন্ত পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা তন্নতন্ন করে খুঁজেও কোন কুল কিনারা করতে পারেনি।

রাজধানীর উত্তরখান এলাকায় নিজের বাড়ির ভাড়া তুলতে গিয়ে নিখোঁজ হন নজরুল। এ ঘটনায় উত্তরখান থানায় তার স্ত্রী রুবিনা নজরুল একটি জিডি করেন। পুলিশ জানিয়েছে, নিখোঁজ নজরুল একজন অতিরিক্ত আইজিপি’র ছোট ভগ্নিপতি।

গত ৭ জানুয়ারি শুক্রবার জুমার নামাজের পর উত্তরখানে নিজের বাড়ির ভাড়া তোলার জন্য নজরুল ইসলাম যাত্রাবাড়ীর শনিরআখড়ার ভাড়া বাসা থেকে বের হন। এরপর থেকে আর তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। নিখোঁজের স্ত্রী রুবিনা নজরুল বলেন, ‘তার ব্যবহৃত দুটি মোবাইলের একটি তিনি সঙ্গে নিয়ে যান। তবে সেটিও ঐ রাতে বন্ধ হয়েছিল। সব আত্মীয়-স্বজনকে বিষয়টি জানাই। তারাও কেউ খোঁজ দিতে পারছিল না।’ নিখোঁজের ঘটনার দুই দিন পর রুবিনা নজরুল ৯ জানুয়ারি উত্তরখান থানায় জিডি করেন। রুবিনা ও নজরুল দম্পতির দুই ছেলে। তাদের বড় ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। ছোট ছেলে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের ছাত্র। গ্রামের বাড়ি বরগুনার বেতাগী উপজেলায়। ঘটনার পর উত্তরখান ও যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ যৌথভাবে ঘটনাটির তদন্ত শুরু করে। এছাড়া ডিবি, কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি), পিবিআই, র‍্যাবের গোয়েন্দা ইউনিট ও আরেকটি শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা তদন্তে নামে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিখোঁজের আগে নজরুল গত ৬ জানুয়ারি শেষ অফিস করেন। তিনি ওই শাখার লকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। ওই দিন বিকালে তিনি তার সহকর্মীর  কাছে লকারের চাবি রাখতে দেন। ওই শাখা থেকে তিনি বাড়ি নির্মাণের জন্য ৮০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। এসব তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ওই ব্যাংকের শাখা ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে। শাখা ম্যানেজার পুলিশকে জানায় যে তিনি একজন হাসিখুশি মানুষ। ব্যাংকের লকারের চাবি তার কাছেই ছিল। কোনো দিনও তিনি কারও কাছে চাবি দিতেন না। ছুটিতে থাকলেও এসে চাবি দিয়ে কাজ করিয়ে আবার নিয়ে যেতেন। কিন্তু সেই মানুষটি চাবিটি ব্যাংকে তার সহকর্মীর কাছে দিয়ে চলে যান। এরপর দিনই তিনি নিখোঁজ হন। লকারের কোনো জিনিসপত্র খোয়া যায়নি।

একটি গোয়েন্দা সংস্থা জানায়, মোবাইল ফোনটি যাত্রাবাড়ী থেকে উত্তরখান থানা এলাকায় যাওয়া পর্যন্ত বন্ধ ছিল। তাই তার কোনো অবস্থান শনাক্ত করা যায়নি। উত্তরখান এলাকার তার বাড়ির আশেপাশের এলাকার সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজেও তার কোনো উপস্থিতি নেই। এমনকি নজরুল ইসলামের মালিকানাধীন বাড়িতে তিনি ওই দিন ভাড়া তুলতে যাননি। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, নিখোঁজের কয়েকদিন আগে নজরুল ইসলাম সপরিবারে আমেরিকায় যাওয়ার কথা বলেছিলেন স্ত্রীর কাছে। তাদের এক নিকট আত্মীয় দম্পতি আমেরিকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার পর তাদের ইন্সুরেন্সের টাকা ও অন্যান্য সম্পদের দাবিদার হিসাবে নজরুল আমেরিকায় যেতে চান। কিন্তু তার স্ত্রী রুবিনা এতে সম্মতি দেননি। এ বিষয়টি নিয়েও তদন্ত চলছে।

পরে পুলিশের পক্ষ থেকে ইমিগ্রেশন বিভাগে নজরুল ইসলাম বিদেশ গিয়েছে কিনা- এ ব্যাপারে চিঠি দিয়ে জানতে চায়। এছাড়া ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কাছে নজরুল ইসলামের পাসপোর্ট সম্পর্কিত তথ্য জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছে। উত্তরখান থানার ওসি আব্দুল মজিদ বলেন, ‘তার মোবাইলের কথোপকথন চেক করা হয়েছে। তাতেও কিছু মেলেনি। নজরুল ইসলাম ব্যাংকের চাকরির পাশাপাশি উত্তরখান ও তুরাগ এলাকায় টুকটাক জমির ব্যবসা করতেন। জমির ব্যবসা করলেও তার সঙ্গে কারো বিরোধের তথ্য মিলেনি।’ অপরদিকে, নিখোঁজ নজরুল ইসলামের বোন মঞ্জু আক্তার র‍্যাবে একটি অভিযোগ দিয়েছেন। নজরুল ইসলামের ভাই কৃষিবিদ সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারছি না কেন এমন ঘটলো।’ এদিকে বেতাগী উপজেলা কল্যাণ সমিতি ঢাকার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদ আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক মো. হেলাল মিয়া এক যুক্ত বিবৃতিতে ব্যাংকার মো. নজরুল ইসলামের নিখোঁজের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাকে খুঁজে পেতে তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ইত্তেফাক/ ইআ