শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

এবারের বইমেলা হবে জমজমাট

আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৪:৩৯

অমর একুশে বইমেলা এখন বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ। পৃথিবীর কোথাও মাসব্যাপী বইমেলা হয় না, বাংলাদেশে হয়—এটা একটা ব্যতিক্রম ঘটনা। এ ঘটনায় বহির্বিশ্বে দেশের সুনাম হচ্ছে, যেমন সুনাম হয়েছে মঙ্গলশোভাযাত্রার কারণে। 

বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় মঙ্গলশোভাযাত্রাকে রেখেছে ইউনেস্কো। এক দিন বইমেলাও তাই হবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বইমেলার রূপ পালটেছে। প্রতিবছর লাখ লাখ পাঠক-দর্শকের সমাগম ঘটে এই মেলায়। দিন যতই যাচ্ছে ততই মেলার শ্রী বৃদ্ধি হচ্ছে। বাড়ছে পরিসর, বাড়ছে স্টলের সংখ্যা, বাড়ছে পাঠক-দর্শকের সংখ্যাও। একই সঙ্গে বাড়ছে লেখকের সংখ্যাও।

বইমেলায় এবার আমার বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হচ্ছে। উপন্যাস প্রবন্ধ সংগ্রহ মিলিয়ে ছয়টি। বিদ্যাপ্রকাশ থেকে ‘মহুয়ার ঘ্রাণ’, পাঠক সমাবেশ থেকে প্রবন্ধের বই ‘উপন্যাসের পথে’। এ ছাড়া পাঠক সমাবেশ প্রকাশ করেছে দুই খণ্ডে ‘উপন্যাস সংগ্রহ’ এবং এক খণ্ডে ‘গল্প সংগ্রহ’। অন্যপ্রকাশ থেকে আসছে ‘সেরা দশ গল্প।’ অভিযান প্রকাশ করছে সেরা দুটি গল্প নিয়ে একটি বই ‘মাছ ও মানুষ’।

বই মেলায় বই দেখছেন দর্শনার্থীরা

বইমেলাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর প্রকাশিত হয় ৪-৫ হাজার বই। অনেক তরুণ লেখক উঠে আসছেন যারা সাহিত্য রচনায় নিজেদের নিয়োজিত করেছেন। স্বীকার করি, প্রকাশিত এসব বইয়ের মধ্যে ‘দুর্বল বই’ও থাকে, যে বই পাঠকচিত্তকে নাড়া দিতে পারে না, সাহিত্যের কোনো কাজে আসে না এবং মানুষের মনন গড়ার ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না। ‘দুর্বল বই’ থাকাটা স্বাভাবিক। ধান চাষ করতে গেলে জমিনে শুধু ধান হয় না, আগাছাও হয়। আবার সব যে ধান হবে তা-ও নয়, ধানের সঙ্গে চিটাও হয়। একইভাবে বাগানের সব গাছ একই আকারের হয় না, সব গাছ একই পরিমাণের ফল দেয় না—এটা প্রাকৃতিক নিয়ম। এই নিয়মকে উপেক্ষা করা যায় না। ভালো বই প্রকাশিত হলে ‘দুর্বল বই’ও প্রকাশিত হবে—এটা স্বাভাবিক।

অনেকে আবার এত এত বই প্রকাশে নাখোশ হন, হা-হুতাশ করেন। তাদের হা-হুতাশ দেখলে মনে হয় এত এত বই প্রকাশের কারণে যেন দেশের বিরাট ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে, সাহিত্যের বিরাট ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। আমি তো মনে করি ১৮ কোটি মানুষের দেশে ৪ হাজার বই খুবই কম। অন্তত ২০ হাজার হওয়া উচিত ছিল। আবার কাউকে কাউকে বলতে শোনা যায়, এত এত বই প্রকাশ স্রেফ অপচয়। তাদের কথা শুনলে মনে হয় এই অপচয়ের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। দেশে কত অপচয়ই তো হচ্ছে। জ্ঞানচর্চার জন্য হোক না কিছু অপচয়। অপচয়টা তো বইয়েরই জন্য, খারাপ কোনো কাজের জন্য তো নয়। মানুষ তার কল্যাণের জন্য পৃথিবীতে যত কিছু আবিষ্কার করেছে তার মধ্যে বই একটি। যত বেশি বই প্রকাশিত হবে প্রকাশনা জগত্ তত বেশি সমৃদ্ধ হবে। একটি বইয়ের পেছনে কেবল লেখক থাকে না, থাকে প্রকাশক, কম্পোজিটর, প্রচ্ছদশিল্পী, মুদ্রাকর, বাঁধাই কারিগরসহ নানা পেশার মানুষ। বই প্রকাশের মধ্য দিয়ে তারা উপকৃত হচ্ছে, ঘুরছে অর্থনীতির চাকা।

আমরা চাই বইমেলায় মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসুক। বেশি বেশি মানুষ মেলায় আসার জন্য যা যা করণীয় তা তা করা হোক। মঙ্গলশোভাযাত্রার মতো বইমেলাও স্বীকৃতি পাক বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে। বইমেলা কখনো করপোরেট রূপ না পাক, এই প্রত্যাশা করি।

আমার ধারণা ছিল দেরিতে শুরু হওয়ায় এবারের বইমেলা ঠিক জমবে না। কিন্তু প্রথম দুদিন মানুষের সমাগম দেখে আমার ধারণা পালটে গেছে। বইমেলা ১৭ মার্চ পর্যন্ত হোক, এমন ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তার মানে অনেকটা নিশ্চিত করেই বলা যায় এবারের বইমেলা মাসব্যাপী হবে। মেলা বাস্তবায়ন কমিটির সার্বিক প্রস্তুতি, লেখক-পাঠক প্রকাশকদের উচ্ছ্বাস দেখে মনে হচ্ছে, প্রকৃতি যদি সহায় থাকে, যদি ঝড়-বৃষ্টি না হয়, এবারের বইমেলা হবে স্মরণকালের সবচেয়ে জমজমাট।

ইত্তেফাক/ আরাফাত